সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলা মামলায় ১০ আসামির মৃত্যুদণ্ড, ২ জন খালাস
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
প্রায় দুই দশক আগে ঢাকার পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনায় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বিচার শেষে হরকাতুল জিহাদের (হুজি) ১০ জঙ্গির ফাঁসির রায় এসেছে। ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম গতকাল সোমবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। মামলার জীবিত ১২ আসামির মধ্যে দুইজনকে খালাস দেন তিনি। ২০০১ সালে যে দিনটিতে বোমা হামলা চালিয়ে পাঁচজনকে হত্যা করা হয়েছিল, ১৯ বছর পর সেই একই তারিখে রায় দিল আদালত।
সিপিবিকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করতে জঙ্গিরা ওই হামলা চালিয়েছিল পর্যবেক্ষণ দিয়ে বিচারক তার রায়ে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার জন্য হরকাতুল জিহাদের এই জঙ্গিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিৎ বলে এই আদালত মনে করে।
হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানও ছিলেন এ মামলায় অভিযুক্ত আসামি। অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এ মামলার অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দশ আসামির মধ্যে মুফতি মঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ রায়ের সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। আর জাহাঙ্গীর আলম বদর, মহিবুল মুত্তাকিন, আমিনুল মুরসালিন, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান ও নুর ইসলাম পলাতক।
এই দশ আসামিকে সর্বোচ্চ সাজার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে রায়ে। এছাড়া পলাতক দুই আসামি মো. মশিউর রহমান ও রফিকুল আলম মিরাজকে খালাস দিয়েছেন বিচারক। রায় ঘোষণার সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত চার আসামিকে নিবির্কার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। মৃত্যুদÐের রায় শুনে তাদের মধ্যে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া চোখে পড়েনি। কোন কথাও তারা বলেননি।
রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সালাহউদ্দিন হাওলাদার রায়ের পর সাংবাদিকদের বলেন, এই মামলা হিমাগার থেকে আমরা টেনে নিয়ে এসেছি। ছয়বার তদন্ত কর্মকর্তা বদলির পর সপ্তম তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্র দেন। ওই হামলায় আহত বেশ কয়জন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) তেমন বড় কোনো দল নয়। তাদের তেমন কোনো কর্মীও নেই, দুর্বল পার্টি। তাদের সমাবেশে ছিল কিছু পুরনো, নষ্ট সাউন্ড সিস্টেম। নিজেরা আলোচনায় আসতেই নষ্ট ও পুরনো সাউন্ড সিস্টেম বিস্ফোরণের ওই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আমাদের পক্ষ থেকে আদালতকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু আসামিদের একজন ভারতে আটক হওয়ায় এবং দেশটির একটি সংবাদপত্রে ওই আসামিকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় আদালত তা আমলে নিয়ে এই রায় দিয়েছেন।
আসামিপক্ষের এই কৌঁসুলি বলেন, যেহেতু এটি একটি সেনসেটিভ ইস্যু, একটি সংগঠনের বিষয়, তাই বিশেষ কাউকে খুশি করার জন্যই এই রায় দেওয়া হয়েছে বলে আমরা মনে করছি।
রায়ের পর আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত এ মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও অভিযোগপত্র দাখিলকারী সিআইডির পরিদর্শক মৃণাল কান্তি সাহা সাংবাদিকদের বলেন, রায়ে আমি সন্তুষ্ট। হিন্দু পত্রিকায় হরকতুল জিহাদের দুই সদস্যের দায় স্বীকার করে দেওয়া বক্তব্যের সূত্র ধরেই এ মামলায় অধিকতর তদন্ত শুরু করি। শেষ পর্যন্ত জড়িত আসামিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো ও শাস্তি নিশ্চিত করতে পেরে আমরা সন্তুষ্ট। এ রায়ের জন্য সোমবার সকাল থেকেই আদালতপাড়ায় নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তা। সবাইকে তল্লাশি করে তারপর আদালতে ঢুকতে দেওয়া হয়।