May 20, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

‘লাপাত্তা’ ওসি মোয়াজ্জেম আগাম জামিন চান

 

 

 

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দি ইন্টারনেটে ছড়ানোর ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন হাই কোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছেন।  আইনজীবীর মাধ্যমে করা ওই আগাম জামিনের আবেদন বুধবার হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা পড়ে। নিয়ম অনুযায়ী অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরেও ওই আবেদনের অনুলিপি পাঠানো হয়।

কিন্তু বিষয়টি যেহেতু এখনও শুনানির জন্য আসেনি, সেহেতু বুধবার হাই কোর্টে হাজির হননি পুলিশ পরিদর্শক মোয়াজ্জেম। তিনি এখন কোথায় আছেন, সে বিষয়েও স্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি পুলিশ কর্মকর্তারা।

মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেপ্তারে সাইবার ট্রাইব্যুনালের জারি করা পরোয়ানা দুই দিনেও ফেনীতে পৌঁছেনি। চট্টগ্রামে একটি মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার তারিখ থাকায় নতুন কর্মস্থল রংপুরেও তাকে পাওয়া যায়নি।

গত মার্চ মাসে নুসরাত তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করার পর তার তদন্তে তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম সোনাগাজী থানায় ডেকে নিয়ে ওই মাদ্রাসাছাত্রীর জবানবন্দি নিয়েছিলেন। তার কয়েক দিনের মাথায় নুসরাতের গায়ে অগ্নিসংযোগ করা হলে তা নিয়ে সারাদেশে আলোচনার মধ্যে ওই জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের মৃত্যুর পর গত ১৫ এপ্রিল ওই ভিডিও ছড়ানোর জন্য ওসি মোয়াজ্জেমকে আসামি করে ঢাকায় বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামছ জগলুল হোসেন ওই অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)।

এর ধারাবাহিকতায় পিবিআই যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়, সেখানে ওসি মোয়াজ্জেমের নিজের মোবাইল ফোনে জবানবন্দি রেকর্ড করার এবং তা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়। পিবিআইয়ের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামছ জগলুল হোসেন সোমবার মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।

এদিকে নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার পর ওসি মোয়াজ্জেমকে প্রথমে সোনাগাজী থানা থেকে প্রত্যাহার করে রংপুর রেঞ্জে পাঠান হয়। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় পুলিশ বাহিনী থেকে।

মামলার বাদী ব্যারিস্টার সুমন  বলেন, এজাহারে আসামির ঠিকানা হিসেবে সোনাগাজী থানার কথা উলে­খ করা ছিল। সোমবারই আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ফেনীর পুলিশ সুপারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জেনেছেন।

তবে ফেনীর পুলিশ সুপার কাজী মো. মনিরুজ্জামান  বলেছেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়টি তিনি শুনলেও বুধবার দুপুর পর্যন্ত তার দপ্তরে তা পৌঁছায়নি। ফেনী থেকে প্রত্যাহার করার পর পরিদর্শক মোয়াজ্জেম নিয়ম অনুযায়ী রংপুরে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও তিনি এখন নেই।

রংপুর রেঞ্জের ডিআইজির স্টাফ অফিসার এএসপি শরিফুল আলম বলেন, যোগদানের পর নুসরাতের ঘটনার সাক্ষ্য দিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তলবে তিনি ঢাকায় যান। ঢাকায় থাকা অবস্থায় চট্টগ্রামের একটি মামলার সাক্ষী হিসাবে উপস্থিত থাকার জন্য কাগজ আসে।

২৯ মে বুধবার সেই সাক্ষ্য হওয়ার কথা। বিষয়টি আমরা তাকে জানানোর পর তিনি রংপুরে না ফিরে চট্টগ্রামে যেতে চাইলে তাকে অনুমতি দেওয়া হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিদর্শক মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রংপুরে যায়নি। সেরকম কিছু পেলে তারা নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। পুলিশ কর্মকর্তারা পরিদর্শক মোয়াজ্জেমের কোনো খোঁজ দিতে না পারলেও আইনজীবীর মাধ্যমে তার আগাম জামিনের একটি আবেদন বুধবার সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা পড়ে।

হাই কোর্টের একজন আইন কর্মকর্তা জানান, বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের অবকাশকালীন বেঞ্চে আবেদনটি করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী অবকাশকালীন অন্য এখতিয়ারভুক্ত বেঞ্চেও এ আবেদনের শুনানি হতে পারে।

সুপ্রিম কোর্টে ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে ২৬ মে, চলবে ১৫ জুন পর্যন্ত। ওই সময় পর্যন্ত নির্দিষ্ট অবকাশকালীন বেঞ্চগুলো বিভিন্ন মামলা শুনবে। বৃহস্পতিবার একটি বেঞ্চের বসার কথা থাকলেও সেই আদালতের কার্যাতালিকায় পরিদর্শক মোয়াজ্জেমের আগাম জামিনের আবেদনটি আসেনি।

ঈদের আগে হাই কোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ বসার সুযোগ থাকছে কেবল ৩ জুন। পরিদর্শক মোয়াজ্জেমের আবেদন সেদিনের কার্যাতালিকায় থাকবে কি না তা জানতে আগের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে ওই আইন কর্মকর্তা জানান।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *