বিমান-বেবিচকে দুর্নীতির উৎস ‘চিহ্নিত’ : দুদক
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির উৎস ‘চিহ্নিত’ করে তা বন্ধে কিছু সুপারিশ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরীর স্বাক্ষরে দুটি প্রতিবেদনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও বেসামরিক বিমান পরিবহন সচিবকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। গতকাল রবিবার দুদক কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক খান সচিবালয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর কাছে প্রতিবেদন দুটি হস্তান্তর করেন।
দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিমানে অনিয়ম ও দুর্নীতির ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে- উড়োজাহাজ কেনা ও ইজারা নেওয়া, রক্ষণাবেক্ষণ ও ওভারহোলিং, গ্রাউন্ড সার্ভিসিং, কার্গো আমদানি-রপ্তানি, যাত্রী পরিবহন ও টিকেট বিক্রি, অতিরিক্ত ব্যাগেজের চার্জ আত্মসাৎ ও বিমান ফুড ক্যাটারিং।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উড়োজাহাজ কেনা, ইজারা নেওয়া ও নানা যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে ‘ব্যাপক দুর্নীতি’ হয়ে থাকে। উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনাকাটায় ‘শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি’ হয়ে থাকে। বিমানের আয়ের বড় খাত কার্গো সার্ভিস হলেও এ খাতে বড় ধরনের দুর্নীতি হয় বলে দুদকের দাবি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কার্গো সার্ভিস খাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে কোটি কোটি টাকা এয়ারওয়ে বিল কম পাচ্ছে। অনেক সময় বিমানের কার্গো সার্ভিসের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী আমদানি-রপ্তানিকারকদের যোগসাজশে ওজনে কম দেখিয়ে, আবার কখনও একক পরিবর্তন করে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন।
বিমানে যাত্রীরা অনেক সময় অতিরিক্ত ব্যাগেজ নিয়ে উঠেন। সেজন্য যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত মাশুল নেওয়া হলেও জমা না দেখিয়ে ‘লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ’ করা হয় বলে দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে।
বিমানের টিকেট শেষ হওয়ার কথা বলা হলেও বিভিন্ন ফ্লাইটে আসন খালি থাকে বলেও দুদক দেখতে পেয়েছে। এজন্য বিমানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়ী করে প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্যান্য এয়ারলাইন্সের যোগসাজশে তাদের টিকিট বিক্রির সুবিধা করে দিতে বিমানের কর্মকর্তারা কমিশন নিয়ে এসব কাজ করে। প্রতিবেদনে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ক্রয় কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে দুদক।
বিমানের কেনা বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জাম তালিকা, কখন কেনা হয়েছে, কী দামে কেনা হয়েছে, কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কেনা হয়েছে, কত টাকা মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে, এসব নথিপত্র পর্যালোচনা করে দুর্নীতির পরিমাণ নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে মনে করে দুদক।
বাংলাদেশ বিমানকে দক্ষ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিশ্বের নামি গ্রাউন্ড হ্যান্ডলারের সঙ্গে ৩-৫ বছর মেয়াদে চুক্তি করার সুপারিশ করেছে দুদক। এছাড়া বিমানের কার্গো ওজন, অতিরিক্ত ব্যাগেজের মাশুল নেওয়ার বিষয়টিতে তদারকি জোরদারের সুপারিশও করা হয়েছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-বেবিচকে ১১টি অনিয়ম ও দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করেছে দুদক। সেগুলো হল- ক্রয় খাত,, নির্মাণ ও উন্নয়নমূলক কাজ, সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, বিমানবন্দরের স্পেস/স্টল ও বিলবোর্ড ভাড়া, কনসালটেন্ট নিয়োগ, কর্মকর্তাদের বিদেশ প্রশিক্ষণ, যাত্রীদের অধিকার বিষয়ে ‘মন্ট্রিল কনভেনশন’ বাস্তবায়ন, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ, পাইলট, ফ্লাইং ইঞ্জিনিয়ার ও উড়োজাহাজের লাইসেন্স দেওয়া, ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি ও শিডিউল অনুমোদন।
এসব খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে বুয়েটের শিক্ষকসহ অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ক্রয় কমিটি গঠন করা, নিমার্ণকাজ মূল্যায়নের জন্য বুয়েটের শিক্ষকসহ বিভিন্ন সংস্থার অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে নিরপেক্ষ মেয়াদী কমিটি গঠন, বেবিচকের সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার জন্য অভিজ্ঞ পরিচালক পদায়নের সুপারিশ করেছে দুদক।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানবন্দর এলাকায় দোকান ও বিলবোর্ডগুলো বরাদ্দের যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখে দোকান ও বিলবোর্ড বরাদ্দ বাতিল করতে হবে, বেবিচকের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়াতে হবে, বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার কাজে ই-টেন্ডার ব্যবস্থা চালু, ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার ও এয়ার লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে দুর্নীতির ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, দক্ষদের যথাযথ জায়গায় পদায়ন করতে হবে।