May 3, 2024
জাতীয়

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি বিএনপির

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রোহিঙ্গা গণহত্যা ও জাতিগত নিপীড়ন নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার তিন বছর পূর্তির প্রাক্কালে মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ সংকট সমাধানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির ধারাবাহিক ফল। তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।

রোহিঙ্গা সমস্যা দূর করতে জাতীয় ঐক্য মতের ভিত্তিতে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ারও আহবান জানান তিনি।

শুক্রবার (২ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিতে এ মুহূর্তে সবচেয়ে অগ্রাধিকার বিষয় হওয়া উচিত ছিল রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান। সরকারের সামগ্রিক কার্যকলাপ বিবেচনায় এ ধরনের অগ্রাধিকার সর্বত্রই অনুপস্থিত। এর বড় প্রমাণ হচ্ছে, এখন পর্যন্ত এ সমস্যার বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনো বিশ্ব নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি, বিশ্ব সফর করেননি এবং জাতিসংঘে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেননি। ফলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আমরা বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও দ্বিপাক্ষিক সব স্তরেই ব্যর্থ হচ্ছি।

বিএনপির পক্ষ থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এহেন সেনা সমাবেশের তীব্র নিন্দা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ ধরনের অপতৎপরতা রুখতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণপূর্বক আন্তঃআঞ্চলিক কূটনীতিক উদ্যোগ গ্রহণে পদক্ষেপ নিতে বর্তমান সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে সকলেই অবগত যে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে গত ১১ সেপ্টেম্বর অন্তত তিনটি পয়েন্টে  মিয়ানমার সৈন্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে। দুই দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের অন্তত তিন পয়েন্টে কা নিউন ছুয়াং, মিন গা লার গি ও গার খু এ ট্রলার থেকে মিয়ানমার সৈন্যদের নামতে দেখা গেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ধারণা মিয়ানমার সেনাবাহিনী এক দিনেই এক হাজারের বেশি সৈন্যের সমাবেশ ঘটিয়েছে।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে গণহত্যা শুরুর সময়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ঠিক একইভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সৈন্য সমাবেশ করেছিল। ফলে গত ১১ সেপ্টেম্বর ভোরে শুরু হওয়া সেনা সমাবেশের কারণে রাখাইনে এখন যেসব রোহিঙ্গা রয়েছেন, তাদের মধ্যে নতুন করে ভীতি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার শুরু থেকে দুর্বল পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে জটিল থেকে জটিল করে তুলেছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে এ সমস্যাকে দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখে এডহক ভিত্তিতে সমাধানে কার্যত মিয়াননামের পাতা ফাঁদে পা দেওয়া। বর্তমান সরকারের এ দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণেই জাতিসংঘের সর্বোচ্চ সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধসহ কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাবে আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু চীন ও রাশিয়ার সমর্থন লাভে আমরা ব্যর্থ হই। এমনকি, তথাকথিত বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় চিত্রিত করতে যখন বর্তমান সরকারের মন্ত্রীরা নিয়ত ব্যতিব্যস্ত এরকম সময়েও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকারের নেওয়া নিপীড়নমূলক পদক্ষেপকে সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধ বলে সমর্থন করে ভারতের অবস্থান বাংলাদেশের সমগ্র জনগণকে গভীরভাবে হতাশ করেছিল।

মির্জা ফখরুল বলেন,  বৈশ্বিক মহামারি সমগ্র বিশ্বের সার্বিক পরিকল্পনা আর দৃষ্টভঙ্গিতেই বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। করোনা পরবর্তী বিশ্বে যে পরিবর্তন সমগ্র বৈশ্বিক নীতিতেই বড় ধরনের প্রভাব রাখবে। রোহিঙ্গা সমস্যাও এর বাইরে নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠী বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী। বিশ্বের মানচিত্রে এ জাতিগোষ্ঠীকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনায় বেসামরিক তদারকিতে মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলকে একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে যথাযথ নাগরিক অধিকার ও মর্যাদায় রোহিঙ্গাদের নিজ দেশের আবাসভূমিতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার কোনো বিকল্প নেই। সরকারের প্রতি আবারও আহবান জানাই, রোহিঙ্গা সমস্যা দূর করতে হলে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিন, গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করুন, বহির্বিশ্বে দেশের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করুন।

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *