May 7, 2024
আন্তর্জাতিক

বিধ্বংসী টাইফুনের কবলে জাপান

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

জাপানে আঘাত হেনেছে বিধ্বংসী টাইফুন ‘হাগিবিস’। বলা হচ্ছে- বিগত ৬০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় এটি। এর আঘাতে ইতোমধ্যে একজন নিহতও হয়েছেন। একইসঙ্গে আহত হয়েছেন ৫০ জনের বেশি। এছাড়া প্রায় এক হাজার অন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল হয়ে গেছে দেশটির।

গতকাল শনিবার স্থানীয় সময় রাত ৮টার দিকে আঘাত হানে হাগিবিস। এছাড়াও দিবাগত রাতে পূর্ণ বেগে অর্থাৎ ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার গতিবেগে দেশটির রাজধানী ও স্থানীয় হনশু দ্বীপে আছড়ে পড়তে পারে শক্তিশালী ঝড়টি। বর্তমানেও এর গতি ১৪৪ কিলোমিটারের বেশি।

স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, শনিবার সকালে নিজগাড়িতে করে বাড়ি ফেরার সময় তীব্র বাতাসের কবলে পড়েন ৪৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। গাড়ি উল্টে মারা যান। তবে তার পরিচয় জানা যায়নি এখনও।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ইতোমধ্যে টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বইছে টোকিও ও আশেপাশের শহরগুলোতে। বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অন্তত ৫৮ হাজার ঘরবাড়ি।

দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাসে বলছে, শনিবার রাতের যেকোনো এক সময়ে হনশু ও উপকূলীয় এলাকায় নিজের পুরো গতি সঞ্চার করে আঘাত হানতে পারে হাগিবিস। আর পূর্ণ গতি নিয়ে আঘাত করলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বেন শহরগুলোর প্রায় এক কোটি মানুষ।

বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্তি¡ক জরিপ সংস্থা বলছে, গতিসঞ্চার করে এগোচ্ছে হাগিবিস। এরইমধ্যে ঝড়টিকে ক্যাটাগরি তিন হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। হাগিবিসকে বিধ্বংসী ঝড় হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

জাপান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরইমধ্যে দেশটির কিছু এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়ে গেছে। যেকোনো সময় প্লাবিত এলাকাগুলোতে ভূমিধস হতে পারে। ইতোমধ্যে ইজু উপদ্বীপে ভূমিধস হয়েছে। দ্রুত বন্যা আক্রান্ত শহরগুলো থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তর।

স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্যে মজুদ করা হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। পাশাপাশি বাড়তি নিরাপত্তা হিসেবে স্থানীয়দের ফ্লাড লাইট, বাড়তি ব্যাটারি, রেডিও ও জরুরি ওষুধ সঙ্গে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন দেশটির দুর্যোগ প্রতিরোধ সংস্থা ‘জাপান বোসাই’ এর পরিচালক সিগেও কানাকা। টাইফুনের কবলে পড়ে দেশটিতে চলা আন্তর্জাতিক রাগবি বিশ্বকাপের শনি ও রোববারের সব ম্যাচ বাতিল হয়ে গেছে।

সতর্কতার অংশ হিসেবে ও প্রাণহানি রুখতে আপাতত বুলেট ট্রেন ও প্লেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে দেশটিতে। প্রায় এক হাজার আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পর্যটকরা। তাদের নিজ নিজ হোটেলে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।

দুর্গম ও প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে স্থানীয়দের সরিয়ে আনতে সাহায্য করছেন আইনশৃঙ্খলা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থায় নিয়োজিত কর্মীরা। শিক্ষা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাড়ির বাইরে বের না হওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

এর আগে (০৯ বুধবার) টাইফুন সতর্কতায় নগরবাসীরা সুপার শপগুলো থেকে কিনে নিয়েছেন বাড়তি পণ্য ও দ্রব্যাদি। নতুন করে পণ্যের জোগান না আসায় প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে আসা ক্রেতাদের ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে।

শহরবাসীদের আতঙ্কগ্রস্ত না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ে প্রাণহানি ঠেকাতে সবধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জনগণকে আশ্বস্ত করেছে দেশটির সরকার। উপকূলীয় লোকজনকে নিরাপত্তার স্বার্থে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যাওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত মাসেও টাইফুন হেক্সাইয়ের আঘাতে জাপানের কিছু এলাকার প্রায় ৩০ হাজার ঘরবাড়ি ও স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সেটি তেমন শক্তিশালী ঝড় ছিল না।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *