May 3, 2024
লেটেস্টসম্পাদকীয়

সভ্যতা না অসভ্যতা?  

ইতিহাসের পাঠ থেকে বিভিন্ন সভ্যতার কথা জানা যায়। যেমন: মিশরীয় সভ্যতা, সুমেরীয় সভ্যতা, ব্যবলনীয় সভ্যতা, আশেরীয় সভ্যতা, সিন্ধু সভ্যতা, পারস্য সভ্যতা, চীনা সভ্যতা, হিব্রু সভ্যতা, ইজিয়ান সভ্যতা, গ্রীক সভ্যতা, হেলেনিস্টিক সভ্যতা ও রোমান সভ্যতা। এসব সভ্যতার সৃষ্টি যেমন ছিল একদিকে, তেমনি অন্যদিকে, কালের আবর্তে তার ধবংসও অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। প্রাগৈতিহাসিক কাল হতে, এক একটা সময় এক একটা সভ্যতার জন্ম হয়েছে, আবার, ‘ইন কোর্স অব টাইম’ সে সভ্যতা ধবংসও হয়েছে। উল্লেখ্য, অধিকাংশ সভ্যতাকে গড়ে উঠতে দেখা গেছে, নদীর কুলবর্তী অঞ্চলে। তীর ঘেষে। তবে এর মধ্যে ব্যতিক্রম ইজিয়ান সভ্যতা; এটি গড়ে উঠেছে সাগরকে কেন্দ্র করে, যার নাম ইজিয়ান সাগর। সভ্যতার সৃষ্টি ও বিনাশের ইতিহাস থেকে আমরা আর একটি সত্য জানতে পারি, তাহলো, যে কোনো কিছুর শুরু থাকলে তার বিনাশ বা শেষ আছে। কোন্ সভ্যতা কতবছর টিকে থাকবে সেটা নির্ভর করবে সেই সভ্যতার ধারকবাহকদের আচারআচরণ ও কর্মের উপর।

পৃথিবীর বুকে যে সব সভ্যতা ধবংস হয়েছে, তার একটা বড় কারণ মানুষ; তাদের কর্ম। মানুষের হাতেই সৃষ্টি হয়েছে সবকিছু, এটা যেমন সত্য, তেমনি, সবকিছু তার হাতেই ধবংসপ্রাপ্ত হয়েছে। দেখা যায় মানুষই এক পর্যায়ে, ধীরে ধীরে সভ্য অবস্থা হতে অসভ্যতার দিকে চলে গেছে। হয় তারা হিংসা হানাহানি ও স্বেচ্ছাচারিতায় লিপ্ত হয়েছে, তার পরিণতিতে, অন্যের আক্রমণের শিকার হয়েছে ও শেষ হয়েছে; না হয়, তারা শেষ হয়েছে নিজেদের অতিরিক্ত ভোগ-বিলাসিতার কারণে। সম্পদের আধিক্যহেতু গড্ডালিকা প্রবাহে তারা গা ভাসিয়ে দিয়েছে, পরিণামে, দেখতে হয়েছে ধংসের মুখ। তাহলে যেটা দাড়াচ্ছে তাহলো, এটা একটা কমন প্রপঞ্চ যে, সৃষ্টির উপাদান যেমন সৃজনশীলতা, পরিশ্রম, শৃঙ্খলা; ধবংসের উপাদান তেমন বিশৃঙ্খলা, বিলাসীতা, হিংসা ও হানাহানি।

প্রশ্ন হলো, বর্তমানে আমরা যে সভ্যতার অংশীদার, বিশ্বজুড়ে যে সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় আমাদের দিন পার করতে হচ্ছে, সেটাকে কি সভ্যতা বলা যাবে? সভ্যতার মাপকাঠি কি? যে সভ্যতায় একদেশ অন্যদেশের উপর আধিপত্য বিস্তার ও তাকে অধিকার করে পদানত রাখার সুযোগ পেয়ে যেতে পারে; অশুভ অভিপ্রায়ে যে সভ্যতার যুগে মিথ্যা তথ্যের আশ্রয় নেয়া যায়; কোনো দেশকে অধিনস্ত রাখার অভিপ্রায়ে অহেতুক দেশটাকে উত্যক্ত করে, অপরাধী করে তুলে, আক্রমণের অযুহাত তৈরী করে নেয়া যায়; যে সভ্যতায় বলা যায়, আপনি সাথে থাকলে বন্ধু, সাথে না থাকলে শত্রু; যে সভ্যতায়, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে পৃথিবীব্যাপী সবচেয়ে বড় সন্ত্রাস নির্বিঘ্নে সৃষ্টি করে রাখা যায়; যে সভ্যতায়, গণতান্ত্রীক সমাজ ব্যবস্থা আসলে নামে, আদতে সেটি ফাঁপা অন্তস্বারশুন্য – যেখানে এক শতাংশ মানুষ যাবতীয় সুযোগের মালিক বনে যেতে পারেন; যে সভ্যতায়, রাজনীতিবিদেরা জনগণের সেবক হওয়ার বদলে তাদের ভাগ্যের বিধাতা হয়ে যেতে পারেন; যে সভ্যতায়, অস্ত্র বিক্রির নির্লজ্জ্ব উদ্দেশ্যে নিরিহ একটি জাতীর কপালে জুটিয়ে দেওয়া যায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ; সেটা কি? সেটা কি আদৌ কোনো সভ্যতা? নাকি এর নাম চুড়ান্ত অসভ্যতা এবং এর ধংস অত্যাসন্ন?

শেয়ার করুন: