May 14, 2024
খেলাধুলা

শচিনের যে ইনিংসটি ‘নিজে খেলতে চান’ তামিম

ততদিনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বড় তারকা হয়ে গেছেন শচিন টেন্ডুলকার। বিশেষ করে ১৯৯৮ সালের শুরু থেকেই রানের ফল্গুধারা ছিল তার ব্যাটে। সে বছর ওয়ানডে ক্রিকেটে হাঁকান ৯ সেঞ্চুরি ও ৭ ফিফটি, সবমিলিয়ে করেন এক বছরে বিশ্বরেকর্ড ১৮৯৪ রান। তার ৯ সেঞ্চুরির চারটিই ছিল অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে।

সেই চার সেঞ্চুরির দুইটি আবার ছিল শারজাহয় হওয়া তিন জাতির (অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও নিউজিল্যান্ড) টুর্নামেন্ট কোকাকোলা কাপে। এর মধ্যে গ্রুপ স্টেজের শেষ ম্যাচে খেলা ১৩১ বলে ১৪৩ রানের ইনিংসটি শচিনের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস হিসেবেই বিবেচনা করে থাকেন ক্রিকেটবোদ্ধারা। সে ইনিংসটিই নিজে খেলতে চান বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের তারকা ওপেনার তামিম ইকবাল।

জনপ্রিয় ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর ম্যাগাজিন ‘দি ক্রিকেট মান্থলি’র আয়োজন ‘যদি আমি করতে পারতাম’-এ তামিম জানিয়েছেন শচিনের এই ইনিংসের কথা। যেদিন শচিন একা হাতেই ভারতকে পাইয়ে দিয়েছিলেন ফাইনালের টিকিট। টাইগারদের বর্তমান ওয়ানডে অধিনায়ক তামিমের জীবনে দেখা সেরা ইনিংস এটি। তাই তিনি এ ইনিংসটি নিজেই খেলতে চান।

১৯৯৮ সালের ২২ এপ্রিল হওয়া ম্যাচটিতে আগে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮৪ রান করেছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই ম্যাচটি জিতলে সরাসরি ফাইনালে যাবে ভারত। হারলেও ব্যবধান কম হলে পাবে ফাইনালের টিকিট। মাঝে ধুলিঝড়ের কারণে ভারতের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৬ ওভারে ২৭৬ রান। তবে ২৩৭ রান করলেই তারা পেয়ে যেত ফাইনালের টিকিট।

এমতাবস্থায় ব্যর্থ হয় ভারতের অন্য ব্যাটসম্যানরা। তবে অটল ছিলেন শচিন। অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণ সামলে খেলেন ১৩১ বলে ১৪৩ দুর্দান্ত এক ইনিংস। যার সুবাদে ৪৬ ওভারে ২৫০ রান করতে পারে ভারত এবং পেয়ে যায় ফাইনালের টিকিট। শচিনের এ ইনিংসের ভক্ত তামিম।

তার বয়ানে সেই ইনিংসের বর্ণনা

আমার জীবনে দেখা সেরা ইনিংস সেটি। নিউজিল্যান্ডের নেট রানরেট টপকে ফাইনালে উঠতে ভারতের প্রয়োজন ছিল ৪৬ ওভারে ২৩৭ রান এবং সে (শচিন টেন্ডুলকার) একা হাতে ম্যাচটা শেষ (সেদিন ম্যাচ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়াই। তবে ২৫০ রান করায় ভারত পায় ফাইনালের টিকিট) করল। এ জিনিসটিই সেটাকে স্পেশাল ইনিংস বানিয়েছে।

ঐ ইনিংসে খেলা বেশ কিছু শট শ্বাসরুদ্ধকরভাবে ভালো ছিল। আমার মনে আছে, সে জুটি গড়ছিল ঠিকই তবে এটাও মাথায় রেখেছিল যে, ভারতকে ফাইনালে তোলার কাজটা তার একারই করতে হবে।

সেদিন ধুলিঝড়ের কারণে মাঝে বিরতি এসেছিল। এটা যেন নাটকীয়তার মধ্যে বাড়তি কিছু উপাদান ছিল। এই বিরতির পর শচিন আরও দুর্বার হয়ে ফিরে আসে এবং নিজের শট খেলতে থাকে।

শচিন ততদিনে সুপারস্টার হয়ে গেছিল। এই ইনিংসটা তার মহিমা আরও বাড়িয়েছে। এরপর একই দল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে ১৩৪ রানের ইনিংস খেলেছিল।

আমার মতে, এই ইনিংসটি (১৩১ বলে ১৪৩ রান) বেশি স্পেশাল ছিল কারণ প্রতিপক্ষে ছিল শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ান বোলিং আক্রমণ। তাদের এখনও ভালো বোলিং আক্রমণ রয়েছে। তবে তখনকার সময়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল। শেন ওয়ার্ন, ড্যামিয়েন ফ্লেমিঙ্গো এবং টম মুডির বিপক্ষে যেসব শট খেলেছিল, তা ভোলার মতো নয়। এর সঙ্গে টনি গ্রেগের ধারাভাষ্য বাড়তি মাত্রা যোগ করেছিল।

আমার বয়স তখন মাত্র ৯ বছর। টিভিতে খেলা দেখা শুরু করেছি মাত্র। এর আগের বছর বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি জিতেছিল। তাই আমাদের বন্ধুদের আড্ডায় ক্রিকেট ছিল মুখরোচক বিষয়। আমার মনে আছে, আমি সনাৎ জয়াসুরিয়ার অনেক বড় ভক্ত ছিলাম। তবে টিভিতে প্রায় সবই ম্যাচই দেখতাম। বলা বাহুল্য, শচিনের ইনিংসটা কখনওই ভোলার মতো নয়।

আমি সেই ইনিংসটা দেখেছি চট্টগ্রামে আমাদের বাড়ির ছাদে একটা পারিবারিক অনুষ্ঠানের মধ্যে। সৌভাগ্যবশত কেউ একজন ছাদে টিভি নিয়ে এসেছিলেন। আমার মনে আছে, আমি তখন অনেক ছোট। তবে তখনই ক্রিকেট দেখা ও শেখা শুরু করেছিলাম। শচিন যখন ইনিংসটা খেলে, আমি টিভির সামনেই ছিলাম। এখনও সময় পেলে ইউটিউবে সেই ইনিংসটি দেখি।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *