April 26, 2024
জাতীয়

যৌন হয়রানির অভিযোগ, অবরুদ্ধ প্রধান শিক্ষক

নওগাঁর রানীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের মেরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হররানির অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি অভিভাবকদের মধ্যে জানাজানি হলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েলে রোববার (২৭ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ সকল শিক্ষকে প্রায় ৪ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন স্থানীয়রা। পরে পুলিশ ও এসিল্যান্ড খবর পেয়ে দুপুরের দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েকদিন যাবৎ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম ও চতুর্থ শ্রেণীর ৫-৬জন ছাত্রীদের শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয় ও জড়িয়ে ধরে। বাধ্য হয়ে ছাত্রীরা বাড়িতে গিয়ে তাদের অবিভাবকদের ঘটনাগুলো খুলে বললে স্থানীয়দের গ্রামবাসীর মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এরপর রোববার বেলা ১১টার দিকে উত্তেজিত অভিভাবক ও স্থানীয়রা বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমানসহ বিদ্যালয়ের অনন্যা শিক্ষকদের অররুদ্ধ করে রাখে। এসময় খবর পেয়ে রানীনগর থানা পুলিশ বিদ্যালয়ে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পরে দুপুর আড়াইটায় অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) হাফিজুর রহমান বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের কৌশলে শরীরের স্পর্শকাতর স্থানসহ বিভিন্ন জায়গায় হাত দেন। এতে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এবং বিদ্যালয়ে যাওয়ার অনাগ্রহ প্রকাশ করে। শিক্ষার্থীরা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে বলে অভিভাবকরা অভিযোগ করেন।

স্থানীয় মেরিয়া গ্রামের বাসিন্দা হামিদুর রহমান বলেন, আমার বড় ভাইয়ের মেয়ে ৫ম শ্রেণীতে পড়ে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সে এসে বলে হাফিজুর রহমান স্যার আমার শরীরে হাত দিয়েছে। আর জোড়ে চেপে ধরেছে। আমি খুব ব্যাথা পেয়েছি। স্যার ভালো নয়। এরকম চরিত্রহীন শিক্ষকের কঠিন শাস্তি চাই। এমন শিক্ষকের দরকার এই বিদ্যালয়ে।

গ্রামের ফাতেমা বেগম নামের অপর একজন অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে হাফিজুর মাষ্টার ৪দিন আগে স্কুলে জড়িয়ে ধরে আমার মেয়েকে। বাড়িতে এসে আমার বলে যে স্যার কেমন জানি করে, স্যার ভালো নয়। তাকে আটক করে শাস্তি শাস্তি দেওয়া হোক। এমন জঘন্য মনের শিক্ষক থাকার দরকার নাই বিদ্যালয়ে।

একই গ্রামের আজিজুর রহমান, কুলসুম বেগম, রুবেল হোসেনসহ কয়েকজন বলেন, আমাদের মেয়েরা এই শিক্ষকের কাছে নিরাপদ নয়, তাকে দ্রুত চাকুরি থেকে অব্যহতি দিয়ে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। নইলে আমাদের মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাবোনা। কারণ তার চরিত্র ঠিক নাই। একজন শিক্ষক হয়ে তার সন্তানতুল্য মেয়েদের সাথে কিভাবে এমন খারাপ আচরণ করতে পারে ভাবতেই অবাক লাগছে। তাকে গণধোলাই দেওয়া উচিত।

ভুক্তভোগী পঞ্চম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী বলেন, হাফিজুর স্যার মাঝে মাঝে শ্রেণীকক্ষে আমার শরীরে হাত দেয় ও জড়িয়ে ধরে। আমার খুব খারাপ লাগে। স্যার ভালো নয়। আপনি বুঝে নেন কেমন আমার বলতে লজ্জা লাগছে। স্যার ভালো নয়,খুব খারাপ। স্কুলে যেতে ভয় লাগে।

চতুর্থ শ্রেণীর দুই জন শিক্ষার্থী বলেন, স্যার স্কুলে আমাদের একা পেলেই কাছে ডাকে ও গায়ে হাত দেয়। অনেক সময় চুমুও খায়। আমার খুব খারাপ ও লজ্জা লাগে। স্যার কেমন জানি করে আমাদের ভালো লাগেনা।

এবিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) হাফিজুর রহমান বলেন, এই স্কুলে যারা পড়াশোনা করেন সবাই আমার সন্তান সমতুল্য। এখানকার কিছু মানুষ সমাজে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে এই ধরনের পরিকল্পনা সাজিয়েছে। আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি ) আবুল কালাম আজাদ বলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহোদয় ও থানা পুলিশ এর একটি টিম গিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার দেখিয়ে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, স্থানীয় উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী পরবর্তী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *