May 18, 2024
জাতীয়

রূপপুরের বর্জ্য বাংলাদেশের বাইরেই ধ্বংস করবে রাশিয়া

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় জ্বালানির বর্জ্য বাংলাদেশের সীমানার বাইরে নিয়ে ধ্বংস করার শর্ত রেখে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি সংশোধনের খসড়া অনুমোদন করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়।

খসড়া অনুমোদনের সময় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই এবং আমাদের জায়গা ছোট, সুতরাং প্ল্যান্ট চালানোর ফলে যত গারবেজ আসবে সব রাশান কর্তৃপক্ষ এ দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে তা ডিসপোজ করবে।

বাংলাদেশের ভেতরে কোনো বর্জ্য ধ্বংস করা ‘হবে না’ জানিয়ে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আজকে এই জিনিসটা কেবিনেট মেটিংয়ে অ্যাসোসিয়েট আলোচনা হিসেবে ক্লিয়ার করে দেওয়া হয়েছে। যত গারবেজ আসবে সবকিছু রাশান কর্তৃপক্ষ এই দেশের টেরিটরির বাইরে নিয়ে ডিসপোজ করবে- এটা চুক্তিতে আছে।

চুক্তির খসড়া অনুমোদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শেষ হওয়ার পরপরই নিউক্লিয়ার পাওয়ার কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড পরিচালনার দায়িত্ব নেবে। ওই কোম্পানির মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জনবল নিয়োগ করা হচ্ছে। রাশান ফেডারেশনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত জেনারেল কন্ট্রাক্টের অধীনে সেই জনবলের প্রশিক্ষণ চলছে।

চুক্তিতে সংশোধনী আনার প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে সচিব বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের প্রথম এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ায় এবং বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে অপারেশন শুরুর পর থেকে সুষ্ঠুভাবে যাতে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় সেজন্য রাশান ফেডারেশনের সহযোগিতা প্রয়োজন, সেজন্য কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে।

প্রাথমিক চুক্তিতে ওই কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য রাশিয়ার ফেরত নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও চূড়ান্ত চুক্তিতে তা স্পষ্ট ছিল না বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন অনেকেই। কর্মকর্তারা এর আগে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, নির্দিষ্ট সময় পরপর উচ্চ তেজস্ক্রিয় এসব বর্জ্য চূড়ান্ত অপসারণের জন্য রাশিয়া ফেরত নিয়ে যাবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই সংশোধনী হলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আইজিএর আওতায় রাশান ফেডারেশনের সহযোগিতা নেওয়া সম্ভব হবে, যা এই বিদ্যুৎকেন্দ্র সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৬১ সালে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ার পর ১৯৬৩ সালে প্রস্তাবিত ১২টি এলাকার মধ্য থেকে বেছে নেওয়া হয় পাবনার রূপপুরকে। দ্রæত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ২০১০ সালে সংসদে প্রস্তাব পাস করে গঠন করা হয় একটি জাতীয় কমিটি। পরের বছর অর্থ্যাৎ ২০১১ সালের ২ নভেম্বর বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে চুক্তি সই হয়।

মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে উপস্থিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সুরাইয়া আকতার জাহান বলেন, ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের পরে পাওয়ার প্ল্যান্টের কীভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হবে, সে বিষয়ে (চুক্তিতে) সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা ছিল না। এখন ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের পরে আমরা রাশিয়ার কাছ থেকে অপারেশন চলাকালীন বিভিন্ন সহযোগিতা নেব।

রাশিয়া কত বছর অপারেশনাল সার্ভিস অব্যাহত রাখবে সেই প্রশ্নে উপসচিব সুরাইয়া বলেন, সুস্পষ্টভাবে বছরের কথাটা বলা হয়নি। অপারেশনাল পিরিয়ড বলতে যতদিন এই পাওয়ার প্ল্যান্ট সচল থাকে। এটা ৬০ বছর সচল থাকার কথা, পরবর্তীতে এটাকে আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে একশ বছরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

২০১৩ সালের অক্টোবরে রূপপুরে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫০ বছর আয়ুর এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালের মধ্যে চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে সরকার।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *