সরকার দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে : গণতন্ত্র মঞ্চ
সরকার দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। তারা বলেন, ক্ষমতাসীন দলের সরকারপ্রধান ‘হাত-পা ভেঙে দেওয়া হবে’ হুঁশিয়ারি দিয়ে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। তারা দেশের মানুষকে ভয় দেখিয়ে বেআইনি বলে ক্র্যাকডাউন করতে চায়।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, সরকার বলেছে কাউকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না। মানে হচ্ছে এরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তাই সরকারকে বিদায় করার বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, আজকে শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশ থেকে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দেশের মানুষকে বাঁচাতে এই সরকারকে আর সুযোগ দেওয়া যায় না। এদের বিদায় করতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। দরকার হলে রক্ত দেব, ৮০ বছর বয়স হয়েছে তারপরও মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত আছি। আমাতে জেলে নেবেন সমস্যা নেই। ব্যাগে করে কাপড় আর ওষুধ নিয়ে এসেছি। যে কয়েকদিন বেঁচে আছি, জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও দেশের মানুষকে বাঁচাতে লড়াই চালিয়ে যাব। পৃথিবীর কোনো স্বৈরশাসক টিকতে পারেনি, এই সরকারও পারবে না।
জেএসডি সভাপতি বলেন, অলি-গলি পাহারা দেওয়ার নামে আওয়ামী লীগ ও সরকার নানা উস্কানি দিচ্ছে, যে উস্কানিতে পা দিলে কিছু একটা ঘটতে পারে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তারা হামলা চালাতে পারে। আপনাদের লজ্জা করে না? বেহায়া-বেশরম…।
এসময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, গতকাল বিএনপির সমাবেশের স্থানকে ঘিরে ডিএমপির সঙ্গে যে ধরনের আলোচনা হয়েছে, তাতে মনে করেছিলাম একটা সমঝোতা হয়েছে। পুলিশ বলেছে-আটকরাও আইনগতভাবে জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু গভীর রাতে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে আটক করা হয়েছে বলে জানলাম। এর চেয়ে নিন্দনীয় ঘটনা আর কিছু হতে পারে না। পুলিশ কর্মকর্তারা মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যে ভাষায় কথা বলেছেন, সেটা এক ধরনের বেয়াদবি।
এক প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হচ্ছে, বৈঠকে কি ধরনের সিদ্ধান্ত আসে সেটার অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কথা বলে আমরা যুগপৎভাবে আন্দোলনে নামব। এই আন্দোলন থামবে না। মোট কথা বিএনপি কি করবে অপেক্ষা করতে হবে বলেই এই মুহূর্তে কিছু বলতে পাচ্ছি না।
‘মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার কিংবা আটক করা হয়নি, সমাবেশ কোথায় হবে তা নিয়ে আলোচনা করা জন্য নেওয়া হয়েছে’—ডিবির স্পেশাল ব্রাঞ্চের দেওয়া এ বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, যদি এই ধরনের ঘটনা হয়ে থাকে তাহলে এর চেয়ে বাজে কথা ও মিথ্যাচার আর কিছু হতে পারে না। কেননা বিএনপির ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশকে বন্ধ করতে সরকার প্রথম থেকে ভূমিকা নিয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের কথা পরিষ্কার—সরকার দেশের মানুষকে ভয় দেখিয়ে, সভা-সমাবেশকে বেআইনি বলে ক্র্যাকডাউন করতে চায়। তারা সত্যি সত্যি দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু জনগণ তাদের অধিকার আদায়ে লড়াই করবেই। সামনে কর্মসূচি আসবে। আমরা যুগপৎভাবে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে এই সরকারের পতন নিশ্চিত করব।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকার সংলাপের পথ বাদ দিয়ে নানা নাটক সাজিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দিয়েছে। স্পষ্ট কথা, সংলাপের পথে না হাঁটলে আরেকটা গণজোয়ার সৃষ্টি করে এই সরকারকে বিদায় করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ভাষানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাউয়ূম ও গণ অধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খানসহ আরও অনেকে।