April 20, 2024
আন্তর্জাতিক

মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকে ছাড়াচ্ছে বাংলাদেশ, সর্বত্র প্রশংসা

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই চলতি অর্থবছরে মাথাপিছু জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) ভারতকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে এ তথ্য জানানো হয়। এর পর থেকেই প্রশংসায় ভাসছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রগতির সঙ্গে ভারতের তুলনা করে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের সবশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি বেড়ে দাঁড়াবে ১ হাজার ৮৮৭ দশমিক ৯৭ মার্কিন ডলার, যা গতবছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি।

বিপরীতে, চলতি অর্থবছরে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি হবে ১ হাজার ৮৭৭ ডলার, যা গত অর্থবছরের তুলনায় অন্তত ১০ দশমিক ৩ শতাংশ কম।

মাথাপিছু জিডিপির হিসাবে কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে ছিল ভারত। কিন্তু ধারাবাহিক উন্নতির মাধ্যমে বাংলাদেশ সেই ব্যবধান দ্রুত কমিয়ে এনেছে।

বাংলাদেশের এমন অভাবনীয় সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেছে ভারতের গণমাধ্যমগুলো। দ্য ইকোনমিক টাইমস বলেছে, মধ্যবর্তী সময়কালে ভারতের সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ যখন ধীরে এগোচ্ছিল, সেই সময় বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।

পাঁচ বছর আগেও ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ছিল বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি। কিন্তু এই পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি বেড়েছে অন্তত ৯ দশমিক ১ শতাংশ হারে। বিপরীতে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ করে।

‘এটি দানবাকার প্রতিবেশীর সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবধান কমিয়ে এনেছে’, লিখেছে ভারতের বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকা।

অবশ্য আগামী অর্থবছরে মাথাপিছু জিডিপিতে বাংলাদেশের চেয়ে আবারও এগিয়ে যাবে ভারত। আইএমএফ জানিয়েছে, ২০২১ অর্থবছরে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ৮ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে হবে ২ হাজার ৩০ ডলার। তবে বাংলাদেশও খুব একটা পিছিয়ে থাকবে না। এদেশের মাথাপিছু জিডিপি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে হবে ১ হাজার ৯৯০ ডলার।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের তথ্যমতে, ২০০২ সালের পর থেকে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি আর কখনোই কমেনি। তবে ২০১২ সালে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি অন্তত এক শতাংশ কমে গিয়েছিল বলে জানিয়েছে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

বাংলাদেশের এমন অগ্রগতির সঙ্গে ভারতের তুলনা করে টুইট করেছেন কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি বলেছেন, ‘বিজেপির ঘৃণাভরা সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের ছয় বছরে কঠিন অর্জন। বাংলাদেশ ভারতকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।’

অবশ্য শুধু ভারতকে ছাড়ানোই নয়, চলতি অর্থবছরে মাথাপিছু জিডিপির হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ এবং গোটা এশিয়ার মধ্যে চতুর্থ হতে চলেছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে ভারতের পাশাপাশি চীনকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে তারা। এছাড়া, করোনা মহামারির মধ্যে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হবে গোটা বিশ্বের মধ্যে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে বলা হয়েছে, ২০২০ অর্থবছরে মাথাপিছু জিডিপির হিসাবে বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার আর মাত্র দু’টি দেশ- নেপাল ও ভুটানে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হবে।

এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে শুধু মিসর, তিমোর-লেস্ট ও তুর্কমেনিস্তানের। এক্ষেত্রে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের প্রবৃদ্ধি হবে ৩.০১ শতাংশ।

আফ্রিকার মধ্যে শুধু মালাউই এবং লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের শুধু গায়ানায় মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হবে।

এদিকে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) জানিয়েছে, গত অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ, যা এশিয়ার ৪৬টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এসময়ে ভারতের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে নয় শতাংশ এবং পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ০.৪ শতাংশ।

এডিবির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বাড়বে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ, যা হবে এ অঞ্চলের মধ্যে চতুর্থ সর্বোচ্চ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *