মেট্রোরেল ছুটবে এ মাসেই
বিশ্বের অনেক বড় বড় শহরে গণপরিবহনের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম মেট্রোরেল। শহুরে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরাপদ ও নিশ্চিন্তে সময়মতো পৌঁছানোর প্রধান মাধ্যম এটি। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য এটি ছিল স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্নই এখন বাস্তব। পদ্মা সেতুর পর মেট্রোরেলের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আর মাত্র কয়েকটি দিনের অপেক্ষা। প্রকল্প অনুমোদনের ১০ বছর পর বিজয়ের এই মাসেই বাণিজ্যিকভাবে চলাচলের জন্য চালু হচ্ছে মেট্রোরেল। যানজটের এই ঢাকায় নগরবাসীর জন্য যা আশীর্বাদ হয়ে আসছে।
শুরুতে রাজধানীর উত্তরা ও আগারগাঁও অংশের মধ্যে চলবে মেট্রোরেল। এরপর তা পৌঁছবে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত।
কবে উদ্বোধন করা হবে- জানতে চাইলে মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সচিব (যুগ্মসচিব) আবদুর রউফ বলেন, মেট্রোরেল উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময় চেয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছি।
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৬) বা এমআরটি লাইন-৬ (যুগ্মসচিব) অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক খোন্দকার এহতেশামুল কবীর বলেন, আমরা ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩১ ডিসেম্বর প্রস্তাব দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী যেদিন সময় দেবেন সেদিন উদ্বোধন করা হবে।
matro-railসম্প্রতি মেট্রোরেলের শ্যাওড়াপাড়া ও আগারগাঁও স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, আগারগাঁও পর্যন্ত কাজ প্রায় শতভাগ শেষ। যা আছে তা খুবই সামান্য। প্রতিটি স্টেশনের কাজও প্রায় শেষ।
স্টেশনে কর্মরত শ্রমিকরা জানান, এখন টুকটাক কাজ হচ্ছে। সব ধরনের কাজ শেষ হয়েছে। আগারগাঁও স্টেশনে দেখা গেছে, প্রশস্ত ফুটপাত আর সড়কের মাঝে মাঝে রোপণ করা গাছপালা। যা সৌন্দর্য বাড়িয়েছে স্টেশনের।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সূত্র মতে, প্রাথমিকভাবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার মেট্রোর জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এই পথে থাকবে ৯টি স্টেশন। মেট্রোর প্রথম স্টেশন উত্তরা উত্তর। এরপরের স্টেশন উত্তরা সেন্টার, তারপর উত্তরা দক্ষিণ, এরপর পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজিপাড়া, শ্যাওড়াপাড়া এবং সবশেষ স্টেশন আগারগাঁও।
প্রতি দশ মিনিট পর পর ট্রেন আসবে। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সর্বোচ্চ ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাড়া মওকুফ থাকবে।
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৬) বা এমআরটি লাইন-৬ এর প্রকল্প পরিচালক আফতাবউদ্দিন তালুকদার জানিয়েছেন, মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহন করতে সক্ষম হবে।
জানা গেছে, সমস্ত সিভিল কাজ, যান্ত্রিক, বৈদ্যুতিক এবং নদীর গভীরতা নির্ণয় (এমইপি), স্থাপত্য, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, ডিজেল জেনারেটর, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) এবং আলো স্থাপন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। শেওড়াপাড়া স্টেশনের একপাশে প্রস্থান/প্রবেশের জন্য এসকেলেটর স্থাপনের কাজ চলছে।
metro-2
মেট্রোরেল সংশ্লিষ্টরা জানান, মেট্রোরেল যেহেতু সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক, তাই কোনো জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করা হবে না। ফলে বায়ু দূষণের কোনো সুযোগ নেই। মেট্রোরেলের শব্দ এবং কম্পনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম হবে। এটি সামগ্রিক পরিবেশ দূষণে অবদান রাখবে না। পরিবেশগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া মেট্রোরেলের কোচগুলোর ভেতরে শিশু, গর্ভবতী নারী ও বয়স্ক যাত্রীদের জন্য বিশেষ আসন সংরক্ষিত থাকবে।
উল্লেখ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় মোট ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল ও কমলাপুর পর্যন্ত এমআরটি-৬ নামে পরিচিত এ রুটটি সবার আগে চালু হচ্ছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এ মাসেই চালু হচ্ছে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ ২০২৩ সালে চালুর কথা রয়েছে।
এরপর কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর এবং নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত লাইনের কাজ ২০২৪ সালে শুরুর কথা। এটি মেট্রোরেল লাইন-১ রুট নামে পরিচিত। কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত হবে পাতাল রেল। আর নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত অংশ আবার উড়াল পথে। সাড়ে ৫২ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ ২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা দেরি হতে পারে বলে মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
আর আগামী বছরের ডিসেম্বরে এমআরটি লাইন-৫ এর উত্তরের রুটের কাজও শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এই রুট সাভারের হেমায়েতপুর থেকে শুরু হয়ে গাবতলী, মিরপুর ও গুলশান হয়ে ভাটারা এলাকায় গিয়ে শেষ হবে।