সাংবাদিকদের ওপর রেগে আগুন ম্যারাডোনা
খেলোয়াড়ি জীবনের সমাপ্তি টেনেছেন আরও অনেক আগেই। এখন মন দিয়েছেন কোচিংয়ে। তবে খেলোয়াড় হিসেবে যতটা বিখ্যাত ও জনপ্রিয় ছিলেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা, কোচ হিসেবে যেনো ঠিক ততটাই নিষ্প্রভ তিনি। জাতীয় দল কিংবা ক্লাব- কোনোখানেই সাফল্যের দেখা পাননি তিনি।
দলকে তেমন সাফল্য এনে দিতে না পারলেও, নানান সময়ে উদ্ভট সব কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক খবরের শিরোনাম ঠিকই হয়ে থাকেন ম্যারাডোনা। অবস্থা এখন এমনটাই হয়েছে যে, ম্যারাডোনা কিছু না করলেও সেটি অনেকের কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়। কিংবা কখনও ঠিক কাজটি করলেও মানুষের সন্দেহ হয়, ম্যারাডোনাই করেছেন তো এটি?
যার সবশেষ উদাহরণ মিলল বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর)। প্রায় পাঁচ মাসের বিরতির পর বুধবার প্রথমবারের মতো মাঠে নেমেছিল ম্যারাডোনার দল জিমনেসিয়া। সান লরেঞ্জোতে হওয়া এই ম্যাচের সময় করোনা সতর্কতাস্বরুপ মুখে ফেস শিল্ড পরেই ডাগআউটে এসেছিলেন জিমনেসিয়া কোচ ম্যারাডোনা। মূলত নিজের চিকিৎসকের পরামর্শেই এমনটা করেছিলেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি।
কিন্তু তার এই ফেস শিল্ড পরে ডাগআউটে বসে থাকার ছবি নেতিবাচকভাবে ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ছোট বাচ্চাদের থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়ষ্ক, এমনকি স্থানীয় সাংবাদিকরা পর্যন্ত হাস্যরসের বস্তুতে পরিণত করেন ম্যারাডোনাকে। তার ছবি দিয়ে বানাতে শুরু করেন নানান মিম ও ট্রল পিকচার।
বিশেষ করে ম্যারাডোনার ফেস শিল্ডটি টয় স্টোরি কার্টুন মুভির চরিত্র বাজ লাইটইয়ারের সঙ্গে মিলে যাওয়ায়, এর সঙ্গে মিলিয়েই বানানো হয় নানান ছবি। যা একদমই পছন্দ হয়নি ম্যারাডোনার। এসব কাজ করা মানুষদের ওপর নিজের ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। জানিয়েছেন, করোনাকালে দায়িত্বপালনের সময় মৃত চিকিৎসকদের প্রতি সম্মানে এই ফেস শিল্ড পরেছেন তিনি।
ইন্সটাগ্রামে তিনি লিখেছেন, ‘আমি বাসা থেকে বের হওয়ার সময় এমন মাস্ক পরেই বের হয়েছি, যেমনটা আমার চিকিৎসকরা আমাকে বলেছে। ঠিক একই মাস্ক চিকিৎসকরাও ব্যবহার করে থাকে। আমিও এটা পরেছি তাদের প্রতি সম্মান জানাতে, যারা করোনায় দায়িত্বপালনের সময় প্রাণ হারিয়েছে। অথচ কিছু প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ও সাংবাদিক আমাকে নিয়ে উপহাস করেছে।’
তার পরবর্তী বক্তব্যে স্পষ্ট বোঝা যায়, ক্ষোভটা যে মূলত সাংবাদিকদের ওপর। রীতিমতো সমালোচনার ভাষায় ম্যারাডোনা আরও জানিয়েছেন, ‘এসব সাংবাদিকদের জন্য আসলে কী করা উচিৎ জানি না। আপনি স্বাস্থ্যবিধি না মানলেও এরা সমালোচনা করবে, আবার এখন মানছি বলেও নানান কথা বলছে, আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে।’
ম্যারাডোনা আরও যোগ করেন, ‘অথচ এই সাংবাদিকরাই করোনায় মৃত মানুষদের খবর দেয়ার সময় ভয়ে কেঁপে ওঠে, তাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা যায়। তাদের এটা বোঝা উচিৎ যে, কোনোকিছুর প্রতি সম্মান না দেখিয়ে বা তোয়াক্কা না করে নিজেদের বিক্রি করে দেয়া ঠিক নয়। আপনারা এটি মেনে নিন।’
অথচ ম্যারাডোনার এমন ফেস শিল্ড পরে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টাটি প্রশংসিতই হওয়ার কথা ছিল। কেননা আর্জেন্টিনায় করোনাভাইরাসের প্রকোপ অনেক বেশি। দেশটিতে এখনও পর্যন্ত সাড়ে ৭ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের। এছাড়া মৃতের সংখ্যাও ছাড়িয়েছে ২০ হাজার। সেখানে এ ভাইরাস থেকে বাঁচার পথ অবলম্বন করায় বিদ্রুপের শিকার হতে হয়েছে ম্যারাডোনাকে।