May 8, 2024
Uncategorizedখেলাধুলালেটেস্ট

ব্যাটিং–ধসে ভারতের কাছে হার, তবু সিরিজ জয়ের আশা বাংলাদেশের

এটাকে জেমিমা রদ্রিগজের ম্যাচ তো বলাই যায়। ৮৬ রানের ঝলমলে ইনিংসের পর বল হাতে ৪ উইকেট—বাংলাদেশ নারী দলকে জেমিমা একাই হারিয়ে দিয়েছেন আসলে। তাঁর দাপুটে পারফরম্যান্সেই ভারতীয় নারী দল জিতেছে ১০৮ রানে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ আপাতত ১-১ সমতা।

নিগার সুলতানাদের কাজটা কঠিন হয়ে যায় প্রথম ইনিংসেই। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের স্পিন–সহায়ক উইকেটে ভারতীয় নারী দল ৮ উইকেটে ২২৮ রান তুলে ফেলে। জেমিমার ৮৬ তো ছিলই, তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর। দুজনের ৭৩ রানের জুটিতে চ্যালেঞ্জিং স্কোর পেয়ে যায় অতিথিরা।

বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং ব্যর্থতায় ভারতীয়রা ম্যাচটা জিতেছে হেসেখেলেই। তাড়া করতে নেমে ওপেনার মুর্শিদা খাতুন দুটি স্কয়ার ড্রাইভ ও একটি লফটেড ড্রাইভে বাউন্ডারি মেরে দারুণ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাঁর ইনিংসটা দীর্ঘ হয়নি। ১২ রান করেই মেঘনা সিংয়ের বলে লফটেড ড্রাইভ করতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।

আরেক ওপেনার শারমিন আক্তার এলবিডব্লিউ হয়েছেন মাত্র ২ রান করে, অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মার ফুল লেংথের বলে সুইপ করতে গিয়ে। চারে নামা লতা মণ্ডল ৯ রান করে ফিরেছেন স্নেহ রানার বলে বোল্ড হয়ে।

এরপর কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে বাংলাদেশ। তিনে নামা ফারজানা হক ও রিতু মনি মিলে তোলেন ৯২ বলে ৬৮ রান। মন্থরগতিতে এগোলেও এই জুটি থাকার সময় তবু কিছুটা আশা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু দলকে ১০৬ রানে রেখে ফারজানা আউট হওয়ার পরই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের বাকি ইনিংস।

দেবিকা বৈদ্যর বলে ক্রিজ ছেড়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন ফারজানা। ৮১ বলে করা তাঁর ৪৭ রানই বাংলাদেশ ইনিংসের সর্বোচ্চ। এরপর ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রীত অনিয়মিত বোলার জেমিমার হাতে বল তুলে দিলেই ম্যাচের ছবিটা পাল্টে যায়।

জেমিমার বলে ক্রিজ ছেড়ে খেলতে গিয়ে আউট হন রিতু মনিও (৪৬ বলে ২৭ রান)। নিগার ও নাহিদা আক্তারকে ফিরিয়েছেন জেমিমা। অন্য প্রান্ত থেকে বৈদ্যর শিকার রাবেয়া খান ও সুলতানা খাতুন। ১৪ রানের মধ্যেই ৭ উইকেট হারিয়ে ১২০ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।

৩.১ ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন জেমিমা, যেটি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তাঁর সেরা বোলিং। এর আগে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে জেমিমার উইকেট ছিল মাত্র ২টি।  বৈদ্য ৮ ওভারে ৩০ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট।

ভারতের ইনিংসের শুরুটাও ছিল অনেকটা বাংলাদেশের মতো। মারুফা আক্তার আজও ইনিংসের শুরুতে ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন দুর্দান্ত এক ইনসুইংয়ে। প্রিয়া পুনিয়া (৭) ক্রিজের অনেকটা বাইরে স্টান্স নিয়েও বলের সুইং বুঝতে পারেননি। তিনে নামা যস্টিকা ভাটিয়াকেও (১৫) রান আউট করেন মারুফা। জোড়া উইকেট হারিয়ে ভারত যখন ধুঁকছিল, তখন এক প্রান্ত সামলে রাখার দায়িত্ব নেন স্মৃতি মান্ধানা। রাবেয়া খানের লেগ স্পিনে বোল্ড হওয়ার আগে তিনি করেন ৫৮ বলে ৩৬ রান।

বাকি কাজটা করেছেন হারমানপ্রীত ও জেমিমা। ভারত অধিনায়কের ব্যাট থেকে এসেছে ৮৮ বলে ৫২ রান। জেমিমার ৮৬ রান এসেছে ৭৮ বলে, ১১০ স্ট্রাইক রেটের সে ইনিংসই ভারতীয়দের এগিয়ে নেয়। নাহিদা আক্তারের সৌজন্যে শেষের দিকে রানের গতি কমে এলেও ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২২৮ রান ভারতীয়দের জেতার মঞ্চ গড়ে দেয়।

খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে বড় ব্যবধানে হারের জন্য নাহিদা বারবার নিজেদের বোলিংকেই দুষলেন, ‘আমাদের যেহেতু বোলিংই শক্তি, আমাদের আরেকটু ভালো করা উচিত ছিল।’ আক্ষেপ আছে বাংলাদেশ দলের মিডল অর্ডার ব্যাটারদের পারফরম্যান্স নিয়েও, ‘আজ একটা পর্যায়ে মোমেন্টাম কিন্তু আমাদের পক্ষেই ছিল। কিন্তু আমরা সেটা কাজে লাগাতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা, দ্রুত উইকেট হারিয়ে ফেলি।’

সিরিজ জয়ের আশা হারাচ্ছেন না নাহিদা। ২২ জুলাই সিরিজের শেষ ম্যাচ। সেটা জিতেই প্রথমবারের মতো ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের আশা তাঁর, ‘আমরা মানসিকভাবে শক্ত আছি। আজ হয়নি। শেষ ম্যাচে আমরা সিরিজ জয়ের জন্যই খেলতে নামব।’

ক্রিড়া ডেস্ক

শেয়ার করুন: