May 19, 2024
জাতীয়

ভ্রাম্যমাণ আদালতে শিশুদের দÐ দেওয়া অবৈধ : হাইকোর্ট

 

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

ভ্রাম্যমাণ আদালতে শিশুদের দÐ দেওয়া অবৈধ ঘোষণা করেছে হাই কোর্ট। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শিশুদের দেওয়া দÐ ও আটকাদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- সেই প্রশ্ন রেখে গতবছর অক্টোবরে রুল জারি করেছিল হাই কোর্ট। সেই রুলের ওপর শুনানি শেষে গতকাল বুধবার তা যথাযথ ঘোষণা করে হাই কোর্ট রায় ঘোষণা করল।

ওই ১২১ শিশুর মধ্যে এখনও যাদের মুক্তি দেওয়া হয়নি, তারা অন্য কোনো অপরাধে জড়িত না থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের মুক্তি দিতে বলা হয়েছে রায়ে। রাষ্ট্রপক্ষে এদিন আদালতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। ভ্রাম্যমাণ আদালতে দÐিত শিশুদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল হালিম ও ইশরাত হাসান।

রায়ে বলা হয়েছে, শিশুদের এভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দÐ দেওয়া কেবল অবৈধ আর বেআইনিই নয়, ‘চূড়ান্ত মাত্রার অমানবিকতা’। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলার বিচার হবে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে। সেখানে বিচারক হবেন কমপক্ষে অতিরিক্ত জেলা জজ পদমর্যাদার একজন বিচারক। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট।

১২১ শিশুর মধ্যে কোনো কোনো শিশুকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দেওয়া দÐ দেওয়া হয়েছে। এই সাজা দেওয়ার মাধ্যমে এক ধরনের প্যারালাল বিচারিক ব্যবস্থা দাঁড় করানো হয়েছে; যা প্রচলিত আইন এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থি।

আদালত রায়ে বলেছে, যে শিশুদের (১২১ শিশু) দÐ দেওয়া হয়েছে, আজ এই রায়ের মাধ্যমে তারা যে পুরোপুরি নিরাপরাধ সেটা প্রমাণিত হল। আগামীতে এসব শিশুর ব্যক্তি জীবনে এই দÐের কোনো প্রভাব যেন না পড়ে।

‘আইনে মানা, তবু ১২১ শিশুর দÐ’ শিরোনামে দৈনিক প্রথম আলোর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখে গত বছর ৩১ অক্টোবর বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের হাই কোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেয়।

প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে এনেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল হালিম ও ইসরাত হাসান। আদালত সেদিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শিশুদের দেওয়া দÐ ও আটকাদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করে।

স্বরাষ্ট্র, আইন, জনপ্রশাসন, সমাজকল্যাণ, নারী ও শিশু, র‌্যাবের মহাপরিচালক, টঙ্গী-যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত¡াবধায়ক, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, র‌্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম, র‌্যাব-৩ টিকাটুলীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আক্তারুজ্জামান, র‌্যাব-৪ মিরপুর-১ এর আইন কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজাম উদ্দিন আহমেদসহ বিবাদিদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

এছাড়া ভ্রম্যমাণ আদালতে দÐিত যশোর ও টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে অন্তরীণ ১২ বছরের কম বয়সীদের অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট শিশু আদালতের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে ১৩ থেকে ১৮ বয়সী শিশুদের ৬ মাসের জামিন দিতে বলা হয়। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত যেসব মামলায় শিশুদের দÐ দিয়েছে, সেসব মামলার নথি আলাদাভাবে হাই কোর্টে দাখিল করাতে বলা হয় সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে।

প্রথম আলোর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশু আইনে স্পষ্ট বলা আছে, অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, অপরাধে জড়িত থাকা শিশুর বিচার শুধু শিশু আদালতেই হবে। অথচ ভ্রাম্যমাণ আদালত শিশুদের দÐ দিয়ে চলেছেন।

টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দÐিত ১২১ শিশুর সন্ধান পাওয়ার কথা উল্লেখ করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এরা তিন মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত মেয়াদে কারাদÐ ভোগ করছে।

শিশু আইনের পাশাপাশি হাই কোর্টের একাধিক রায়েও বলা হয়েছে, শিশুর বিরুদ্ধে যে কোনো অভিযোগের বিচার শুধু শিশু আদালতেই হতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত দূরের কথা, অধস্তন আদালতের কোনো বিচারক শিশুদের বিচার করলেও তা হবে বেআইনি।

রায়ের পর আইনজীবী আব্দুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, আদালত বলেছে, কোনো শিশুকে ভ্রাম্যমাণ আদালত দÐ দিতে পারবে না। কারণ ভ্রাম্যমাণ আদালত কোনো শিশুকে দÐ দিলে সেই দÐ সংবিধানের ৩০, ৩৫ অনুচ্ছেদের মৌলিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হবে। এই ১২১ শিশুকে দÐ দেওয়ার ক্ষেত্রেও তাদের মৌলিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *