মানুষের প্রত্যাশা মিটে যাওয়ায় ভোটে আগ্রহ কম : ইসি সচিব
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
সংসদ নির্বাচনের পরের নির্বাচনগুলোয় ভোটের হার কমে যাওয়ার একটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তার ভাষ্য, জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হওয়ায় সরকার পরিবর্তনে মানুষের আগ্রহ কম, তার ফল হিসেবে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতিও কম।
ভোটার হার কমে যাওয়ায় অনেকের উদ্বেগের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহী কলেজ মিলনায়তনে রাজশাহী অঞ্চলের ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি উদ্বোধনকালে এ নিয়ে কথা বলেন হেলালুদ্দীন। উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার কম হওয়া নিয়ে সমালোচনার মধ্যে এর আগে ইসি সচিব বলেছিলেন, ভোটার বাড়লে অনিয়ম বাড়ত।
গত ডিসেম্বরে সব দলের অংশগ্রহণে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও তাতে অনিয়মের অভিযোগ তুলে তার পরের নির্বাচনগুলো বর্জন করছে বিএনপিসহ অধিকাংশ দল। এতে উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার দাঁড়ায় ৪১ শতাংশ, যেখানে দুই মাস আগে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৮০ শতাংশ। ভোটে মানুষের অনাগ্রহ গণতন্ত্রের জন্য অশনি সঙ্কেত বলে মন্তব্য এসেছে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর কাছ থেকে।
রাজশাহীর অনুষ্ঠানে হেলালুদ্দীন বলেন, পৃথিবীজুড়ে মানুষের ভোট দেওয়ার প্রবণতা ক্রমেই কমে আসছে। এর অন্যতম কারণ হল- কোনো সরকারের কাছে মানুষের যে প্রত্যাশা থাকে, সেটি যদি পূরণ হয়, তখন স্বাভাবিকভাবে মানুষের ভোট দেওয়ার আগ্রহ কমে যায়। প্রত্যাশা বেশি থাকলে সরকার পরিবর্তনে মানুষের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ বাড়ে।
কয়েকটি দেশের উদাহরণ টেনে ইসি সচিব জানান, বেলজিয়ামে ২৫ ভাগ মানুষ ভোট দেয়। আমেরিকার স্থানীয় ভোটে ৩৬ ভাগ ভোট পড়ে। ফ্রান্সে সাংবিধানিক বাধ্যবাধ্যকতার কারণে শতকরা ৫০ ভাগের কম ভোট হওয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দুই দফায় হয়েছে।
ইসি সচিব একথা বললেও নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছিলেন, বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের বর্জনের কারণে মানুষের আগ্রহ কমে গেছে।
দেশজুড়ে ৬৪ জেলার ১৩৫ উপজেলায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু হয় হয়েছে। ১৩ মে পর্যন্ত সব উপজেলায় এ কাজ চলবে। মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা ফরিদপুর অঞ্চলে, নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম চট্টগ্রাম অঞ্চলে, নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম সিলেট অঞ্চলে, নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ঢাকা অঞ্চলে ও ইসি সচিব রাজশাহী অঞ্চলের হালনাগাদ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন।
এছাড়া রংপুর অঞ্চলে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান, কুমিলা অঞ্চলে এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম, খুলনা অঞ্চলে ইসির যুগ্মসচিব কামালউদ্দিন বিশ্বাস, বরিশাল অঞ্চলে আবুল কাসেম ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে ফরহাদ আহাম্মদ খান কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন।
রাজশাহী কলেজ মিলনায়তনে ভোটারের ফরম পূরণ করিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে ইসি সচিব জানান, নির্বাচন না হলে গণতন্ত্র মজবুত রাখা যাবে না, অব্যাহত রাখা যাবে না। আর সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন জরুরি।
আমাদের কাজ হচ্ছে একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা। আপনারাও ভোটার হোন। ভোটার হলেই যে ভোট দিতে হবে, এমন নয়। পছন্দ না হলে ভোট দিবেন না। কিন্তু ভোটার আইডি কার্ড আপনার সব কাজে লাগবে। এটাই জাতীয় পরিচয়পত্র হিসেবে বিবেচিত হবে।
তিনি জানান, এখন দেশের ১০০টির মতো প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা নিতে জাতীয় পরিচয়পত্র লাগছে। আগামীতে এর আওতা আরও বৃদ্ধি পাবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে শুধু ভোট প্রদানের বিষয়টি জড়িত নয়। নাগরিক নানা সেবা এবং সুযোগ-সুবিধাও জড়িত। তাই জাতীয় পরিচয়পত্র সবার প্রয়োজন। সবাই জাতীয় পরিচয়পত্রের আওতায় এলে দেশে দুর্নীতি ও অপরাধ কমে আসবে।
রাজশাহী অঞ্চলের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাওগাতুল আলম, রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হবিবুর রহমান ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম।