April 20, 2024
খেলাধুলা

লক্ষ্য ২৩১, রেকর্ড গড়ে জিততে হবে বাংলাদেশকে

নিজেদের পরিকল্পনার প্রথম অংশটুকু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবেই সারল বাংলাদেশ। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের লিড আড়াইশ রানের মধ্যে আটকে রাখার কথা জানিয়েছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। আবু জায়েদ রাহি, তাইজুল ইসলামদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ক্যারিবীয়দের লিড দাঁড়িয়েছে ২৩০ রানের, ম্যাচ জিততে বাংলাদেশের প্রয়োজন ২৩১ রান।

এই ম্যাচ জিততে এখন নিজেদের আগের রেকর্ড ভাঙতে হবে বাংলাদেশের। ঘরের মাঠে বাংলাদেশ দলের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড মাত্র ১০১ রানের। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এ জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে সবমিলিয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই। ২০০৯ সালে তাদের মাটিতে ২১৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ।

এই রেকর্ড গড়তে বাংলাদেশ দল অনুপ্রেরণা পেতে পারে সিরিজের প্রথম ম্যাচ থেকেই। কেননা বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের দখলে। এই তো গত টেস্টে বাংলাদেশের ছুড়ে দেয়া ৩৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জেতার অবিস্মরনীয় কীর্তি গড়েছে তারা।

তবে মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আবার এত রান তাড়া করে জেতার নজির নেই একটিও। ২০১০ সালে বাংলাদেশের দেয়া ২০৯ রানের লক্ষ্য ১ উইকেট হারিয়েই ছুঁয়ে ফেলেছিল ইংল্যান্ড। হোম অব ক্রিকেটে এটিই সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড।

এছাড়া মিরপুরে দুইশর বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড রয়েছে আর একটি। ২০০৮ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে ২০৫ রান করে ৫ উইকেটে জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। অর্থাৎ বাংলাদেশ দল এই ম্যাচ জিতলে মিরপুরের মাটিতে দুইশর বেশি রান তাড়া করে জেতার মাত্র তৃতীয় নজির হবে।

ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসের ভালো শুরু করেছিল বাংলাদেশ। স্বাগতিকরা ধারাবাহিকতা বজায় রাখে চতুর্থ দিন সকালেও। আজ (রোববার) দিনের পঞ্চম ওভারেই প্রথম উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা জোমেল ওয়ারিকানকে সাজঘরে পাঠিয়ে দিনের শুরুটা ইতিবাচকভাবেই করে বাংলাদেশ।

ডানহাতি পেসার আবু জায়েদ রাহির হাত ধরে মেলে প্রথম সাফল্য। ক্যারিবীয়দের দ্বিতীয় ইনিংসে নতুন বলটা দলের একমাত্র পেসার রাহির হাতে দেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। মূলত তৃতীয় দিনে হওয়া ২১ ওভারের মধ্যে এক ওভারও পাননি রাহি।

তবে আজ রৌদ্রজ্জ্বল দিনে রাহিকে দিয়েই বোলিংয়ের শুরুটা করেছে বাংলাদেশ। সফলতা মিলতেও খুব একটা দেরি হয়নি। দিনের পঞ্চম ও রাহির করা তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েছেন ওয়ারিকান। খালি চোখেই দেখা যাচ্ছিল পরিষ্কার আউট এটি। যে কারণে রিভিউ নেয়নি ক্যারিবীয়রা।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের দলীয় সংগ্রহ তখন ৪ উইকেটে ৫০ রান। সে ওভারেই তারা হারাতে পারত পঞ্চম উইকেটও। চতুর্থ উইকেট পতনের পর উইকেটে আসেন আগের ম্যাচের নায়ক কাইল মায়ারস। প্রথম বলেই চার মেরে শুরু করেন তিনি।

সেই ওভারের শেষ বলটি বেরিয়ে যাচ্ছিল অফস্ট্যাম্প দিয়ে। ব্যাট এগিয়ে দিয়েও সরিয়ে নেন মায়ারস, বল জমা পড়ে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের গ্লাভসে। বাংলাদেশ দল আবেদন করলেও আউট দেননি আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওর্থ। রিভিউ নেয়নি বাংলাদেশ।

টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, সেই বলটি লিটনের গ্লাভসে যাওয়ার পথে মায়ারসের ব্যাটের বাইরের কানা ছুঁয়ে গেছে। অর্থাৎ রিভিউ নিলে সে উইকেটটি পেতে পারত বাংলাদেশ, সাজঘরের পথ ধরতে হতো মায়ারসকে। বাংলাদেশের সিদ্ধান্থীনতায় তা আর হয়নি।

তবে বেশিক্ষণ উইকেটেও থাকা হয়নি মায়ারসের। রাহির বলেই আউট হয়েছেন তিনি। দিনের ১১তম ওভারের প্রথম বলটি নিখুঁত রিভার্স সুইংয়ে ঢুকে যায় ভেতরে। ব্যাট নামিয়ে এনেও খেলতে পারেননি মায়ারস, আঘাত হানে প্যাডে। আগের ওভার থেকেই মায়ারসকে এই ডেলিভারির জন্য সেটআপ করছিলেন রাহি, সফল হন নতুন ওভারের প্রথম বলে।

বাংলাদেশের জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার ইলিংওর্থ, উল্লাসে মাতে টাইগাররা। মায়ারস ভেবেছিলেন বলটি লেগস্ট্যাম্প দিয়ে বেরিয়ে যাবে। তাই নেন রিভিউ। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, রাহির সেই বল লেগস্ট্যাম্প চুমু দিয়েই যেত। যে কারণে রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি মায়ারস। তার ইনিংস থেমেছে ১৬ বলে ৬ রান করে।

দিনের ১৪তম ওভারে তাইজুলের ঝুলিয়ে বলটি শার্প টার্ন করে জার্মেইন ব্ল্যাকউডের ডিফেন্স ফাঁকি দিয়ে চলে যায় লিটনের গ্লাভসে। ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়ে পপিং ক্রিজ থেকে সামান্যই বেরিয়েছিলেন ব্ল্যাকউড। এই সুযোগটিই নেন লিটন। তড়িৎ গতিতে ভেঙে দেন স্ট্যাম্প, আম্পায়ার আউট দেয়ার আগেই মাতেন উল্লাসে।

লেগ আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওর্থ সিদ্ধান্ত পাঠান থার্ড আম্পায়ার গাজী সোহেলের কাছে। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, লিটন স্ট্যাম্প ভাঙার সময় ব্ল্যাকউডের পা ছিল পপিং ক্রিজের দাগের ঠিক বাইরে। যে কারণে সাজঘরে ফিরতে হয়েছে ১ ছয়ের মারে ৯ রান করা ব্ল্যাকউডকে। এ উইকেটের মূল কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে উইকেটরক্ষক লিটনেরই।

তবে এরপর সেশনের বাকি সময়টায় আর বিপদ ঘটতে দেননি প্রথম ইনিংসের দুই হাফসেঞ্চুরিয়ান এনক্রুমাহ বোনার ও জশুয়া ডা সিলভা। কখনও রাহি, কখনও তাইজুল কিংবা নাঈম-মিরাজদের ব্যবহার করেও এ দুজনকে টলাতে পারেননি টাইগার অধিনায়ক। সেশন শেষে বোনার ১০৭ বলে ৩০ ও জশুয়া ৫২ বলে ২০ রানে অপরাজিত ছিলেন। দলের রান ছিল ৬ উইকেটে ৯৮।

মধ্যাহ্ন বিরতির পর মাঠে ফিরে শেষের ৪ উইকেট নিতে একদমই সময় নষ্ট করেননি দুই স্পিনার তাইজুল ও নাঈম। দুজনই দুইটি করে উইকেট নিলে মাত্র ১৩ রানেই শেষের ৪ উইকেট হারায় ক্যারিবীয়রা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করা বোনারকে ফেরান নাঈম, ২০ রান করা জশুয়া ফেরেন তাইজুলের বলে।

বাংলাদেশের পক্ষে বল হাতে তাইজুল ৪, রাহি ৩, নাঈম ২ ও মেহেদি মিরাজ নিয়েছেন ১টি উইকেট।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *