January 19, 2025
আন্তর্জাতিককরোনা

ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজে অন্যদের চেয়ে ‘কম সুরক্ষিত’ ক্যান্সার রোগীরা

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ফাইজারের উৎপাদিত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেয়ার পর একজন ক্যান্সার রোগী অন্যদের তুলনায় ‘অনেক কম সুরক্ষিত’ অবস্থায় থাকেন। কিংস কলেজ লন্ডন ও ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে এক গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। খবর বিবিসির।

যুক্তরাজ্যে দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য ১২ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়, আর এই সময়ের মধ্যে একজন ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা বেশ নাজুক হয়ে পড়তে পারে

গবেষণায় দেখা গেছে, দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন যদি তাড়াতাড়ি দেয়া যায়, তাহলে ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে পারে।

করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের বিষয়ে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের ওপর গবেষণা চালিয়ে এ ধরনের গবেষনা এটিই প্রথম।

ব্রিটেনে স্তন ক্যান্সার সংক্রান্ত দাতব্য সংস্থা ইতোমধ্যেই ভ্যাকসিন দেয়ার নীতিমালা পর্যালোচনার আহ্বান জানিয়েছে।

কিন্তু ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে বলছে, এই গবেষণাটি এখনো অন্য বিজ্ঞানীরা নিরীক্ষা করে তাদের মতামত দেননি। একই সঙ্গে যাদের ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছে তাদের নিজেদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।

যুক্তরাজ্যে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমের প্রথম ধাপে দেশটির প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ যারা করোনায় আক্রান্ত হলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
এদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার রোগীও রয়েছেন।

ডিসেম্বরের শেষদিকে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণের মধ্যবর্তী সময়সীমা তিন সপ্তাহ থেকে বাড়িয়ে ১২ সপ্তাহে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। এর পেছনে কারণ ছিল যাতে এই সময়ের মধ্যে আরো বেশি সংখ্যক মানুষকে প্রয়োজনীয় সুরক্ষার আওতায় আনা সম্ভব হয়।

কিংস কলেজ লন্ডনের গবেষণাটির অন্যতম প্রধান ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. শিবা ইরশাদ বলেছেন, গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল ‘রীতিমত উদ্বেগজনক’ এবং ক্লিনিক্যালি নাজুক অবস্থায় থাকা ব্যক্তিদের স্বার্থে দ্রুত ভ্যাকসিন নীতিমালায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘তার আগ পর্যন্ত, এটা নিশ্চিত করা জরুরী যে ক্যান্সার রোগীরা ভ্যাকসিন নেয়ার পরেও সব ধরণের স্বাস্থ্য বিধি, যেমন সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে মেনে চলবেন এবং হাসপাতালে যখন যাবেন পুরোপুরি সুরক্ষা নিয়ে যাবেন।’

গবেষণায় যা দেখা গেছে

গবেষণায় ২০৫ জন ক্যান্সার রোগী অংশ নিয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৫১ জন ফুসফুস, স্তন এবং পাকস্থলীর ক্যান্সারের মত কঠিন ক্যান্সারে আক্রান্ত। প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নেয়ার তিন সপ্তাহ পরে দেখা গেছে, কঠিন ক্যান্সারে আক্রান্তদের ৩৯ শতাংশ রোগী সুরক্ষিত আছেন।

ব্লাড ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র ১৩ শতাংশ সুরক্ষিত আছেন। আর ক্যান্সার নেই এমন মানুষদের ৯৭ শতাংশ সুরক্ষিত আছেন।

প্রথম ডোজ নেয়ার তিন সপ্তাহ পরে যাদের দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে কিছু ক্যান্সার রোগী ছিলেন, দেখা গেছে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু যাদের দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে তাদের তেমন সুরক্ষা ছিল না।

গবেষকরা স্বেচ্ছাসেবকদের রক্তে অ্যান্টিবডি এবং টি-সেল পরীক্ষা করেন, যা থেকে বোঝা যায় ভবিষ্যতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হলে তা ঠেকাতে শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে কি না।
পরীক্ষামূলকভাবে ফাইজারের ভ্যাকসিন প্রয়োগের সময় তিন সপ্তাহের ব্যবধানে দুই ডোজ টিকা দেয়া হয়েছিল।

তবে পুরোপুরি সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে দুই ভ্যাকসিনের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান বাড়লে সমস্যা নেই। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি এভাবে কাজ করে না।

ডা. ইরশাদ বলেন, ‘ক্যান্সারের চিকিৎসা প্রক্রিয়া এমনিতেই মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে, সেই সঙ্গে ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে। সে কারণে সতর্কতা দরকার।’

তিনি বলেন, এজন্যই এসব রোগীদের দ্বিতীয় ডোজ তাড়াতাড়ি দেয়া প্রয়োজন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *