April 27, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

সিলেটে বড় হচ্ছে বন্যা, আতঙ্কে বানভাসি মানুষ

বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে সিলেটে। নগরীসহ জেলার সবগুলো উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

সময় যত গড়াচ্ছে ততই বাড়ছে বানভাসি মানুষের সংখ্যা। বিভিন্ন সড়ক ডুবে গিয়ে উপজেলা ও জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার এমনকি সরকারি দফতরগুলোতে উঠেছে পানি। বন্যাকবলিত হয়ে পড়া সিলেট নগরীর আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

সুরমার তীরঘেঁষা শাহজালাল উপশহর, সোবহানীঘাট, ছড়ারপাড়, কালিঘাট, তালতলা, কাজিরবাজার, শেখঘাট, ঘাসিটুলা, লালাদিঘির পাড় এলাকাসহ মহানগরীর অন্তত ১৫টি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

বন্যার পানিতে শত শত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসা-বাড়ির জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হয়েছে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে সবখানে। বুধবার (১৮ মে) নগরের বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের জন্য নগরে ১৬টিসহ ২৭৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন লোকজন। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সিলেট জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, জেলায় ২৭৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এরমধ্যে ৭৮টিতে মানুষ অবস্থান করছেন। এছাড়া বন্যার্তদের জন্য এ যাবত ১৪৯ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরসঙ্গে ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবারও বরাদ্দ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০০৪ সালে নগরীর অনেক এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল। এরপর প্রতি বর্ষায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও এবারের মতো বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানায়, সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, লোভাসহ সিলেটের সবগুলো নদ-নদীর পানি বাড়ছে। নদ নদীর বিভিন্ন স্থানে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

উজানের ভারী বৃষ্টির পাশাপাশি ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, সিলেট সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। জেলার বাকি উপজেলাগুলোরও নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সুরমা-কুশিয়ারা, লোভা, সারি ও দলাই নদীর পানি ৫টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার দুপুর ১২টার প্রতিবেদন অনুযায়ী কানাইঘাটে সুরমার পানি বিপৎসীমার ১৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছিল ১৩৬ সেন্টিমিটারে। সিলেটে সুরমার পানি বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যায় ছিল ৪১ সেন্টিমিটারে। উৎসমুখ আমলশীদে কুশিয়ার নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ১৬৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যায় ছিল ১৪৮ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহমান। সিলেটের বিয়ানীবাজার শেওলা পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি ৫৩ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যায় ছিল ৫১ সেন্টিমিটারে, লোভা ছড়ায় পানির গতি প্রবাহ ১৪.৪৭ সেন্টিমিটারে। আজ তা বেড়ে ১৫ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহমান।

শাহজালাল মেন্দিবাগ এলাকার রাজু আহমদ বলেন, পরিবার নিয়ে তিনি টিনশেড একটি বাসায় থাকতেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাসার ভেতর হাঁটু পানি হয়ে যায়। ফলে স্ত্রী সন্তান নিয়ে দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আর আসবাবপত্র সব ভিজে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কিছুই সরিয়ে আনতে পারেননি।

ছড়ারপাড় এলাকার বাসিন্দা লাকি মিয়া বলেন, সোমবার রাত থেকেই পানিবন্দী ছিলাম। মঙ্গলবার রাতে পানি আরও বেড়ে যাওয়ার আতঙ্কে বাসা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে, নগরের কালিঘাটে অনেক দোকানের চালসহ বিভিন্ন মালামাল ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকে ট্রাক দিয়ে মালামাল সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, নগরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। নগরের ২৭টি ওয়ার্ডের অর্ধেকের বেশি এলাকায় পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। রাস্তাঘাত ডুবে গিয়ে যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে। মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিচ্ছেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৩ জুন পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। তবে বৃষ্টির পরিমান কিছুটা কমতে পারে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *