সিজারের পর পেট থেকে গজ উদ্ধার, রোগীর মৃত্যু
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
চট্টগ্রাম নগরের মেরিন সিটি মেডিকেল হাসপাতালে প্রথম অস্ত্রোপচারের ১৫ দিন পর পুনরায় অস্ত্রোপচার করে এক রোগীর পেট থেকে গজ উদ্ধারের অভিযোগ উঠেছে। তবে ভুক্তভোগী উম্মে হাবিবাকে বাঁচানো যায়নি।
১৪ জুন বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র সিএসসিআরে সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. খন্দকার একে আজাদ অস্ত্রোপচার করে উম্মে হাবিবার পেট থেকে গজ উদ্ধার করেন বলে তার স্বামী মুক্তার হোসেন খোকন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন।
এর আগে মেরিন সিটি মেডিকেল হাসপাতালে উম্মে হাবিবাকে অস্ত্রোপচারকারী ডা. জাকিয়া সুলতানা পেটে গজ থাকার বিষয়টি ধরতে পারেননি। উম্মে হাবিবা ফটিকছড়ি মাইজভান্ডার এলাকার মুক্তার হোসেন খোকনের স্ত্রী। চার বছর আগে তাদের দাম্পত্য জীবন শুরু হয়।
মুক্তার হোসেন খোকন বলেন, প্রসব বেদনা উঠলে ৩১ মে বিকেলে আমার স্ত্রী উম্মে হাবিবাকে বায়েজিদ বোস্তামী এলাকার মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। ওইদিন বিকেলে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় উম্মে হাবিবা। হাবিবার অস্ত্রোপচার করেন হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. জাকিয়া সুলতানা। তিনদিন রাখার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিলে তাকে বাড়িতে নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, বাড়িতে নেয়ার পর উম্মে হাবিবার প্রচণ্ড পেট ব্যথা শুরু হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ৮ জুন পুনরায় তাকে মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক জাকিয়া সুলতানা আমার স্ত্রীকে দেখে ওষুধ দেন। তবুও ব্যথা না সারলে আন্দরকিলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকরা আল্ট্রাসনোগ্রাফি করিয়ে পেটে পানি জমার কথা জানান।
মুক্তার হোসেন খোকন আরও বলেন, এরপর সিএসসিআরে ডা. খন্দকার একে আজাদ উম্মে হাবিবাকে দেখে সিটি স্ক্যান করাতে বলেন। সিটি স্ক্যান রিপোর্টে দেখা যায়, অস্ত্রোপচার সময় ব্যবহৃত গজ হাবিবার পেটে থেকে গেছে।
‘এরপর ১৪ জুন ডা. খন্দকার আজাদ ও ডা. নুরুল আমিন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে অস্ত্রোপচার করিয়ে উম্মে হাবিবার পেট থেকে গজ বের করেন। তবে অস্ত্রোপচারের পর হাবিবার শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। এক পর্যায়ে তাকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) রাখা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি। ওইদিন ভোর রাতে আমার স্ত্রীকে মৃত ঘোষণা করে চিকিৎসকরা।’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. খন্দকার একে আজাদ বলেন, সিটি স্ক্যান রিপোর্টে ওই রোগীর পেটে অস্ত্রোপচারের সময় ব্যবহৃত একটি বস্তুর অস্তিত পাওয়া যায়। পরে সেটি পুনরায় অস্ত্রোপচার করে বের করা হয়।
সিএসসিআরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ডা. সালাহউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বিষয়টি আমরা জেনেছি। তবে ওই রোগীর ফাইলটি এখনো স্বজনদের দেওয়া হয়নি। বিস্তারিত আলোচনা শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে জানতে ডা. জাকিয়া সুলতানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এ ছাড়া মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মনিরুজ্জামানকে একাধিক ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বিষয়টি অবগত করা হলে চট্টগ্রামে সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।