মাত্রাতিরিক্ত কালো ধোঁয়া ছড়ানো যানবাহন জব্দের নির্দেশ
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
যেসব যানবাহন নির্ধারিত মাত্রার বেশি কালো ধোঁয়া ছড়াচ্ছে সেগুলো জব্দের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। সেই সঙ্গে সড়ক পরিবহন আইনের বিধান অনুযায়ী প্রত্যেক যানবাহনের ‘ইকোনোমিক লাইফ’ নির্ধারণ করতে বলেছে আদালত। যেসব পরিবহনের ‘ইকোনোমিক লাইফ’র পেরিয়ে গেছে, সেসব বাহন নিষিদ্ধের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে আদেশে।
এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া টায়ার পোড়ানো বা ব্যাটারি রিসাইকেলিং বন্ধেও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। পরিবেশ অধিদপ্তরকে এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সেই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজিপুর ও মানিকগঞ্জে যেসব অবৈধ ইটভাটা এখনও বন্ধ করা হয়নি, সেগুলা বন্ধ করে দুই মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দিতে বলেছে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাই কোর্টে বেঞ্চ।
ঢাকার বায়ু দূষণ নিয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন এইচআরপিবি করা একটি রিটের সম্পূরক আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার এ আদেশ আসে।
ঢাকার বায়ুমান উন্নয়নে পরিবেশ অদিদপ্তর কী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং অধিদপ্তরে জনবল নিয়োগের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে আগামী ২ ফেব্রæয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপিরচালককে আদালতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।
আদালতে আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সাঈদ আহমদ রাজা ও তৌফিক ইনাম টিপু। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
আদেশের পর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকার বায়ু দূষণ বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এ কারণে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে জনস্বার্থে একটি রিট আবেদন করেছিল এইচআরপিবি।
সেই প্রেক্ষিতে আদালত পানি ছিটানো ও ধুলাবালি কমানোর বিষয়ে দুটো নির্দেশনা দিয়েছিল। সে অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে রোববার দুটি বাস্তবায়ন পতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়।
আমরা বলেছি, এখন পর্যন্ত বায়ূ দূষণে আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছি। এটা নিয়ন্ত্রণে কিছু পদক্ষেপ দরকার। সে জন্য সম্পূরক আবেদনে ১২ দফা নির্দেশনা চেয়ছিলাম। তার মধ্যে আদালত নয়টি নির্দেশনা দিয়েছে।
আদালত বলেছে, ঢাকায় যেসব ট্রাক বালি, ময়লা ও বর্জ্য পরিবহন করবে, সেগুলো যাতে ঢাকা থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। নির্মাণ এলাকায় বালি, সিমেন্ট মাটিসহ নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।
সিটি করপোরেশনের যেসব এলাকায় পানি ছিটানো হয়নি সেসব এলাকাসহ ধুলোবালিপ্রবণ এলাকায় নিয়মিত পানি ছিটাতে হবে। আইন ও দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী উন্নয়ন ও নির্মাণ কাজ নিশ্চিত করতে হবে।
দোকান বা মার্কেটে দিনের ময়লা-আবর্জনা বিন বা ছালায় জমা রাখতে হবে। দোকান বা মার্কেট বন্ধ করার সময় মালিকরা তা সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত জায়গায় ফেলার ব্যবস্থা করবেন। এ বিষয়টি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
গত বছরের ২৬ নভেম্বর ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশের এলাকায় বায়ু দূষণের কারণ ও দূষণ রোধে একটি অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের জন্য পরিবেশ সচিবের নেতৃত্বে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠণের নির্দেশ দেয়।
এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলার অবৈধ ইটভাটা ১৫ দিনের মধ্যে বন্ধেরও নির্দেশ দেওয়া হয়। ৫ জানুয়ারি পরবর্তী আদেশের জন্য রেখে বিবাদীদের এর মধ্যে নির্দেশনা বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দিতে বলে হাই কোর্ট।
এর ধারাবাহিকতায় পরিবেশ সচিব এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে রোববার আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। আর সোমবার রিট আবেদনকারী পক্ষ ১২ দফা নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক আবেদন করে। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত ৯ দফা নির্দেশনা দিল। আগামী ১ মার্চিএ মামলা পরবর্তী আদেশের জন্য রাখা হয়েছে।