April 26, 2024
আন্তর্জাতিক

মোদীর ট্রামকার্ড হতে পারে ২০২৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ

বিশ্বের যেকোনো অঞ্চলের তুলনায় ভারতীয় উপমহাদেশে ক্রিকেট উন্মাদনা অনেক বেশি। আর ভারত যে ক্রিকেট পরাশক্তি তা বলার অপেক্ষা নেই। দেশটি এ খেলাকে নিয়ে গেছে শিল্পের পর্যায়ে। এমনকি ভারতের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে খুব সুক্ষ্ম ও বড় ধরনের ভূমিকা রাখে ক্রিকেট।

এসবের পাশাপাশি ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৩ সালের ভারতের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে যে ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে তা নজিরবিহীন।

তবে ভারতীয় ক্রিকেট তো আর এক দিনে এ জায়গায় পৌঁছেনি। মূলত এটির শুরু হয়েছিল ১৯৮৭ এর বিশ্বকাপ থেকে, যেটির আয়োজন করেছিল ভূ-রাজনৈতিক দিক দিয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান।

সেবারের আসরটি ছিল ইংল্যান্ডের বাইরে হওয়া প্রথম কোনো বিশ্বকাপ। যা নিয়ে আয়োজক দেশ ‍দুটির জনগণদের মধ্যে চরম উদ্দীপনা ও উচ্ছ্বাস বিরাজ করছিল।

ওই আসরের টাইটেল স্পন্সর ছিল রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ। সেবার বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া প্রতিটি দলের জন্য আশ্চর্যজনকভাবে ৭৫ হাজার ইউরো করে দেওয়া হয়েছিল, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮২ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা (১ ইউরো= ১০৯.৭০ টাকা হিসাবে)।

১৯৮৭ সালের পর ২০১১ সালে আবারও ভারতে ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেবার ভারতের সঙ্গে আয়োজক দেশর তালিকায় ছিলে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপ জেতে মাহেন্দ্র সিং ধনীর দল।

যে কয়বারই ভারতে ক্রিকেট বিশ্বকাপ হয়েছে, সে বারই আয়োজনে চমক দেখিয়েছে দেশটি। এর পাশাপাশি অবশ্য দেশটির অর্থনৈতিক খাতে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ১২ বছর পর আবারও ভারতে ফিরছে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর। এবার আর কোনো অংশীদারের ধার ধারছে না দেশটি। একাই আয়োজন করতে যাচ্ছে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও চমকপ্রদ এ টুর্নামেন্ট।

এখানে লক্ষ্য করার মতো একটি বিষয় হলো, ভারতের সাধারণ নির্বাচনের ছয় মাস আগে হতে যাচ্ছে ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপ- ২০২৩। অনেকে বিষয়টিকে মোদী সরকারের সবচেয়ে অযৌক্তিক ও সূক্ষ্ম চাল হিসেবে দেখছেন।

দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, নরেন্দ্র মোদীর জন্য এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপ একটি ট্রামকার্ড হতে পারে। কারণ ভারতের রাজনৈতিক অর্থনীতিতে ক্রিকেটের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে।

ভারতে টেলিভিশনে ক্রিকেট দেখা দর্শকের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি, যা গণমাধ্যমের জন্য বিশাল পরিমাণ অর্থোপার্জনের ও কোনো রাজনৈতিক দলের প্রচারের বড় একটি উপায়। যদিও এর জন্য সম্প্রচারকারী টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ও রাজনৈতিক দলকে বেশ ভালো পরিমাণ টাকা খরচ করতে হয়।

এদিকে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কখন কোথায় কোন ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হবে, কীভাবে হবে- এসব বিষয় একপ্রকার একচেটিয়াভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে ভারতীয় কোম্পানি রিলায়েন্স ও অন্য সংস্থাগুলো। কারণ ক্রিকেটের অধিকাংশ সর্বোচ্চ বিনিয়োগ আসছে ভারতীয় এসব কোম্পানি থেকে।

অন্যদিকে, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফ্রাঞ্চাইজি টি-২০ ক্রিকেট লীগ। আইপিএলের এক একটি মতো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভারতকে এনে দিচ্ছে শত শত কোটি রূপি। সেইসঙ্গে বিশ্বজুড়ে দেশটির নাম ছড়িয়ে দিতে রাখছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

আইপিল হলো বর্তমান সময়ে ক্রিকেট প্লেয়ারদের জন্য জীবন পরিবর্তনকারী একটি আসর। এখানে একবার খেলতে পারলে ও কোনো দলে নিয়মিত খেলার সুযোগ হলে একজন ক্রিকেটারের আর কিছুই লাগে না।

ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় এ আসরের অনলাইন স্ট্রিমিংয়ের অধিকার পেতে রিলায়েন্স গ্রুপকে গুনতে হয়েছে প্রায় ২৬০ কোটি ডলার। আর বিদেশি বিদেশী ক্রিকেটারদের জন্য এবারের বিশ্বকাপে ভালো পার্ফম্যান্স এনে দিতে জীবন পরিবর্তনকারী আইপিএলে খেলার সুযোগ।

আইপিলের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিদেশি ক্রিকেটররা আসছেন ভারতে। জানছেন দেশটির ইতিহাস-ঐতিহ্য, সেই সঙ্গে ঘটছে সাংস্কৃতিক মিথস্ক্রিয়া।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *