যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থাকাকে ‘মূর্খতা’ বললেন ইমরান খান
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আফগানিস্তান যুদ্ধে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত ‘মূর্খতা’ ছিল বলে উল্লেখ করেছেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তার মতে, ওই সিদ্ধান্তের কারণে পাকিস্তানকে প্রচুর পস্তাতে হয়েছে এবং এর জেরেই দেশটির নিরাপত্তা ও অর্থনীতি মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। গত বুধবার পাকিস্তানের পার্লামেন্টে এসব কথা বলেন ইমরান খান। খবর ভয়েস অব আমেরিকার।
তিনি বলেন, আমরা শান্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদার হতে পারি এবং চিরকাল থাকতেও পারি। কিন্তু আর কোনোদিনই যুদ্ধে তাদের সঙ্গী হতে পারব না। এসময় আফগানিস্তানে ভবিষ্যৎ সামরিক অভিযানের জন্য মার্কিন বাহিনীকে ফের পাকিস্তানের ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী।
ইমরান খানের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের কথায় আফগান যুদ্ধে অংশ নেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের দেশেই পাল্টা জঙ্গি হামলা বেড়ে যায়। এরপর থেকে আত্মঘাতী বোমাহামলাসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী হামলায় ৭০ হাজারের বেশি পাকিস্তানি নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং তাদের অন্তত ১৫ হাজার কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, ইসলামাবাদের ত্যাগ-তীতিক্ষার প্রশংসা না করে উল্টো ‘হিপোক্রেট’ (ভণ্ড) বলে গালি দিয়েছে ওয়াশিংটন এবং পাকিস্তানের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
প্রায় দুই দশক আগে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট আফগানিস্তানে অভিযান চালিয়ে তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করে। তাদের বিরুদ্ধে ৯/১১ হামলায় জড়িত আল-কায়েদাকে সহযোগিতার অভিযোগ তুলেছিল ওয়াশিংটন। তবে অভিযান শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কেও উত্থান-পতন শুরু হয়।
ওয়াশিংটন বরাবরই অভিযোগ করেছে, কোটি কোটি ডলারের মার্কিন সহযোগিতা পেয়েও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গোপনে তালেবানকেই সমর্থন এবং আশ্রয় দিয়েছে।
মার্কিনিদের অভিযোগে, পাকিস্তানের সহায়তা পেয়েই তালেবান সংঘবদ্ধ হয়ে আফগান বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী হামলা চালাচ্ছে এবং বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে। তবে ইসলামাবাদ বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বুধবার পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যেই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী দ্রুত প্রত্যাহারে বাইডেন প্রশাসনের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেন। পাশাপাশি, তালেবানকে সমঝোতায় রাজি করাতে পাকিস্তানকে তার ‘বিশেষ সুবিধা’ ব্যবহার করতে মার্কিন প্রস্তাবেরও নিন্দা জানান।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ইমরান খান জানান, তার দেশ তালেবানের ওপর একমাত্র যে ‘বিশেষ সুবিধা’ ব্যবহার করতে পারে তা হলো পাকিস্তানে বসবাসরত তাদের পরিবার।
তিনি বলেন, [তালেবান] পরিবারগুলোকে কি গ্রেফতার করতে হবে? [যুক্তরাষ্ট্র] আর কী আশা করে… পাকিস্তান কী করবে?
ইমরান খানের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যে মুহূর্তে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে, পাকিস্তান তখনই সেই বিশেষ সুবিধাটুকুও হারিয়ে ফেলেছে।