May 19, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

সবাই তাকিয়ে, কোনো অনিয়ম দেখতে চাই না : সিইসি

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে সবার নজর থাকার বিষয়টি তুলে ধরে অনিয়ম কিংবা বিচ্যুতির বিষয়ে কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। এই পর্যন্ত ভোটের পরিবেশে সন্তোষ জানিয়েই তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতে কারও বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ এলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণের নয় দিন আগে বুধবার আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক করে ইসি। সিইসির সভাপতিত্বে এই বৈঠকে নির্বাচন কমিশনাররা ছাড়াও নির্বাচনের কাজে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নূরুল হুদা বলেন, আন্তর্জাতিক মহল থেকে দেশের জনগণ ভোটের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। অবারিত তথ্য প্রযুক্তির যুগে সব সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। ইসির কার্যক্রম গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেখছেন। আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। ভোটে সবাই মহা উৎসবের আমেজে রয়েছে। এর যথাযথ গুরুত্ব অনুধাবন করে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সঠিক দায়িত্ব পালন করতে হবে।

ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ভোটের দুই দিন আগে থেকে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েনের পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি। সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অর্ধ লক্ষ সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা হয়েছে।

ভোটের মাঠে যে কোনো অভিযোগ ‘সঠিকভাবে’ মিটিয়ে ফেলতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেন সিইসি। রিটার্নিং ও প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করার আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি চাই না, কোনো ধরনের অভিযোগ, অনিয়ম, বিচ্যুতি নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত গড়াক। আশা করব মাঠ পর্যায়ে যারা কর্মকর্তারা রয়েছে, তাদের অধীনে যারা রয়েছে, তাদের কোনো অনিয়ম, গাফিলাতি আপনাদের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে মোকাবেলা করবেন।

বিএনপির তাবিথ আউয়ালের উপর হামলার ঘটনা ধরে তিনি বলেন, অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে গেছে, ওসি ও নির্বাহী হাকিমদের চিঠি দিয়েছেন। এটা অব্যাহত থাকবে।

ইসির পর্যন্ত এলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে নূরুল হুদা বলেন, আমরা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত দেখব। কোন অবস্থায় কার কতটুকু বিচ্যুতি দেখব, ছাড়ব না। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম ও কবিতা খানম বৈঠকে ছিলেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বৈঠকে ছিলেন মহাপুলিশ পরিদর্শক, অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, র‌্যাব, আনসার ও ভিডিপি, ডিজিএফআই, এনএসআইয়ের মহাপরিচালক, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক, ঢাকা জেলা প্রশাসক ও ঢাকার পুলিশ সুপার।

ঢাকা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারাও বৈঠকে ছিলেন। সভায় সূচনা বক্তব্যে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরেন ইসি সচিব মো. আলমগীর।

সরকারবিরোধী প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে এলেও পরিবেশ নিয়ে এখনও সন্তুষ্ট ইসি। আলমগীর বলেন, এখন পর্যন্ত আচরণবিধির গুরুতর লঙ্ঘন কিংবা গুরুতর নির্বাচনী অপরাধ সংগঠনের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। নির্বাচনের পরিবেশ-পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে নিজেদের পদক্ষেপ তুলে ধরে সিইসি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্যে আমাদের প্রত্যয়, দৃঢ়তা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতা রয়েছে। ভোট পরিচালনায় আমরাই একমাত্র কর্তৃপক্ষ; যাদের নির্দেশে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছে।

ঢাকা সিটির ভোটকে কেন্দ্র করে জনগণ, প্রার্থীর মধ্যে যে মহোৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। তার গুরুত্ব দিয়ে যার ভোট যাকে দেবেন, তিনি নির্বাচিত হবেন; সেই অবস্থা সৃষ্টির জন্য অনুরোধ জানাবো। দায়িত্ববোধ আপনাদের রয়েছে। ভোটাররা যেন নির্ভয়ে কেন্দ্রে আসতে পারে, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে দায়িত্বশীলদের প্রতি আহŸান জানান সিইসি।

নির্বাচনের সময় বিভিন্ন প্রার্থীর অভিযোগ থাকে যে তার এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন সিইসি নূরুল হুদা। তিনি বলেন, এজেন্টদেরকে বাড়ি থেকে এনে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমরা নিতে পারি না। আপনার নিতে পারেন না; নেওয়ার দরকারও নেই।

সিইসি বলেন, এজেন্ট যাবেন ভোটকেন্দ্রে। যখনই ভোটকেন্দ্রে যাবেন, তখনই আমাদের উপর দায়িত্ব এসে যায়। সে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পরে তাকে যেন কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ  আসে, তখন দেখা হবে। যদি কোনো কোনো এজেন্ট ভোটকেন্দ্রে যেতে চায়, তখন তাকে বাধা দেওয়া হয়- নির্বিঘেœ যাতে যেতে পারে সেগুলো দেখতে হবে, দায়িত্ব রয়েছে।

ইভিএম নিয়ে বিরোধিতার প্রেক্ষাপটে সিইসি বলেন, নির্বাচনে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ। প্রযুক্তির অনেক ধাপ সফলভাবে অর্জন করতে পেরেছি আমরা। এক সময় দেড় কোটি জাল ভোটারও হয়েছিল। এখন বায়েমেট্রিক সিস্টেমে একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারে না।

নূরুল হুদা বলেন, স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র, এনআইডি ও ইভিএম- তিনটির সমন্বয় রয়েছে। এ পদ্ধতিতে জাল ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ইভিএম দেখে গেছেন। যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতও দেখতে আসবেন। সেনা প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেখছেন আজ। সিইসি বলেন, ইভিএমে ভুয়া ভোটার ভোট দিতে পারবে না।

সংস্কার হাতে নিয়ে প্রতিবন্ধকতা থাকেই। তার কিছুটা বুঝতে জানতে দেরি হয়। অভ্যাসগতভাবে বিরোধিতা করা হয়, সমালোচনা হয়। সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারলে, ভুল না থাকলে প্রতিষ্ঠিত হবে। আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি, ইভিএমের পরিচিতি আরও বাড়িয়ে দিলে একদিন নির্বাচন হবে সবখানে, বলেন তিনি।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *