মুজিব বর্ষের নামে চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তার ৩
চট্টগ্রাম নগরীর নন্দনকানন ও আগ্রাবাদ এলাকায় মুজিব বর্ষের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শনিবার দুপুরে নগরীর কোতোয়ালী থানায় সংবাদ সম্মেলন করে তাদের গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশ। শুক্রবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা নিজেদের যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অনুসারী বলে দাবি করেছেন।
তবে পুলিশ বলছে, বাবর দেশে না থাকায় তার ‘নাম ভাঙিয়ে’ এই ব্যক্তিরা চাঁদাবাজি করছিলেন। মূলত তারা নেশাগ্রস্ত। নেশার টাকা যোগাড়ের জন্যই তারা চাঁদাবাজি করে।
‘একতা যুব সংঘ’ ও ‘স্বপ্ন চূড়া’ নামের দুটি সংগঠনের নাম দিয়ে গত চার মাস ধরে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মুজিব বর্ষের কথা বলে তাদের চাঁদাবাজির প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে উদ্ধার করা এই দুই সংগঠনের নামের প্যাডে দেখা গেছে, সর্বনিম্ন পাঁচশ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা তুলেছে তারা।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- নন্দনকানন তিন নম্বর গলির বাসিন্দা বাটুল বড়ুয়া ডানো (৩৮), নন্দনকানন দুই নম্বর গলির বাসিন্দা শেখ রিয়াজ আহম্মেদ রাজু (৪০) এবং হেম সেন লেনের বাসিন্দা শাহজাহান (৪৫)।
এই চক্রের অন্য দুই সদস্য লিটন এবং চান্দু ওরফে রনিকে খুঁজছে পুলিশ।
শনিবার দুপুরের সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ বলেন, “গত কয়েকদিন ধরেই আমাদের কাছে অভিযোগ আসছিল মুজিব বর্ষের নাম দিয়ে একটি অসাধু চক্র ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি করছে।
“পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে আমরা এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াই। এরমধ্যে ৪ মার্চ পাঁচ সদস্যের এই চক্রটি নন্দনকানন এলাকায় এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে এবং না দিলে মারধর ও ব্যবসা করতে না দেয়ার হুমকি দেয়।”শুক্রবার চাঁদার টাকা নিতে নন্দনকানন এলাকার সানমার ভবনের ‘থ্রিএ হোম স্কেচ’ নামের ওই প্রতিষ্ঠানে আসবে বলে হুমকি দিয়ে যায় চক্রের সদস্যরা।
এ তথ্য জানতে পেরে পুলিশ শুক্রবার বিকেলে ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে অবস্থান নেয়।
পরে তারা চাঁদারা টাকা নিতে আসলে রাজু ও শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান কোতোয়ালী থানার ওসি মো. মহসীন।
তিনি বলেন, “অন্য তিনজন পালিয়ে গেলে আগ্রাবাদ এলাকা থেকে বাটুল বড়ুয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
গ্রেপ্তারদের মধ্যে বাটুল বড়ুয়া নিজেকে এনায়েত বাজার ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি বলে দাবি করেন।
প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা শাহ মো. আব্দুর রউফ বলেন, “রেজিস্ট্রেশনবিহীন দুটি সংগঠন স্বপ্ন চূড়া ও একতা সংঘের নামে তাদের চাঁদাবাজির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
“মূলত তারা নেশাগ্রস্ত। নেশার টাকা যোগাড় করতে বিভিন্ন উপলক্ষ্যে রাজনৈতিক সংগঠনের নাম ব্যবহার করে এসব করছে। যুবলীগের ওয়ার্ড ভিত্তিক কোনো কমিটি নেই। চাঁদাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।”
শাহ মো. আব্দুর রউফ বলেন, “যুবলীগ নেতা বাবরের নাম ভাঙিয়ে তারা ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা চেয়েছে। আপনারা জানেন, বাবর দেশে নেই। সেই সুযোগেই হয়ত এরা তার নাম ভাঙিয়ে, বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয় দেয়ার চেষ্টা করছে। আদৌ জড়িত থাকলে কেউই বাদ যাবে না (আইনগত ব্যবস্থা থেকে)।”
মুজিব বর্ষের নাম করে শহরে এরকম চাঁদাবাজির আরও গ্রুপ সক্রিয় আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, হয়ত বিভিন্ন গ্রুপ থাকতে পারে। কেউ চাঁদাবাজির চেষ্টা করলে পুলিশকে জানান। অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
“মুজিব বর্ষকে কেন্দ্র করে কেউ যেন ইমেজ সংকট করতে না পারে সেজন্য আমরা সচেষ্ট আছি।”
গ্রেপ্তার তিনজন ও পলাতক দুই জনের বিরুদ্ধে থ্রিএ স্কেচ হোম নামের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চাঁদাবাজির মামলা করা হয়েছে।
ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিনজনকে শনিবার বিকালে আদালতে হাজির করা হবে।