বিশ্বের কাছে দ্রুততার সঙ্গে সঠিক বিচারের প্রমাণ : আইনমন্ত্রী
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
প্রায় সাড়ে তিন বছর আগের গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ২২ জনকে হত্যার ঘটনার বিচার শেষে সাত আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায়কে দ্রুততার সঙ্গে সঠিক বিচারের প্রমাণ হিসেবে দেখতে চান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইবুনালের বিচারক মুজিবুর রহমানের আদালতে রায় ঘোষণার পর এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আইনমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বকে প্রমাণ করতে পেরেছি যে, বাংলাদেশ এ রকম হত্যাকাণ্ড হলে তার বিচার অত্যন্ত দ্রুত হয় ও সঠিক বিচার আইনি সকল সব প্রক্রিয়া ফলো করে বিচার সম্পন্ন করা হয়।
হলি আর্টিজানের ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে তিনি বলেন, সেখানে ইতালীয়, জাপানি ও বাংলাদেশি নাগরিকসহ পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তারা ছিলেন। ঘটনা ঠেকাতে চেষ্টা করতে গিয়ে নিজেরা প্রাণ দিয়েছেন।
ঢাকার কূটনীতিকপাড়া গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলায় ২২ জনকে হত্যার দায়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যের ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত। মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত ২১ আসামির মধ্যে ৫ জন ঘটনার দিন অভিযানে নিহত হন। আরো ৮ জন পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হন। সন্ত্রাস দমন আইনে বাকি আট আসামির মধ্যে সাত জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে; একজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
আনিসুল বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলতে চাই এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আরো বলতে চাই, এরকম চাঞ্চল্যকর যেসব মামলা দেশের শেকড়ে গিয়ে ধাক্কা দেয়, সেসব মামলা দ্রুত শেষ করতে পারছি- সেটাও মনে হয় সন্তুষ্টির কারণ।
যখনই দুর্ঘটনা ঘটেছিল জননেত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, এসব অপরাধীদের দ্রুত বিচার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আজ সেই কথারই সত্যতা প্রমাণ হয়েছে। গত ডিসেম্বর থেকে মামলার বিচার কাজ শুরু হয়েছিল। আমরা বিচার কার্যক্রম ও রায়ে সন্তুষ্ট।
এর ফলে বিচার বিভাগ নিয়ে বিশ্বের সামনে দেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার হবে কিনা জানতে চাইল আইনমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয়, আমরা সারা বিশ্বকে প্রমাণ করতে পেরেছি যে বাংলাদেশ এ রকম হত্যাকাণ্ড হলে তার বিচার অত্যন্ত দ্রুত হয় এবং সঠিক বিচার আইনি সকল সব প্রক্রিয়া ফলো করে বিচার সম্পন্ন করা হয়।
বিচারে এক আসামির খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো এখন জাজমেন্ট পড়িনি। কেন খালাস পেল জাজমেন্ট দেখে নেই তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আইনমন্ত্রী জানান, মৃত্যুদণ্ডের রায় ডেথ রেফারেন্স হিসেবে সাত দিনের দিনের মধ্য উচ্চ আদালতে চলে যাবে। সেখানে গেলে পেপারবুক তৈরি হবে। এটার বিচার সেখানেও যাতে দ্রুত শেষ হয়ৃ আমি এর আগেরবার নুসরাত হত্যা মামলায় রায়ে যে কথা বলেছি, দ্রুত পেপারবুক তৈরি করে হাই কোর্টের তালিকায় আনা যায় সেই ব্যবস্থা করা হবে।
দ্রুত বিচারের দাবির সপক্ষে ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার বিচার পাওয়ার জন্য ৩৪ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। আজ এসব ন্যক্বারজনক হত্যাকাণ্ডের বিচার যত দ্রুত সম্ভব ‘আইনি ফর্মালিটি’ শেষ করে মামলা শেষ করা হয়েছে।
তবে সাত বছর আগে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার-মেহেরুন রুনি হত্যা ও তিন বছর আগে কুমিলার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় তদন্তে কোনো অগ্রগতি না হওয়ার বিষয়টি তিনি নিজেই সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, এগুলো তদন্তাধীন আছে। তদন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত শেষ না হবে, তদন্তকারী সংস্থা যতক্ষন পর্যন্ত সন্তুষ্ট না হবেন ততক্ষন পর্যন্ত অভিযোগপত্র বা ফাইনাল রিপোর্ট কোনটাই দেওয়া উচিত নয়। আমাদের তদন্ত কর্মকর্তাদের এ সময় দেওয়া উচিত।
গতকালের একটা উদাহরণ দিয়ে বলছি, আমেরিকায় একটা মামলায় ৩৬ বছর জেল খাটার পর আসামিরা নির্দোশ প্রমাণিত হয়েছে- এরকম ঘটনা যেন না ঘটে সেটাও আমাদের দেখার দরকার।
নুসরাতের মামলার পেপার বুক আগামী জানুয়ারি ৩১ তারিখে এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হত্যামামলার পেপারবুক আগামী ৩১ ডিসেম্বরে মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে। আগামী বছর এ দুই মামলার হাইকোর্টের শুনানি শেষ করা হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন আইনমন্ত্রী।