May 3, 2024
আন্তর্জাতিক

সেনাশাসকদের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে বক্তব্য, মিয়ানমারের দূত বহিষ্কার

জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের বিশেষ দূত কিয়াউ মোয়ে তানকে বহিষ্কার করেছে দেশটির সামরিক সরকার। মিয়ানমারের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে সাহসী বক্তব্য রেখেছিলেন তিনি। ওই বক্তব্যের একদিন পরই তার বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেয়া হলো।

সংস্থাটির এক অধিবেশনে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। সাহসী এই দূত জাতিসংঘের কাছে আহ্বান জানান যে, তার দেশে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সংস্থাটি যেন প্রয়োজনীয় যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে। স্বদেশের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একজন রাষ্ট্রদূতের এমন অবস্থানকে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেন বিশ্লেষকরা।

তিনি সামরিক সরকারকে উৎখাতের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এক আবেগঘন বক্তব্যে তিনি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত কোনো দেশেরই মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত নয় বলে উল্লেখ করেন।

চলতি মাসের ১ তারিখে মিয়ানমারে বেসামরিক সরকারকে সরিয়ে দিয়ে দেশটির ক্ষমতা গ্রহণ করে সামরিক বাহিনী। তারপর থেকেই সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে দেশটির বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

আকস্মিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করায় শুরু থেকেই দেশটির সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা করে আসছে। সীমিত পরিসরে অনেক দেশ মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে।

গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত দেশটির সাধারণ নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ এনেই মূলত বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ছিল।

গত নির্বাচনে অং সান সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) জয় লাভ করায় নতুন সরকার গঠনের কথা ছিল। কিন্তু সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে তা বাতিল হয়ে যায়।

শুক্রবার সু চির সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘে মিয়ানমারে বিশেষ দূত কিয়াউ মোয়ে তান সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসী বক্তব্য রাখেন। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যে কোনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দেশের জনগণের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সামরিক অভ্যুত্থানের অবসান, নিরীহ মানুষের উপর অত্যাচার বন্ধ, জনগণের কাছে রাষ্ট্রের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আমাদের আরও কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন।’ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তার এমন বক্তব্য বেশ প্রশংসিত হয়।

মিয়ানমারের বিষয়ে একটি বিশেষ বৈঠকের সময় ওই রাষ্ট্রদূত সব সদস্য রাষ্ট্রকে দেশটির সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখার আহ্বান জানান।

সামরিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিক্ষোভ চলছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ থেকে নতুন করে আরও ডজনখানেক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে শনিবার সকালে বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে আরও এক নারী নিহত হয়েছেন।

বিক্ষোভ প্রতিহত করতে শনিবার নজিরবিহীন পদক্ষেপ নেয় মিয়ানমারের পুলিশ। গত তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রথমবার পুলিশ সবচেয়ে বেশি সহিংস হয়ে ওঠে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *