সংঘর্ষের দায় তৃতীয় পক্ষের ঘাড়ে চাপাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা
রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে ব্যবসায়ীদের নিজেদের ঝগড়া থেকে। একে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীদের এক পক্ষের উস্কানিতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনার দায়ভার নিতে রাজি নন ব্যবসায়ীরা। তারা তৃতীয় পক্ষের ঘাড়ে দায় চাপাতে চান।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এত বড় সংঘর্ষের পেছনে নিশ্চয়ই কোনো তৃতীয় পক্ষ রয়েছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
বুধবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংঘর্ষের ঘটনায় নিজেদের অবস্থান জানায় বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।
সমিতির সভাপতি সভাপতি হেলাল উদ্দিন এতে বক্তব্য রাখেন। এসময় তিনি বলেন, সংঘর্ষের সময় অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাটিও অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আমি মনে করি, কোনো ব্যবসায়ী বা ছাত্র এ কাজ করতে পারে না। এ ঘটনায় স্পষ্ট প্রতীয়মান, এখানে তৃতীয় পক্ষ জড়িত। এখানে ব্যবসায়ীরা ছিল না, ছাত্রও ছিল না।
তবে এ ঘটনায় যদি কোনো ব্যবসায়ী জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান হেলাল উদ্দিন।
উল্লেখ্য, সোমবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এসময় আহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও।
পরদিন মঙ্গলবার সকালে আবারও সংঘর্ষে জড়ান শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা। মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে তারা ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। ছাত্রদের অনেকে হেলমেট পরে এবং লাঠি হাতে নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। ব্যবসায়ী-কর্মচারীরাও লাঠিসোটা ও লোহার রড নিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালানো শুরু করেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ সংঘর্ষ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে গোটা নিউ মার্কেট ও সায়েন্সল্যাব এলাকায়। থেমে থেমে সারাদিন চলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী এবং প্রায় অর্ধশত ব্যবসায়ী-কর্মচারী আহত হন। দুই শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মেডিকেলে নিহত হন সংঘর্ষে গুরুতর আহত হওয়া একটি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদ হোসেন। ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি আছেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে।
সংঘর্ষের খবর সংগ্রহে গিয়ে ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীদের হামলায় আহত হয়েছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের অন্তত ৯ জন সাংবাদিক।
শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ীদের এ সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসেছে ১২টার দিকে। ফলে বাধাহীনভাবে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া আগের রাতের সংঘর্ষের পর মঙ্গলবার সকালে পুলিশের কোনো সতর্কতামূলক পদক্ষেপ সেখানে দেখা যায়নি।