April 25, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

সুন্দরবনে আগুনে পুড়েছে ৩ একর বনভূমি

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
অবশেষে প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি এলাকার আগুন নিভেছে। ফায়ার সার্ভিস, বনবিভাগ, সিপিজি সদস্য ও স্থানীয়দের সম্মিলিত চেষ্টা এবং বৃষ্টির পানিতে ওই এলাকার আগুন সম্পূর্ণ নিভেছে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টায় আগুন নেভানো অভিযান সমাপ্ত করেছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।
এর আগে সোমবার দুপুরের দিকে সুন্দরবনের দাসের ভারানি এলাকায় আগুন লাগে। ৩০ ঘণ্টা ধরে জ্বলতে থাকা আগুনে বনের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো জানাতে পারেনি বনবিভাগ। তবে ফায়ার সার্ভিস বলছে, আগুনে অন্তত তিন একর বনভূমি পুড়ে গেছে।
যদিও পুড়ে যাওয়া বনভূমির পরিমাণ আরও বেশি বলে দাবি করেছে স্থানীয়রা। এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্চের ধানসাগর স্টেশনের টহল ফাঁড়ি এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে তিন শতাংশ বনভূমি পুড়ে যায়। এ নিয়ে গেল ২০ বছরে সুন্দরবনে ২৫ বার অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। সুন্দরবনে একের পর এক আগুন লাগার ঘটনায় ক্ষোভ ও হাতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানীরা।
স্থানীয় কাইয়ুম, ফজলু, সাকিবুল ইসলামসহ কয়েকজন বলেন, সোমবার আগুনের ধোঁয়া দেখেই আমরা বনবিভাগকে খবর দেই। পরে বনবিভাগের কর্মকর্তারা এলে তাদের সঙ্গে আমরা বনের মধ্যে ঢুকি। লোকালয় থেকে অনেক দূরে গহীন বনে আগুন লাগায় ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে আমাদের দেরি হয়েছে। বনরক্ষী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে আমরাও আগুনের চারপাশে ফায়ার বেজ কাটার কাজ করেছি। দু’দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ সুন্দরবনের আগুন নেভাতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু এসময়ে সুন্দরবনের অন্তত পাঁচ একর বনভূমি পুড়ে গেছে।
বনবিভাগের সহয়তাকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কমিউনিটি পেট্রোলিং গ্রুপের (সিপিজি) সদস্য মো. ফিরোজ ও সগির হোসেন বলেন, আগুনের খবর পেয়ে আমরা বনবিভাগের সঙ্গে এসে গাছের ডাল কেটে, ফায়ার সার্ভিসের মালপত্র বহন করে এবং ফায়ার বেজ কেটে আগুন নেভাতে সহযোগিতা করেছি।
বন সংলগ্ন রসুলপুর গ্রামের মো. আফজাল হাওলাদার বলেন, সুন্দরবন আমাদের মায়ের মত। সুন্দরবন আমাদের আগলে রাখে। সুন্দরবনের ওপর নির্ভর করে আমরা বেঁচে থাকি। কিন্তু সুন্দরবনে একের পর এক যে অগ্নিকাণ্ড ঘটছে, তা আমাদের দারুণভাবে ব্যথিত করছে। এসব আগুনে সুন্দরবনের গাছ পুড়ে ছাই হয় না, সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রাণীও হুমকিতে পড়ে। বারবার সুন্দরবনে আগুন লাগলেও আগুন লাগার কারণও সাধারণ মানুষকে জানানো হয় না। সুন্দরবন রক্ষায় আগুনের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার দাবি জানান তারা।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বাগেরহাটের উপ-সহকারী পরিচালক মো. গোলাম সরোয়ার বলেন, সবার প্রচেষ্টায় দাসের ভারানি এলাকায় দৃশ্যমান সব আগুন আমরা নেভাতে সক্ষম হয়েছি। এখন আর কোথাও আগুন নেই। তবে ওই জায়গাটিতে শুকনো পাতার অনেক পুরু স্তূপ রয়েছে। যার ফলে কোথাও সুপ্ত আগন থাকতে পারে। যেহেতু দৃশ্যমান কোনো আগুন নেই, তাই আমরা অভিযান সমাপ্ত করেছি। এরপরেও কোথাও যদি আগুন দেখা যায়, সেক্ষেত্রে বনবিভাগ আমাদের জানালে, আমরা আগামীকাল আবার পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করব।
ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে গোলাম সরোয়ার আরও বলেন, আগুনে দাসের ভারানি এলাকার অন্তত তিন একর বনভূমি পুড়ে গেছে। ছোট গাছ, লতাপাতাসহ বেশকিছু বড় গাছ পুড়ে গেছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় আমরা আগুন নেভাতে সক্ষম হয়েছি। এরপরেও কোথাও কোনো সুপ্ত আগুন থাকলে, তা নেভানো হবে। প্রয়োজনে আবার ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতা নেওয়া হবে। ঘটনাস্থলে বনরক্ষীদের টহল জোরদার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে যদি এ অগ্নিকাণ্ডকে মানবসৃষ্ট বলা হয়, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *