May 18, 2024
আন্তর্জাতিক

ব্রাজিলের করোনা নিয়ন্ত্রণে ‘ব্যর্থতা’ গোটা বিশ্বের জন্য হুমকি

ব্রাজিলে সিনেটর সার্জিও অলিম্পিও গোমেজ বা মেজর অলিম্পিও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন গত ১৮ মার্চ। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মারা যাওয়া দেশটির তৃতীয় সিনেটর তিনি। ইতোমধ্যে ব্রাজিলিয়ান পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের প্রায় চার শতাংশ আইণপ্রণেতাই বৈশ্বিক এই মহামারির ভুক্তভোগী হয়েছেন। এর ফলে সেখানকার রাজনৈতিক অঙ্গনে বড়সড় একটি ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

ব্রাজিলে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে, যা প্রথমটির চেয়েও ভয়াবহ। সেখানে দৈনিক গড়ে ২ হাজার ৩০০ জন মারা যাচ্ছেন, যা করোনায় বৈশ্বিক মৃত্যুর প্রায় এক-চতুর্থাংশ। সংক্রমণের চাপে ভেঙে পড়তে বসেছে ব্রাজিলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। দেশটির ২৭টি রাজ্যের মধ্যে ২৫টিতেই আইসিইউ বেড ৮০ শতাংশ পূরণ হয়ে গেছে। ১৮টি রাজ্যে অত্যাবশ্যক ওষুধের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। ছয়টি রাজ্যে অক্সিজেন সরবরাহ বিপজ্জনকভাবে কমে গেছে।

দেশটিতে মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে পি১ নামে করোনাভাইরাসের একটি নতুন ধরন বেশি দায়ী বলে ধরা হচ্ছে। ধারণা করা হয়, অ্যামাজন সংলগ্ন মানাউস শহরে সৃষ্ট ধরনটি আগেরটির চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক এবং ইতোপূর্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদেরও সংক্রমিত করতে পারে। এটি প্রতিরোধে অনেকটা কম কার্যকারিতা দেখিয়েছে বেশ কিছু ভ্যাকসিনও।

পি১-এর জন্য শুধু ব্রাজিলই নয়, হুমকিতে পড়েছে গোটা বিশ্ব। ইতোমধ্যে ৩৩টি দেশে শনাক্ত হয়েছে করোনার এই ধরনটি। সংক্রমণ আটকাতে ব্রাজিলের প্রতিবেশী দেশগুলো সীমান্ত বন্ধ করে দিচ্ছে। পেরু ও কলম্বিয়া ব্রাজিলের সঙ্গে সরাসরি প্লেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। নতুন করে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর ব্রাজিলিয়ানদের শীর্ষ ১০টি গন্তব্য দেশের মধ্যে বর্তমানে সচল রয়েছে মাত্র দুটি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস সম্প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ব্রাজিল সতর্ক না হলে এটি তাদের প্রতিবেশী তো বটেই, এর বাইরেও ক্ষতি অব্যাহত রাখবে।

অথচ এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যেও ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারো হাঁতুড়ে চিকিৎসার পক্ষে কথা বলছেন, লকডাউনের বিপক্ষে সমাবেশ করছেন, সংক্রমণের তথ্যপ্রকাশ বন্ধের চেষ্টা করছেন। মতের মিল না হওয়ায় করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এপর্যন্ত অন্তত তিনজন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ছাঁটাই করেছেন তিনি। এমনকি ফাইজার-জনসনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ব্রাজিলে ট্রায়াল চালানোর পরেও ভ্যাকসিন পাওয়ার চেষ্টায় গড়িমসি করেছে তার সরকার।

তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয়াবহতা দেখে ব্রাজিলের মানুষজনের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। সেখানকার গভর্নর ও মেয়ররা কড়াকড়ি আরোপ করছেন, স্থানীয় লোকজনও আগের চেয়ে সেসব আদেশ বেশি মানছেন।

গত ২২ মার্চ থেকে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বাহিয়ায় রাত ১০টার বদলে সন্ধ্যা ৬টা থেকেই রাত্রিকালীন কারফিউ জারি হচ্ছে। সেখানকার জনগণও চলাচল প্রায় অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলে করোনা সংক্রমণের গতি কমে এসেছে। রাজ্যটিতে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ২১ হাজার থেকে কমে ১৭ হাজারে দাঁড়িয়েছে। গত ১২ মার্চ যেখানে আইসিইউ বেডের অপেক্ষায় ছিলেন অন্তত ৫১৩ জন রোগী, মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে তা কমে ২৮০তে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া চলতি মাসে ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় সরকার ফাইজার ও জনসনের ভ্যাকসিন কিনতে পূর্ণ সম্মতি দিয়েছে। দেশটিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও চীনের করোনাভ্যাকের পাশাপাশি ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাকসিনও বিতরণ করা হবে। ব্রাজিল নিজেও ভ্যাকসিনের উৎপাদন শুরু করেছে। রিও ডি জেনিরোভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ফিওক্রাজ তাদের উৎপাদিত অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের প্রথম চালান দেশটির সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে। আর সাও পাওলোর বুটানটান ইনস্টিটিউট করোনাভ্যাকের উৎপাদন শুরু করেছে। এর ফলে সেখানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আশাবাদী হয়ে উঠছেন বিশেষজ্ঞরা।

এরপরও সংশয়ের কারণ হিসেবে থেকে যাচ্ছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নিজেই। তিনি বরাবরই সামাজিক দূরত্বের ঘোরতর বিরোধী। লকডাউন জোরদার করায় সম্প্রতি তিনটি রাজ্যের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও করেছেন এ নেতা। তার এসব কর্মকাণ্ড ব্রাজিলের জন্য যেমন হুমকি, তেমনি সারা বিশ্বের জন্যেই বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *