May 5, 2024
আঞ্চলিকআন্তর্জাতিকলেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

মোদীর আগমনের খবরে মতুয়া সম্প্রদায়ে আনন্দের জোয়ার

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এই সফরসূচির অংশ হিসেবে নরেন্দ্র মোদী দেশের দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্তের জেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুরে যশোরেশ্বরী কালিমন্দির পরিদর্শন করবেন এমন খবরে অন্যান্য মহলের মত শ্যামনগরে বসবাসকারী মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে মোদীকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বিভিন্ন গনমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ২৭ মার্চ যশোরেশ্বরী কালিমন্দিরে আসবেন। এরই মধ্যে সেখানে ৩টি হেলিপ্যাড প্রস্তুত করা হচ্ছে। পাশাপাশি ভারত ও বাংলাদেশের পৃথক নিরাপত্তা টীম ঘটনাস্থল সফর করেছে। তারা মোদীর নিরাপত্তার ব্যাপারে সবধরনের ব্যবস্থা করবেন বলে জানা গেছে।
সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন স্থানে মতুয়া সম্প্রদায়ের ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ রয়েছেন। তাদের মধ্যে কেবলমাত্র শ্যামনগর উপজেলায় রয়েছেন ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। ২৭ মার্চ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর এই মন্দির সফর যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ধারনা করছে রাজনৈতিক মহল। যশোরেশ্বরী কালিমন্দিরের পুরোহিতের নাম দিলীপ মুখার্জী। তিনি শক্তিপীঠ ব্রাম্মণ। তিনি জানান, এই মন্দিরে প্রতিবছর শ্যামা কালীপুজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এই মন্দিরে পূজা অর্চনা হয়ে থাকে। এসব পূজা অর্চনায় শতশত ভক্তের সমাগম ঘটে বলে জানান তিনি।
জেলা মতুয়া সম্প্রদায়ের সভাপতি ও শ্যামনগর উপজেলা সভাপতি কৃষ্ণান্দ মুখার্জী জানান, নরেন্দ্র মোদীর আগমন উপলক্ষে মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে খুশীর জোয়ার বইছে। মোদি গোপালগঞ্জে মতুয়া মন্দিরে যাবেন এবং তিনি সাতক্ষীরায় মতুয়া এলাকায় আসবেন এ খবরে অন্যান্যদের মতো তারাও আনন্দিত। তারা তাকে একনজর দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী যে মন্দির পরিদর্শন করে পূজা দেবেন তার নাম যশোরেশ্বরী কালিমন্দির। এই মন্দির প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে ইতিহাস থেকে বিভিন্নরকম তথ্য জানা যায়। ‘যশোহর খুলনার ইতিহাস’ প্রনেতা সতীশ চন্দ্র মিত্র এ মন্দির স্থাপনা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য উল্লেখ করেছেন। এসব তথ্য থেকে জানা যায়, ১৫৬০ থেকে ১৫৮০ সাল পর্যন্ত রাজা লক্ষন সেনের রাজত্বকালে তিনি স্বপ্নে আদিষ্ট হন ঈশ্বরীপুর এলাকায় একটি মন্দির নির্মাণ করার। মন্দিরটি নির্মাণের পর সেটি বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারনে মন্দিরটি জঙ্গলাকীর্ন হয়ে ওঠে। সেসময় শ্যামনগরের ধুমঘাট ছিল বাংলার ১২ ভূঁইয়ার এক ভূঁইয়া রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী। রাজা প্রতাপাদিত্য এসময় দেখতে পান ওই জঙ্গল থেকে এক ধরনের আলোক রশ্মি বেরিয়ে আসছে। তিনি তখন মন্দিরটি খুলবার নির্দেশ দেন। এরই মধ্যে মন্দিরটি খুলেই সেখানে দেখা মেলে চন্ডভৈরবের আবক্ষ শিলামূর্তি। তখন থেকে সেখানে পূজা অর্চনা শুরু হয়ে যায়। অপরদিকে অপরাপর ইতিহাসবিদরা বলেন, আনারি নামের একজন ব্রাক্ষ্মন এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এর ১০০টি দরজা ছিলো। এখান থেকেই আলোর রেখা জঙ্গল ফুড়ে বেরিয়ে আসতো। মানুষের হাতের তালুর আকারের এই আলোকরেখা রাজা প্রতাপাদিত্য দেখতে পান।
ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী আরও জানা যায়, দক্ষ রাজার কনিষ্ঠ কন্যার নাম ছিল সতীবালা। তিনি জন্ম থেকে মহাদেবের পূজারিনী ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি স্বেচ্ছায় মহাদেবকে বিবাহ করেন। এতে দক্ষ রাজার ঘোর আপত্তি ছিল। তার জামাতা জঙ্গলে ঘুরে বেড়াবে, মাথায় জটা থাকবে, গন্ডদেশে সাপ থাকবে, হাতে ত্রিশূল থাকবে এবং তিনি পশুর চামড়া পরিধান করবেন এমনটি হতে পারে না। এ কারণে জামাতাকে মেনে নেননি দক্ষ রাজা। ইতিহাসের তথ্য থেকে জানা যায়, এক অনুষ্ঠানে দক্ষ রাজার উপস্থিতিতে মহাদেব আসেন। কিন্তু মহাদেব দক্ষ রাজাকে তার শ্বশুর বলে পরিচয় দেননি। এতে তিনি চরম অপমানবোধ করেন। পরে ফিরে গিয়ে শুরু করেন দক্ষযজ্ঞ। এই দক্ষযজ্ঞে সতীবালা ও মহাদেব নিমন্ত্রিত ছিলেন না। এতে অপমান বোধ করেন সতীবালা। সতীবালার সঙ্গে বাবা দক্ষের এই নিয়ে বাকবিতন্ডা হয় এবং একপর্যায়ে সতীবালা ব্রহ্মার কাছে নিবেদন করে বলেন আমার মৃত্যু দাও। কিছুক্ষনের মধ্যেই সতীবালা দেহত্যাগ করেন। এখবর পেয়ে কৈলাস থেকে দ্রুতবেগে নেমে আসেন মহাদেব। তিনি দক্ষ রাজার মুন্ডু কর্তন করে বলির জন্য নিয়ে আসা ছাগলের মুন্ডু কেটে সেখানে বসিয়ে দিয়ে দক্ষযজ্ঞ লন্ডভন্ড করে দেন। পরে তিনি মৃত স্ত্রী সতীবালাকে কাঁধে নিয়ে কৈলাস পাহাড়ে চলে গিয়ে রাগে ক্ষোভে ও দুঃখে ব্রহ্মান্ড ধ্বংস করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। এ খবর পেয়ে ব্রহ্মা ও নারায়ন সিদ্ধান্ত নিলেন মহাদেবকে ঠান্ডা করতে হলে তার কাছ থেকে সতীবালার মৃতদেহ সরিয়ে নিতে হবে। সে অনুযায়ী ত্রিশূল দিয়ে সতীবালাকে ৫১ খন্ড করে ত্রিশূলে ঘোরানো হয়। এর একখন্ড এসে পড়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে। সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হয় যশোরেশ্বরী কালি মন্দির। অপর খন্ডগুলি পশ্চিমবঙ্গের কালিঘাট, আফগানিস্তান, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।
ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী আরও জানা যায়, ঈশ্বরীপুর এলাকায় যশ নামের একজন খেয়ামাঝি ছিলেন। তাকে ঈশ্বর বলেও ডাকতো কেউ কেউ। এক রাতে এক নারীমূর্তি খেয়ামাঝিকে বলেন তাকে নদী পার করিয়ে দিতে হবে। তিনি পার করার সময় অন্ধকারে দেখতে পান ওই নারীমূর্তিকে কেন্দ্র করে পুরো নৌকা এবং নদীতে আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি তাকে প্রনাম করেন এবং তার কাছে আশির্বাদ চান। পরে ঈশ্বরীপুরে যে মন্দিরটি স্থাপিত হয় তার নাম দেয়া হয় ‘যশোরেশ্বরী’ কালি মন্দির। সেখানেই রয়েছে চন্ডভৈরবের আবক্ষ মূর্তি শক্তিপীঠ।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *