November 26, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

সেই লঞ্চ চালকের লাইসেন্স নেই

বেশি যাত্রীর আশায় এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে বেশি ক্ষমতার ইঞ্জিন লাগানো হয়েছিল। ওই লঞ্চের চালকের লাইসেন্স ছিল না। এমভি অভিযান-১০ এর মালিক মো. হামজালাল শেখ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তা স্বীকার করেছেন।

সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ‘লঞ্চে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যে কথোপকথন হয়েছে, তাতে তিনি (হামজালাল) ধারণা করছেন, আগুন লাগার পর জ্বলন্ত ও চলন্ত লঞ্চ রেখে ক্রুরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ক্রুদের মধ্যে কেউ নিখোঁজ হয়েছেন বা মারা গেছেন বলে তাদের পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পাননি হামজালাল শেখ।’

হামজালাল শেখের বরাত দিয়ে র‌্যাবের মুখপাত্র জানান, লঞ্চটিতে গত নভেম্বরে বেশি ক্ষমতার ইঞ্জিন লাগানো হয়, যাতে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। বিলম্বে ছেড়ে গন্তব্যে আগে পৌঁছানো গেলে লঞ্চে যাত্রী বেশি পাওয়া যায়। এ কারণে লঞ্চে ৬৮০ হর্স পাওয়ারের ইঞ্জিন পরিবর্তন করে ৭২০ হর্স পাওয়ারের ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়েছিল। একজন সাধারণ মিস্ত্রিকে দিয়ে ইঞ্জিন পরিবর্তন করা হয়েছে। আগের ইঞ্জিনটি চীনের তৈরি ছিল। পরে জাপানি রিকন্ডিশনড ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়েছে। জাহাজের ইঞ্জিন পরিবর্তন এবং পরিবর্তন পরবর্তী কার্যক্রম বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। ট্রায়াল রানও হয়নি। এমভি অভিযান-১০ এর তিনজন কর্মচারীর (মাস্টার ও ড্রাইভার) লাইসেন্সও নেই।

লঞ্চে আগুন লাগার ১০ মিনিটের মধ্যে সুপারভাইজার আনোয়ার মোবাইল ফোনে হামজালালকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন। কিন্তু তিনি ফায়ার সার্ভিস বা জরুরি সেবার নম্বরে ফোন করেননি। হামজালাল যাত্রার সময় কমানোর ব্যাপারে ঘটনার দিন দুপুর পর্যন্ত লঞ্চের মাস্টার ও স্টাফদের নির্দেশনা দেন। লঞ্চে যাত্রীদের জন্য লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা ছিল না। শুধু কর্মচারীদের জন্য ২২টি লাইফ জ্যাকেট ছিল। যাত্রীদের জন্য ১২৭টি বয়া ছিল বলে দাবি করেছেন লঞ্চের মালিক। তবে, অগ্নিকাণ্ডের সময় অধিকাংশ বয়া যথাস্থানে ছিল না। এছাড়া, লঞ্চটির ইন্সুরেন্স ছিল না।

হামজালাল শেখ ১৯৮৮ সাল থেকে জাপানে ছিলেন। তিনি ২০০০ সালে জাপান থেকে দেশে এসে একটি লঞ্চ কেনেন। বর্তমানে তার তিনটি লঞ্চ আছে। এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি চারজনের মালিকানাধীন হলেও তিনিই সবকিছুর ব্যবস্থাপনা করতেন।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-৮ ও ১০ এর যৌথ অভিযানে সোমবার সকালে কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে হামজালাল শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত ২৪ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ৩টায় ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী এমডি অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিন রুমে আগুন লাগে। পরে তা পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে। এতে অন্তত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ও নিখোঁজ হয়েছেন শতাধিক মানুষ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *