April 27, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্ট

সাতক্ষীরায় চায়না কমলা লেবু চাষে বেলালের সাফল্য

শেখ কামরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা
ইউটিউভ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে কমলা লেবুর চারা উৎপাদন করে সাতক্ষীরায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুখরালী গ্রামের মোঃ ইনতাজ সরদারের পুত্র বেলাল হোসেন নামে এক নার্সারি ব্যবসায়ী। তার বাগানে চারা লেবুগাছে হালকা হলুদ ও গাঢ় হলুদ রঙের হাজারো কমলা সবুজ পাতার মধ্যে দোল খাচ্ছে। গাছে ঝুলে থাকা দৃষ্টিনন্দন এই কমলা সকলের নজর কাড়ছে। প্রতিদিন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তার নার্সারিতে সৌখিন চাষীরা চারা নিতে আসেন। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে তার বাগানের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। তার এই নার্সারীতে এখন প্রতিদিন গড়ে ১৪-১৫ জন শ্রমিকের রুটি রুজির কর্মসংস্থান। প্রায় অর্ধশতাধিক প্রজাতির ফল ও ফুলের চারা আছে তার বাগানে। বিশেষ করে কাশ্মীরের আপেল কুল, মালটা, ড্রাগন, বারোমাসি আম ও চায়না কমলা লেবু। তার দেখা দেখিতে জেলায় অনেকেই নার্সারি পেশায় ঝুঁকে পড়েছে। নার্সারী করে স্বাবলম্বী হচ্ছে হাজারো মানুষ। প্রতিবছর কয়েক লক্ষ গাছের চারা এ জেলা থেকে সরবরাহ করা হয়। এ জেলায় উৎপাদিত নার্সারীর কদর সারাদেশে। বর্তমানে জেলায় ২০৪ জন পেশাদার নার্সারি প্রেমিক সারা বছরই ফলদ, বনজ, ভেষজ, ফুল ও শোভাবর্ধনকারী গাছের চারা উৎপাদন করে থাকে।
দেশের সমতল ভূমির মধ্যে সাতক্ষীরায় কমলা চাষের সুসংবাদ দিচ্ছে চাষিরা। এখানকার কমলা খেতেও বেশ সুস্বাদু। বাজারের কিনতে পাওয়া লেবু থেকে আকার ও স্বাদ অপেক্ষকৃত ভালো। ইতিমধ্যে জেলার নার্সারি পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি অধিদপ্তর সহ প্রশাসনের নানা পর্যায়ের উধ্বর্তন কর্মকর্তারা। ইতিমধ্যে সম্ভাবনাময় এ ফলের চাষ সারাদেশে কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে বাংলাদেশ কৃষি অধিদপ্তর।
বেলাল হোসেনের বাগানটির অবস্থান সাতক্ষীরা শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে টিবি হাসপাতাল সংলগ্ন এল্লারচর সড়কের বাটকেখালি গ্রামে। তার চায়না লেবুর বাগান এখন এলাকার শিক্ষিত বেকার উদ্যোক্তাদের জন্য একটি অনুকরণীয় কৃষি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বেলাল হোসেন লেবুর চারা উৎপাদন করে নিজেকে স্বাবলম্বী হিসাবে গড়ে তুলেছেন। দারিদ্র্যের সাথে হার মেনে ২০০০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করতে না পেয়ে বাপ দাদার নার্সারী পেশায় বেলাল ঝুকে পড়ে। আজ থেকে ২০ বছর আগে অনেকটাই শখের বসে একটি ছোট্ট অনাবাদি জমিতে একটি নার্সারী শুরু করে। কিন্তু প্রাচীন পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করে নার্সারীতে সে ভাল সফলতা পাচ্ছিল না। অনেটা হতাশায় কাটে তার কয়েক বছর। এত তার ক্ষতিও হয়। বন্ধুদের দেখা দেখিতে একদিনে একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন কিনে। মোবাইলে ইউটিউভ দেখার সুযোগে সে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাসারী দেখতে থাকে। বিশেষ করে কমলা লেবু চাষে তার আগ্রহ জাগে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে প্রথমে কয়েকটি লেবুর চারা আনেন। এতে তার ভাল সফলতা আসে। পরে বিশ্বের আরো কয়েকটি দেশ থেকে হাউব্রিড জাতের কমলা লেবুর চারা কিনে আনে। এভাবে তার বাগানে বৃদ্ধি পেতে থাকে কমলা লেবুসহ হরেক রকমের চারা। সরকারি কোন সহযোগিতা ছাড়াই তিলে তিলে গড়ে তোলেন স্বপ্নের এই বাণিজ্যিক সাকিব হাইব্রিড নার্সারী।
সরেজমিনে বেলাল হোসেনের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, দার্জিলিং জাতের কমলার গাছে দৃষ্টিনন্দন শত শত ফল ধরে আছে। হাত বাড়ালেই তা ধরা যাচ্ছে। হালকা হলুদ ও গাঢ় হলুদ রঙের কমলা সবুজ পাতার মধ্যে ঝুলে থাকায় তা ছবির মতো দেখা যাচ্ছে। সব থেকে বেশি ধরেছে চায়না কমলার গাছে। গাছে ধারণ ক্ষমতার বেশি কমলা ঝুলে থাকায় তা ধরে রাখতে বাঁশের ঠেকনা দেওয়া হয়েছে। বাগানে আসা দর্শনার্থীরা এদেশের মানুষ আগে কখনোই দেখিনি বলেই অভিব্যক্তি প্রকাশ করছেন। দর্শনার্থীরা চলে যাওয়ার সময় কয়েকটি করে চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
আবহাওয়াসহ বিভিন্ন প্রতকূলতার কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সাধারণত ব্যাপকভাবে কমলালেবুর ফলন না হলেও সে ধারণা পাল্টে দিয়েছেন সৌখিন কমলা লেবু চাষি বেলাল হোসেন। তার মতে, সৌখিনতার বশে অনেকে জমির পাশাপাশি টবেও কমলা লেবুর গাছ রোপন করছে। সেখানে ফলনও হচ্ছে আশানুরূপ। খেতে যেমনই হোক, নিজ হাতে-নিজ বাড়িতে ফলনকৃত কমলা লেবুর প্রতি আকর্ষণ থাকবে আলাদাই। তিনি জানান, নাসার্রীতে পরামর্শ পেতে চাইলে তার সাথে (০১৯৪২৪৩৫৯৫৬) নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নুরুল ইসলাম জানান, নার্সারী খাতকে এগিয়ে নিতে সরকারের কৃষি বিভাগ, বন বিভাগসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় চাষীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ধরণে উদ্যোগ নিয়েছে। সাতক্ষীরায় নার্সারী মালিকদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে খোঁজ খবর নেয়াসহ বিভিন পরামর্শ দেয়া হয়। বিশেষ করে বেলাল হোসেনের লেবুুর কলম তৈরি জেলাবাসীর জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *