April 27, 2024
জাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

সম্রাটের জামিন বাতিল, আত্মসমর্পণের নির্দেশ

ক্যাসিনোকাণ্ডের পর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের জামিন বাতিল করে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাকে সাতদিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১৮ মে) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ সম্রাটের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সামাজী। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

এর আগে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় জামিন পেয়েছিলেন সম্রাট। ১১ মে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান তিন শর্তে ৯ জুন পর্যন্ত সম্রাটের জামিন মঞ্জুর করেছিলেন, যা বাতিল করলেন হাইকোর্ট।

এ সময় হাইকোর্ট বিচারিক আদালতে সম্রাটকে জামিন দেওয়া বিচারকের বিষয়ে বলেন, মেডিকেল রিপোর্ট চাইলেন সেটা না দেখেই জামিন দেওয়া তো ‌‘ঘোড়ার আগে গাড়ি চলার মতো বিষয় হয়ে গেল।’ এসময় ওই বিচারককে সতর্কও করেন আদালত।

আদেশের পর অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান বলেন, মেডিকেল রিপোর্ট আসার আগেই স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে সম্রাটের জামিন দেওয়ায় তা বাতিল করেছেন আদালত।

বিচারকের বিষয়ে হাইকোর্টের মন্তব্য কি ছিল জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী বলেন, আদালত বলেছেন, মেডিকেল রিপোর্ট না দেখেই মেডিকেল গ্রাউন্ডে জামিন দিয়ে বিচারক যেন ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দিয়েছেন। আদালত বিচারককে সতর্ক করে বলেন, ভবিষ্যতে তিনি যেন এ ধরনের কাজ না করেন।

দুদকের করা মামলায় জামিন পাওয়ার আগে সম্রাট তার বিরুদ্ধে থাকা আরও তিনটি মামলায় জামিন পান। চার মামলার সবগুলোতেই জামিন পাওয়ায় ১১ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএসএমইউ) প্রিজন সেল থেকে কারামুক্ত হন সম্রাট। তিনি এখনো এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

রমনা থানায় দায়ের করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় গত ১১ এপ্রিল জামিন পান সম্রাট। ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত এ জামিন মঞ্জুর করেন। আগের দিন ১০ এপ্রিল অর্থপাচার ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় ঢাকার পৃথক দুটি আদালত থেকে সম্রাট জামিন পান।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সম্রাট ও তার সহযোগী তৎকালীন যুবলীগ নেতা এনামুল হক ওরফে আরমানকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। তখন র‍্যাব জানায়, গ্রেফতারের সময় সম্রাট ও আরমান মদ্যপ ছিলেন। তাদের কাছে বিদেশি মদ ছিল। এ কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন।

গ্রেফতারের পর সম্রাট ও আরমানকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আনা হয়। ঢাকায় আনার পর সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে তার কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালায় র‍্যাব। সম্রাটের কার্যালয়ে বন্য প্রাণীর চামড়া, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র পাওয়ার কথা জানানো হয়। বন্য প্রাণীর চামড়া রাখায় ভ্রাম্যমাণ আদালত সম্রাটকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন।

পরে সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে রমনা থানায় মামলা হয়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সম্রাটের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং (অর্থপাচার) আইনে মামলা করে। আর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক।

২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলায় তার বিরুদ্ধে ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।

মামলাটি তদন্ত করে ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। অভিযোগপত্রে সম্রাটের বিরুদ্ধে ২২২ কোটি ৮৮ লাখ ৬২ হাজার ৪৯৩ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। এই মামলায় আগামী ৯ জুন অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির তারিখ ধার্য রয়েছে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *