যাদের হাতে উঠছে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড
চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই শেষে ৩১ সংগঠন ও ব্যক্তিকে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত করা হয়েছে, যাদের হাতে সোমবার পুরস্কার তুলে দেবেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও সিআরআইয়ের ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক।
সোমবার বেলা ৩টায় সাভারের শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে এবারের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা ও সিআরআইয়ের চেয়ারম্যান সজীব ওয়াজেদ জয়ের ধারণ করা বক্তব্য প্রচার করা হবে অনুষ্ঠানে।
দেশ ও মানুষের কল্যাণে যেসব তরুণ উদ্যোক্তা ও সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে, তাদের প্রায় ৭০০ আবেদন যাচাই বাছাই করে এই ৩১ ব্যক্তি ও সগঠনকে মনোনীত করা হয়েছে বলে সিআরআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন- সিআরআইয়ের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইয়াং বাংলা দেশের তরুণদের সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম।
ইয়াং বাংলা ২০১৪ সাল থেকে দুই বছর পরপর জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড দিয়ে আসছে। এবার বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে এক বছর পরই দেওয়া হচ্ছে পঞ্চম আসরের পুরস্কার।
মোট পাঁচটি ক্যাটগরিতে পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- জলবায়ু পরিবর্তন ও উদ্ভাবন, সংস্কৃতি ও যোগাযোগ, সামাজিক উন্নয়ন, সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও দক্ষতা ও কর্মসংস্থান।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ গঠনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডে এবারই প্রথম দেওয়া হচ্ছে আজীবন সম্মাননা।
জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডের চূড়ান্ত পর্বে যে ৩১ ব্যক্তি-সংগঠন-
জলবায়ু পরিবর্তন ও উদ্ভাবন
শাহানা আফরিন দিনা (স্টেপ এহেড): ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘স্টেপ এহেড’ উপকূলীয় অঞ্চলের প্রান্তিক কিশোরী-তরুণী ও নারীদের নিয়ে কাজ করে।
আশিকুজ্জামান (ইনিশিয়েটিভ অব কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট-আইসিডি): খুলনার কয়রা উপজেলার উপকূলীয় বাসিন্দাদের জন্য, বিশেষ করে ‘বাঘ বিধবা’ (বাঘের আক্রমণে বিধবা) আদিবাসী সম্প্রদায়ের (মুণ্ডা) জন্য ২০১৮ সালে আইসিডি নামে এই সংগঠন কাজ শুরু করে।
আবদুল্লাহ আল আরাফ (আইডিইবি আইওটি ও রোবটিকস রিসার্চ ল্যাব): ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত আইডিইবি আইওটি ও রোবটিক্স রিসার্চ ল্যাব গবেষণার মাধ্যমে তরুণদের স্বপ্নের প্রকল্পের বিকাশ করার সুযোগ করে দেয়।
সুমন সাহা (বাংলাদেশ সায়েন্স সোসাইটি): ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সায়েন্স সোসাইটির লক্ষ্য বাংলাদেশের উদীয়মান প্রজন্মের মধ্যে জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া। ধর্মীয় কুসংস্কার ও সমাজের অনগ্রসরতা দূর করতে তৃণমূল পর্যায় থেকে শীর্ষ পর্যন্ত কাজ করছে তারা। এর মূল লক্ষ্য দক্ষতা উন্নয়ন, উচ্চ অধ্যয়ন, প্রযুক্তিগত গবেষণা।
মোহাম্মদ শামস জাব্বার (টেক একাডেমি): ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত টেক একাডেমির লক্ষ্য হল গেমিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষামূলক তথ্য ছড়িয়ে দেয়া।
সানজিদুল আলম সেবন শান (ইকোভেশন বাংলাদেশ): ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ইকোভেশন বাংলাদেশ একটি গবেষণা ও উদ্ভাবন-ভিত্তিক সামাজিক উদ্যোগ।
সংস্কৃতি ও যোগাযোগ
ইউসুফ ইবনে ইয়াকুব (রিফ্লেক্টিভ টিনস): ২০১৩ সালে আত্মপ্রকাশ করে রিফ্লেক্টিভ টিনস। উদীয়মান তরুণদের সৃজনশীলতার বিকাশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠান।
শাহরিয়ার হোসেন বাবলা (চকবোর্ড কমিউনিকেশন): জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ৪, ৫ ও ৬ নম্বর লক্ষ্য বাস্তবায়নে সামাজিক উন্নয়ন ও তারুণ্যের ক্ষমতায়ন বিষয়ে প্রচারের জন্য ২০১৯ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে চকবোর্ড।
রাতুল দেব (জেন ল্যাব): তিনটি বিষয়কে সামনে নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে জেনল্যাব। মূলত শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সমাজের বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা এ সংগঠনটি এখন পর্যন্ত ৩ লাখ মানুষের কাছ ধর্ম ও সাম্প্রদায়িক শান্তির কথা প্রচার করে যাচ্ছে তাদের পরামর্শ কার্যক্রমের মাধ্যমে।
সুব্রত চাকমা (উজানি যুব শিল্পগোষ্ঠী): উজনি যুব শিল্পীগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল ভিত্তিক একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন, যা ২০১৭ সাল থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
মো. ইমরান হোসেন (মোহনা সাংস্কৃতিক সংগঠন): ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজভিত্তিক সাংস্কৃতিক ক্লাব ‘মোহনা সাংস্কৃতিক সংগঠন’ সিলেটের এমসি কলেজে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনায় নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে।
গিরিধর দে (বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র): ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে দেশের ইতিহাসের বিকৃতি রোধে ঐতিহাসিক দলিলাদি সংগ্রহ করে আসছে।
অর্ণব দত্ত: (প্রজন্ম): ময়মনসিংহের যুবাদের নিয়ে ২০১৯ সাল থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করছে প্রজন্ম। তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য, ইচ্ছা ও লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সংগঠনটি।
সামাজিক উন্নয়ন
মাহামুদুল হাসান (খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোটারেক্ট ক্লাব): খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক একটি সংগঠন ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় রোটারেক্ট ক্লাব’। আন্তর্জাতিক রোটারেক্ট ক্লাবের ‘রোটারেক্ট-কেইউএএ অক্সিজেন ব্যাংক’ প্রকল্পের আওতায় এ সংগঠনটি ৫৭ জনকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়েছে।
ফারিয়া আঞ্জুম খান ধ্রুবা (ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির রোটারেক্ট ক্লাব): আন্তর্জাতিক রোটারেক্ট ক্লাবের তত্ত্বাবধায়নে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির রোটারেক্ট ক্লাব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নানা সেবা দিয়ে থাকে।
রিগান কুমার কানু (বাংলাদেশ চা সম্প্রদায় ছাত্র যুব পরিষদ): ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ চা সম্প্রদায় ছাত্র যুব পরিষদ চা শ্রমিকদের মধ্যে নানা সচেতনতামূলক প্রচার চালিয়ে থাকে।
মো. নুরুল আলম (মেধাবী কল্যাণ সংস্থা-এমকেএস): ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত মেধাবী কল্যাণ সংস্থা (এমকেএস) আর্থিক কারণে পড়াশোনা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সহায়তা দেয়।
জীবন ঘোষ (আমরা তাদের জন্য): ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘আমরা তাদের জন্য’ সংগঠনটি জীবিকার কারণে প্রান্তিক যেসব জনগোষ্ঠী স্যানিটেশন, শিক্ষা ও প্রজনন স্বাস্থ্য পায় না, তাদের সহায়তা করে।
সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন
মির্জা গালিব সতেজ (স্বপ্নের খোঁজে): বাংলাদেশের একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের যাযাবর শ্রেণি, বেদে সম্প্রদায়কে নিয়ে ২০১৭ সাল থেকে কাজ করছে স্বপ্নের খোঁজে।
ফাইরুজ ফাইজাহ বেথার (মনের স্কুল): তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠা হয় মনের স্কুল। এ সংগঠনটির পক্ষ থেকে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় কাউন্সেলিং করা হয়।
আনিকা সুবাহ আহমেদ (ইভলিউশন৩৬০): নারী ও তরুণদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্য নিয়ে ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করে ইভলিউশন৩৬০। অনলাইন কার্যক্রমের মাধ্যমে ৩ লাখ মানুষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সংগঠনটি।
লামিয়া তানজিন তানহা (ট্রান্সএন্ড): তরুণদের পরিচালিত অলাভজনক সংগঠন ট্রান্সএন্ড ২০১৮ সাল থেকে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের জীবনমানের উন্নয়ন এবং লিঙ্গ বৈষম্য কমানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য, ক্ষমতায়ন ও উদ্যোক্তা তৈরির জন্য কাজ করে সংগঠনটি।
মাশরুর ইশরাক (থার্ড আই): ‘শেয়ার দ্য রেসপনসিবলিটি’ স্লোগান নিয়ে ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় থার্ড আই। দৃষ্টিশক্তিহীন শিক্ষার্থীদের নিয়ে সেচ্ছাসেবী এই সংগঠনের মূল কার্যক্রম।
মোহাম্মদ জিহাদুল ইসলাম আল-আজাদ (মনীষা মিম নিপুন হিজড়া), (পথচলা ফাউন্ডেশন): তৃতীয় লিঙ্গের পরিচালিত একটি সংগঠন পথচলা ফাউন্ডেশন। ২০১৯ সাল থেকে কাজ করে যাওয়া এই সংগঠনটি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সমাজের মূল স্রোতে একীভূত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
দক্ষতা ও কর্মসংস্থান
অমিয় প্রপান চক্রবর্তী (ধ্রুবতারা যুব উন্নয়ন ফাউন্ডেশন-DYDF): ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত ধ্রুবতারা যুব উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (DYDF) গত ২১ বছর ধরে দেশে যুব ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নে কাজ করছে।
মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল ইউনাইটেড নেশনস অ্যাসোসিয়েশন-ডুমুনা): ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে। তারা নেতৃত্ব বিকাশ, কূটনীতি ও গণ যোগাযোগ নিয়ে কাজ করে।
এসরাত করিম (অমল ফাউন্ডেশন): ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত অমল ফাউন্ডেশন দেশের চরাঞ্চলে জীবিকা, স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষার প্রসারে কাজ করছে।
আরাফাতুল ইসলাম আকিব (স্টার্টআপ চট্টগ্রাম): ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত স্টার্টআপ চট্টগ্রাম দেশের বেকার সমস্যা দূর করতে কাজ করছে। এরই মধ্যে তারা ১৩৫টির বেশি অনুষ্ঠান আয়োজন করে ১ লাখের বেশি তরুণকে যুক্ত করেছে।
আবু হাসান (জয়তা পলি) (দিনের আলো হিজরা উন্নয়ন মহিলা সংস্থা): ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের উন্নয়নে দিনের আলো হিজরা উন্নয়ন মহিলা সংস্থা ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
শিরিন আক্তার আশা (আসমানী যুব নারী ফাউন্ডেশন): কিশোরী ও তরুণীদের জন্য ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় আসমানী যুব নারী ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠাতা নিজে বাল্যবিবাহ থেকে বেঁচে যাবার পর এই সংগঠন তৈরি করে ২৯৪টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছে।
অনামিকা সান্যাল (এইচএসটিইউ মজার স্কুল): হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (এইচএসটিইউ) ভিত্তিক মজার স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয় ২০১৫ সালে। এর আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহায়তায় শিক্ষার্থীরা আশপাশের এলাকার ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষা দিয়ে থাকে।