শিশু ধর্ষণ: মিয়ানমারে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
মিয়ানমারে আলোচিত এক শিশু ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছে দেশটির কয়েক হাজার নাগরিক। গতকাল শনিবার দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এ দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াংঙ্গুনে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইড) দপ্তরের বাইরে এ বিক্ষোভ হয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ভিক্টোরিয়া নামে অভিহিত করা তিন বছর বয়সী ওই শিশুটি মে মাসে মিয়ানমারের প্রশাসনিক রাজধানী নেপিতোর একটি প্রাইভেট নার্সিং স্কুলে নির্যাতিত হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটক করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
ধর্ষণের অভিযোগে শিশুটির পরিবার এক মাস আগে অভিযোগ করলেও এতদিনেও বিচারে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা পুলিশের দক্ষতা ও কাজের গতির সমালোচনা করেছেন।
রয়টার্স বলছে, কয়েক দশকের সামরিক শাসন পেরিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন করলেও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি মিয়ানমারের জনগণের যে আস্থা ও বিশ্বাসের ঘাটতি আছে, শিশু ধর্ষণ নিয়ে প্রতিবাদেও তা ফুটে উঠেছে।
২০১৫ সালের নির্বাচনে জিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির দল সরকার গড়লেও পুলিশের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রতিষ্ঠানই এখনো সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। শনিবার ইয়াংঙ্গুনের সিআইডি কার্যালয়ের বাইরে সাদা শার্ট পরিহিত প্রায় ৬ হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হয় বলে সংগঠকরা জানিয়েছেন।
বিক্ষোভকারীদের অনেকের টি-শার্টে ‘জাস্টিস ফর ভিক্টোরিয়া’ লেখাটি দেখা গেছে। ব্যানারের একটিতে লেখা ছিল ‘আর কোনো ভিক্টোরিয়া চাই না’। আমরা একটি ব্যাখ্যা চাই, যা মানুষ বিশ্বাস করবে। আমরা শিশুটির জন্য বিচার চাই,” বলেছেন প্রতিবাদ কর্মসূচিটির সংগঠকদের একজন অং হিতাইক মিন।
বিক্ষোভকারীরা মিয়ানমারের শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টিতে পদক্ষেপ নেওয়ারও আহŸান জানান। এর আগে শুক্রবার ফেইসবুকে স¤প্রচারিত এক সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমার পুলিশের উপ-মহাপরিচালক অং নাইং থু নির্যাতিত শিশুটি যে নার্সিং স্কুলে পড়তো, সেখানকার এক গাড়িচালকের বিরুদ্ধে পুলিশ আদালতে মামলা করেছে বলে জানিয়েছেন।
সন্দেহভাজন ওই গাড়িচালক পুলিশের হেফাজতে আছেন, বলেছেন নাইং থু। এ ঘটনায় বিস্তৃত তদন্ত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন পুলিশের এ কর্মকর্তা। কর্মকর্তারা নির্যাতনের শিকার ৩ বছর বয়সী শিশুটির সেরে ওঠার অপেক্ষায় থাকায় সন্দেহভাজন অপরাধীকে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে কিছুটা দেরি হয়েছে বলেও স্বীকার করে নেন নাইং থু।
শিশুটির জবানবন্দি ও অন্যান্য রেকর্ডের ওপর ভিত্তি করে আমরা একটি মামলা করেছি, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ওই গাড়িচালককে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান পুলিশের এ উপ-মহাপরিচালক। তিনি বলেন, নিবন্ধন না থাকায় শিশুটি যে নার্সিং স্কুলে পড়তো, সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছে, তারা পুলিশের এ ভাষ্যে সন্দিহান। শনিবারের বিক্ষোভে স্ত্রী ও ২ বছরের মেয়েকে নিয়ে অংশ নেওয়া ইয়ে মিন্ট উইন বলেছেন, শিশু ধর্ষণের ঘটনাগুলোকে সরকারের আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আমার কাছে খুবই সন্দেহজনক মনে হচ্ছে, আমি সিআইডির তদন্তকে বিশ্বাস করতে পারছি না, বলেছেন ৩৭ বছর বয়সী এ ব্যক্তি।