May 19, 2024
আন্তর্জাতিককরোনা

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে সক্ষম জনসনের ভ্যাকসিন

করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করেছে বৃহত্তম ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসন। যুক্তরাষ্ট্রে বড় পরিসরে ৬০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর দেহে তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল চালাচ্ছে সংস্থাটি। এদিকে, জনসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরীক্ষামূলক প্রয়োগে জনসনের এই ভ্যাকসিন শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। খবর রয়টার্সের।

শুক্রবার সংস্থাটির একটি অন্তবর্তীকালীন ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। ওই ফলাফল অনুযায়ী, করোনার এই সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের প্রথম এবং দ্বিতীয় দুই ধাপেই আশানুরূপ ফলাফল এসেছে। দু’টি ধাপেই দেখা গেছে যে, এই ভ্যাকসিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে কার্যকর।

করোনা সংক্রমণ থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করতে বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছে। শুক্রবার প্রকাশিত জনসনের ভ্যাকসিনের ফলাফল সম্পর্কে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এডি২৬.কোভ২.এস নামের এই ভ্যাকসিনের দুটি আলাদা ডোজ দেওয়া হয়েছে। এতে ভালো ফল পাওয়া গেছে।

ভ্যাকসিনে একটি ডোজ বা দুটি ডোজের মধ্যে কী ধরনের পার্থক্য হচ্ছে তা পরীক্ষা করে দেখছে মডার্না ও ফাইজার নামের দুটি কোম্পানি। জনসন অ্যান্ড জনসনের এই ভ্যাকসিন অল্প বয়স্কদের শরীরে যতটা কার্যকর হবে ততটাই বয়স্কদের শরীরেও হবে কিনা সে বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়।

গত জুলাই মাসে জনসন অ্যান্ড জনসন তাদের তৈরি করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিন সামনে আনে। প্রথমে বানরের দেহে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। ওই পরীক্ষায় ভাল ফল পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় এক হাজার প্রাপ্ত বয়স্কের দেহে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়।প্রাথমিক ট্রায়ালে ফলাফল ভালো পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে জনসন।

এই ফলাফলের উপর নির্ভর করে বুধবার থেকেই ৬০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর ওপর ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু করেছে জনসন। এই ট্রায়ালকে তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। চলতি বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের শুরুতেই এই ট্রায়ালের ফল পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

জনসনের ভ্যাকসিন গ্রুপের চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার পল স্টোফেলস জানিয়েছেন, তৃতীয় ধাপের এই পরীক্ষা থেকে এই ভ্যাকসিনটি কতটা কার্যকরী ও নিরাপদ তা জানা যাবে। আগামী বছর এই ভ্যাকসিনের ১ বিলিয়ন ডোজ উৎপাদন করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রে আরও তিনটি ভ্যাকসিন চলতি গ্রীষ্মের শুরুতেই তাদের ট্রায়াল শুরু করেছে। তবে জনসনের তৈরি সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটি অন্যদের চেয়ে আলাদা। এর বেশ কয়েকটি সুবিধা রয়েছে যা এটি নিরাপদ এবং কার্যকর প্রমাণিত হলে প্রশাসনিক পরিচালনা এবং বিতরণ করা আরও সহজ করে তুলতে পারে।

জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের কাজে নিযুক্ত গবেষকরা জানিয়েছেন, ৯৮ শতাংশ স্বেচ্ছাসেবীর দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। এই অ্যান্টিবডি ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম। ভ্যাকসিন দেওয়ার ২৯ দিন পর এই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। তবে ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক মানুষদের মধ্যে মাত্র ১৫ জনের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। তরুণদের তুলনায় এই সংখ্যা অনেকটাই কম।

এই ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে দেখা গেছে, ৬৫ বছরের বেশি বয়স্কদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ স্বেচ্ছাসেবীর দেহে ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন মাথা ধরা ও পেশিতে ব্যথা দেখা গেছে। তবে অল্প বয়স্কদের মধ্যে সেটা ৬৪ শতাংশের শরীরে দেখা গেছে। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ভ্যাকসিনের প্রভাব অল্প বয়স্কদের শরীরে বেশি হচ্ছে। অবশ্য এখনও এই ট্রায়াল শেষ হয়নি। সব ফলাফল হাতে এলেই এ বিষয়টি পরিষ্কার হবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

এদিকে, করোনার এই সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের একটি শটেই রোগ প্রতিরোধ শক্তি তৈরি হবে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানী পল। তিনি বলছেন, জনসনের বানানো ভ্যাকসিনের একটি ডোজই দেওয়া হবে স্বেচ্ছাসেবীদের।

আর এই ডোজের মাত্রা এমনভাবেই ঠিক করা হয়েছে যাতে একটি শটেই শরীরে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। তিনি বলেন, এই ডোজে রক্তের টি-লিম্ফোসেইট কোষও সক্রিয় হবে। এই টি-কোষ সংক্রামিত কোষকে নষ্ট করে দিতে পারে। টি-কোষ অ্যাকটিভ হলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

বায়োমেডিক্যাল অ্যাডভান্সড রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিএ আরডিএ) যৌথ উদ্যোগে এই ভ্যাকসিন তৈরি করছে জনসন অ্যান্ড জনসনের রিসার্চ উইং জনসেন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *