April 20, 2024
জাতীয়

মৃত্যুপুরীতে পরিণত চকবাজার

 

* একুশের রাতে আগুনে পুড়ে ৬৭ জনের মৃত্যু, আহত অর্ধশত

* রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শোক * তদন্ত কমিটি গঠন

* আহতদের চিকিৎসার ভার বহন করবে সরকার

 

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

একুশে ফেব্রুয়ারির রাতে রাজধানীর চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। দাঁড়িয়েছে। বুধবার দিবাগত রাত পৌণে ১১টার দিকে পুরান ঢাকার চকবাজারের নন্দকুমার সড়কের চুড়িহাট্টায় একটি ভবনে আগুন লাগে। ওই ভবনের দোতলায় রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম থাকায় ভবনটিতে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অগিকান্ডে দগ্ধ হয়ে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৬৮ জন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়। আহতদের মধ্যে ৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

স্থানীয় ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে চকবাজারের নন্দকুমার দত্ত সড়কের চুড়িহাট্টা মসজিদ গলির রাজ্জাক ভবন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে তা আশপাশের ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের এক এক করে ৩৭টি ইউনিটের প্রায় ২০০ কর্মী ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। কিন্তু ছোট গলি ও পানি স্বল্পতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রচণ্ড বেগ পেতে হয়। কারণ সরু গলি হওয়ার ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। তাই চকবাজার থানার সামনে গাড়ি রেখে সেখান থেকেই পাইপের মাধ্যমে পানি নেওয়া হয়। এ ছাড়া আশপাশের ভবনের পানির ট্যাংক থেকেও পানি সংগ্রহ করে ফায়ার সার্ভিস। পরে রাত ৩টায় একবার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে খবর দিলেও পড়ে আবার আগুন ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘ ১৪ ঘণ্টার চেষ্টায় সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে, কিন্তু ততক্ষণে চুড়িহাট্টা মোড় পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। ঘটনাস্থল থেকে আরাফাতসহ ৬৭ জনের পোড়া লাশ মর্গে পাঠান উদ্ধারকর্মীরা।

এর আগে আগুন লাগার পর রাত ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত পাশের প্রায় চারটি ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। চকবাজার এলাকার গ্যাসলাইন থেকেও ওই সময় আগুন বের হচ্ছিল। অগ্নিকাণ্ডের পর ওই এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে থেমে থেমে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছিল।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহম্মেদ খান বলেন, ‘আগুন ওই এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারসহ আরো তিনটি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। দমকল বাহিনীর ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে রাত তিনটির দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।’

রাজধানীর অগ্নিকান্ডে হতাহতের ঘটনায় পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন, ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (অপারেশন এন্ড মেইনটেইনেন্স) দিলিপ ঘোষ, সহকারি পরিচালক সালাউদ্দিন আহমেদ ও উপ-সহকারি পরিচালক আবদুল হালিম।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ১২ সদস্য বিশিষ্ট অপর কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে অতিরিক্ত সচিব মো: মফিজুল হককে। এই কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্য দিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এদিকে অগ্নিকান্ডে প্রাণহানির ঘটনায় রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা.এনামুর রহমান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ও ডিএমপি’র কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়াসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, সরকার অগ্নিকান্ডে আহতদের চিকিৎসার খরচ বহন করবে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *