November 26, 2024
জাতীয়

যশোরে সিজারের সময় ব্লেডে মাথা কাটল নবজাতকের

 

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

যশোর শহরের কিংস হসপিটালে এবার এক প্রসূতির সিজারের সময় ব্লেডের আঘাতে গর্ভের সন্তানের মাথা কেটে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি গোপন রাখার জন্য নবজাতককে কোন চিকিৎসাও করতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্বজনদের। অবস্থার অবনতি হওয়ার শুক্রবার সকালে নবজাতককে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পর বিষয়টি ফাঁস হয়। ভুক্তভোগী নবজাতকটি যশোর সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের সতিঘাটা পান্থাপাড়া গ্রামের ইকরাম হোসেন ও নাজনীন নাহার পলি দম্পতির।

শিশুর বাবা ইকরাম জানান, তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত¡া হওয়ার পর যশোর সদর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। ১০ জুলাই স্ত্রীর প্রসব বেদনা উঠলে তাকে কিংস হসপিটালে নেয়া হয়। সেখানে ডা. আতিকুর রহমান রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে দ্রুত সিজার করার কথা বলেন।

ইকরাম হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ভর্তির পরপরই কোন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ডা. আতিকুর রহমান তার স্ত্রীর সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করেন। নবজাতককে বাইরে আনার পর দেখা যায় মাথা দিয়ে রক্ত ঝরছে। তখন বিষয়টি জানানো হলে ডা. আতিকুর রহমান খান তাদের বলেন, মাথায় হালকা নখের চোট লেগেছে। সমস্যা নেই ঠিক হয়ে যাবে। এরপর বাচ্চাকে কোন ডাক্তার দেখাতে দেয়া হয়নি। বার বার বলা হয়েছে বেশি বেশি বুকের দুধ খাওয়ান। দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই।

মাথা কেটে ফেলার ঘটনা ফাঁস হওয়ার ভয়ে কৌশলে নবজাতককে কোন চিকিৎসার পরামর্শ দেননি বলে অভিযোগ করেন ইকরাম। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে আমার শিশু সন্তান দুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়। শুধু কান্নাকাটি করতে থাকে। শুক্রবার সকালে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। পরে তাকে কিংস হসপাতাল থেকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আকরাম হোসেন অভিযোগ করেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই তড়িঘড়ি করে অস্ত্রোপচার করার কারণে ডা. আতিকুর রহমান গর্ভের সন্তানের মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছেন।

এ ব্যাপারে যশোর হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক কাজল মলি­ক বলেন, শিশুটিকে মাথা কাটা অবস্থায় এখানে আনা হয়েছে। কিভাবে তার মাথা কেটেছে ভর্তির সময় তা শোনা হয়নি।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডা. আতিকুর রহমান খানের কোনো বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ডিগ্রি নেই। তিনি একজন এমবিবিএস চিকিৎসক। তিনি যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন৷ পরে যশোরের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করেন। এই পদ থেকেই তিনি অবসরে যান। বর্তমানে কিংস হসপিটালে গাইনি ও সার্জারি বিভাগের রোগীদের অস্ত্রোপচার করেন। আবার অস্ত্রোপচারের আগে তিনি নিজেই নিয়ম না মেনে রোগীকে অজ্ঞান করেন। ডা. আতিক জেলা স্বাচিপের সভাপতি হওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে নিরব ভূমিকায় থাকেন।

এ বিষয়ে ডা. আতিকুর রহমান খান বলেন, রোগীর পানির পরিমাণ একেবারেই কম ছিলো। তাই তড়িঘড়ি করে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এ সময় ব্লেডের আঘাতে আনুমানিক তিন মিলিমিটার লম্বায় ও আধা মিলিমিটার গভীরে ক্ষত হয়েছে। সামান্য বিষয়টিকে বড় করা হচ্ছে।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের সময় নবজাতকের মাথা কেটে যাওয়ার ঘটনাটি শুনেছি। রোগীর স্বজনরা লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, যে কোনো রোগীর পরীক্ষা নিরীক্ষার পরই অস্ত্রোপচার করার নিয়ম। অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর অজ্ঞানের জন্য একই ডাক্তার দায়িত্ব পালনের কোনো নিয়ম নেই। অবশ্যই সেখানে আলাদা একজন অজ্ঞানের চিকিৎসক উপস্থিত থাকতে হবে।

এই ঘটনার আগে গত ১ জুলাই কিংস হসপিটালে ছায়রা বেগম (৪৫) নামে এক রোগীর পাইলসের পরিবর্তে জরায়ু অস্ত্রোপচার করা হয়। সনদহীন এক চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই রোগীর অস্ত্রোপচার করেছিলেন বলে স্বজনদের অভিযোগ।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *