April 18, 2024
জাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

সংশোধিত এডিপি ১৯৭৬৪৩ কোটি, সর্বোচ্চ গুরুত্ব পরিবহন খাতে

সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। মঙ্গলবার (২ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর অনুমোদন দেন। এতে পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ ৪৯ হাজার ২১২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা মোট বরাদ্দের ২৫ শতাংশ।

বৈঠক শেষে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সামনে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী।

তিনি বলেন, আরএডিপির মোট বরাদ্দ হলো দুই লাখ নয় হাজার ২৭১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নের ১১ হাজার ৬২৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এটি বাদ দিলে আমাদের সরকারের সংশোধিত মূল এডিপি হলো এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ বা জিওবি থেকে এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ-অনুদান ৬৩ হাজার কোটি টাকা। আমাদের উপস্থাপিত আরএডিপি এনইসি সভায় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল এডিপিতে বরাদ্দ দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। প্রস্তাবিত সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ধরা হচ্ছে এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ মূল এডিপির তুলনায় প্রস্তাবিত সংশোধিত এডিপির বরাদ্দ কমছে সাত হাজার ৫০১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বা ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

পরিকল্পনা কমিশনের সচিব জানান, সংশোধিত এডিপির জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে মোট দুই লাখ তিন হাজার ৮৬৬ কোটি ৭৫ লাখ প্রাথমিক চাহিদা পায় পরিকল্পনা কমিশন। সবকিছু বিবেচনা করে সংশোধিত এডিপির আকার এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হচ্ছে।

সূত্র বলছে, মূল এডিপি ও সংশোধিত এডিপিতে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র্য হ্রাস বা জনগণের জীবনমাত্রার মান উন্নয়ন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে উত্তরণকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এডিপি/আরএডিপি প্রণয়নের ক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ বৃদ্ধি, মানব সম্পদ উন্নয়ন, খাদ্য ঘাটতি পূরণ, সবার জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিশ্চিত করা, স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করা, নারীর ক্ষমতায়ন, অপরাধ দমন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, স্যানিটেশন ও নিরাপদ পানি সরবরাহ, মানবসম্পদ শিক্ষা ব্যবস্থা (প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও বৃত্তিমূলক), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক কর্মসূচির প্রসার ও উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০টি খাতকে মোট বরাদ্দের ৯৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ দেয়া হয়েছে। বাকি সাতটি খাতকে দেয়া হয়েছে ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে প্রস্তাবিত সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১০টি সেক্টরের মধ্যে পরিবহনকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪৯ হাজার ২১২ কোটি ৮৬ লাখ, যা মোট বরাদ্দের ২৫ শতাংশ। শিক্ষা ও ধর্ম খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৬ হাজার ৪৯১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৪ হাজার ৫৭১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১২ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২১ হাজার ৯৪৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। বিদ্যুৎ খাতকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৮ কোটি ২৮৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা, মোট বরাদ্দের ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৪ হাজার ৯২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, মোট বরাদ্দের ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।

পানিসম্পদ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১১ হাজার ৫৭৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ। কৃষি খাতকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৭ হাজার ৭৩৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ। বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতকে বরাদ্দ ৬ হাজার ৭০৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। শিল্পখাতকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ কোটি ৯ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১ দশমিক ৮১ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই থেকে জানুয়ারি) এডিপির বাস্তবায়ন অগ্রগতি এক হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা, যার হার ১৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম ৭ মাসে এডিবির বাস্তবায়ন অগ্রগতি ছিল এক হাজার ৮২৩ কোটি টাকা, যার হার ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে কম টাকা বাস্তবায়িত হলেও শতাংশের দিক থেকে বেশি।

তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে আরএডিপিতে মোট বরাদ্দ ছিল দুই লাখ এক হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। তার মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরে বাস্তবায়নের হার ছিল ৮০ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *