ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানও মুছে ফেলা হয়েছিল : প্রধানমন্ত্রী
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
স্বাধীনতা সংগ্রামের মত ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে ইতিহাস থেকে ‘সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলা হয়েছিল’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার জার্মানির মিউনিখে প্রবাসী বাংলাদেশীদের এক ‘নাগরিক সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য কি জানেন, ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে যেমন খুব চালাকির সাথে মুছে ফেলা হয়েছিল। ঠিক একইভাবে স্বাধীনতা অর্জনে তার যে অবদান সেটাও কিন্তু একসময় মুছে ফেলা হয়েছিল। এমনকি বঙ্গবন্ধুর নাম নেয়াটাও যেন একটা অপরাধ- এরকম একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সাল থেকেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র।
আমাদের ভাষা আন্দোলনে, রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা অর্জনের ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর যে অবদান রয়েছে সে অবদানের কথা সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তখনকার পাকিস্তানি গোয়েন্দা নথিতেও এসব তথ্য রয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বন্দি অবস্থাতেই তিনি যখন আদালতে বা হাসপাতালে আসতেন তখনই কিন্তু নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং নির্দেশনা দিতেন।
বার্লিনের বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে একাদশ সংসদ নির্বাচন, তাতে বিএনপির ভারাডুবি এবং দেশের উন্নয়নসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ভোটের আগে সংলাপে অংশ নেওয়া সব রাজনৈতিক দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে প্রত্যেকটা দলেরই কিন্তু অংশগ্রহণ রয়েছে। এত বিশাল আকারে অংশগ্রহণ অতীতে কখনো দেখা যায়নি।
এবারের নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোট পড়ার তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নির্বাচনে একেবারে গ্রাম থেকে শুরু করে শহরে, সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ভোট দিয়েছে। এমনকি ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসে তারা আমাদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে যেটা অতীতে কখনো হয়নি। তাছাড়া সকল শ্রেণি-পেশার মানুষই। কেন ভোটটা তারা আওয়ামী লীগে দিল? দিয়েছে একটাই কারণ। তারা অতীতেও (আওয়ামী লীগকে) দেখেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে তারেক রহমানের দুর্নীতিতে দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং বিএনপি শাসনামলে দেশের দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদের বিস্তারের কথাও শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মানুষ কেন তাদের ভোট দেবে সেটাই প্রশ্ন। জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া, ভোটে জিতলে প্রধানমন্ত্রী কে হবে তা নির্ধারণ না করা এবং ‘মনোনয়ন বাণিজ্যের’ কারণেও জনগণ বিএনপিকে ভোট দেয়নি বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
বিএনপি ‘পরাজিত হবে’ জেনে নির্বাচনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ করতে চেয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনের সবচেয়ে উলেখযোগ্য দিক হল সারাদেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছে।
ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তার সরকারের সময় আকাশ, সড়ক, নৌ ও রেলপথের উন্নয়নের কাজ চলছে। আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে আর কেউ কখনো পিছিয়ে দিতে পারবে না।
প্রবাসীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের যতটুকু অর্জন তার পেছনে প্রবাসীদের বিরাট অবদান রয়েছে। এ অবদান শুধু রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেই না, এ অবদান অর্থনৈতিক উন্নয়নেরও ক্ষেত্রেও। হোটেল শেরাটনে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে মিউনিখে জড়ো হন প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
শেখ হাসিনা বলেন, যেসব জায়গায় বাঙালি আছে কিন্তু সংগঠন নেই, সেব জায়গাতেও সংগঠন করতে হবে। জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদের সঞ্চালনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে জার্মানির মিউনিখে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।
গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটাই শেখ হাসিনার প্রথম বিদেশ সফর। শুক্রবার সকালে নিরাপত্তা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ওপর তিনি আলোচনায় অংশ নেবেন। ছয় দিনের এই সফরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে একটি প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতেও তিনি যোগ দেবেন। দেশ দুটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও তিনি অংশ নেবেন। সফর শেষে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২০ ফেব্র“য়ারি ঢাকা ফিরবেন শেখ হাসিনা।