April 24, 2024
জাতীয়

‘মামলার কারণে জামায়াত নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না’

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আদালতে মামলা থাকার কারণে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীকে সরকার নিষিদ্ধ করতে পারছে না। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নে এই উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, নিবন্ধনের মতো আদালতের রায়েই জামায়াত নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। আদালতের আদেশে জামায়াতের নিবন্ধন নির্বাচন কমিশন বাতিল হওয়ায় দলটি কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। তবে দল হিসেবে সক্রিয় রয়েছে।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিতদের দল জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়েও জামায়াতকে ‘ক্রিমিনাল’ সংগঠন বলা হয়েছিল। সংসদে তরীকত ফেডারেশনের সাংসদ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারির জামায়াত ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হবে কি না, জানতে সরকার প্রধানকে প্রশ্ন করেন।
জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখন জনমত এমনভাবে সৃষ্টি হয়েছে যে, জামায়াতকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের নিষিদ্ধ করবার জন্য কোর্টে ইতোমধ্যে একটা মামলা রয়ে গেছে। সেই মামলার রায়টা যতক্ষণ পর্যন্ত না হবে, সেখানে বোধহয় আমরা কোনো কিছু করতে পারি না। আমি আশা করি, কোর্টের রায় খুব শিগগিরই যদি হয়ে যায়, তাহলে জামায়াত দল হিসেবে নিষিদ্ধ হবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন পর্বেই তার বিরোধিতায় সক্রিয় ছিল জামায়াতসহ গুটিকয়েক দল। স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরুর পর বাঙালি নিধনে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করতে বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তোলে তারা। জামায়াতের উদ্যোগে তখন গঠিত হয়েছিল আল বদর বাহিনী, এই বাহিনীই বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে ভূমিকা রেখেছিল। ১৯৭১ সালের পর স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতের মতো ধর্মাশ্রয়ী দলগুলো নিষিদ্ধ হলেও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতা দখলের পর জিয়াউর রহমান তাদের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ করে দেন।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হয়ে জামায়াতের গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের বিষয়গুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই অপরাধের বিচার স্বাধীনতার পর জাতির পিতা শুরু করেছিলেন। জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সেই বিচার বন্ধ করে দেয়। তাদের (জামায়াতের) রাজনীতি করার সুযোগ দেয়, ভোটের অধিকার দেয়, যেটা সংবিধানে ছিল না।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হলে জামায়াতের শীর্ষনেতারা আটকা পড়েন। দলটির শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব নেতাই যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত হয়েছেন। সমালোচনার মধ্যেও জামায়াতকে এখনও জোটে রেখেছে বিএনপি। এবার বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সময় নিবন্ধন হারানো জামায়াতের নেতাদের ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করার সুযোগ করে দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, তবে এটা খুব ন্যক্কারজনক যে, যেখানে তারা নিবন্ধিত নেই সেই অবস্থায়ও নিজেরা জামায়াতে ইসলামী নামে বিএনপির সঙ্গে একযোগে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে, জোট করে তারা ধানের শীষ নিয়ে ভোট করেছিল।
নজিবুল বাশার মাইজভাণ্ডারি একাধিক মামলায় দণ্ড নিয়ে বিদেশে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর হবে কি না, তা জানতে চান।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ খুন করা থেকে শুরু করে মানি লন্ডারিং, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, গ্রেনেড হামলা, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ-এসব মামলায় যারা সাজাপ্রাপ্ত, যারা বিদেশে পলায়ন করে আছে; এমন পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনার জন্য ইতোমধ্যে আলোচনা চলছে। আমি বিশ্বাস করি, ইনশাল­াহ আমরা তাদেরকে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করতে পারব।
সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের কারণ তুলে ধরেন টানা তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে এদেশের আপামর জনসাধারণ বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে। এ বিজয় ছিল খুবই প্রত্যাশিত।
নির্বাচনের আগে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জরিপের ফলাফলেও আওয়ামী লীগের বিজয়ের পূর্বাভাস আসার কথা বলেন তিনি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের হারের কারণ হিসেবে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষের নির্বাচনী কোনো প্রস্তুতি বা কৌশল ছিল বলে মনে হয়নি।
ঐক্যফ্রন্টের পরাজিত হওয়ার পেছনে এক আসনে একাধিক প্রার্থী মনোয়ন, মনোয়ন বাণিজ্য, দূর্বল প্রার্থী মনোয়ন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন তার অনিশ্চয়তা, যুদ্ধাপরাধী জামাত নেতাদের মনোনয়নসহ বেশ কিছু কারণ উলে­খ করেন তিনি।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *