বিদেশি ঋণের অর্থ ছাড়ে ধীরগতি
দাতাদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়ের বড় লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে অর্থবছর শুরু হলেও প্রথম চার মাসে ছাড়ের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় কমেছে।
জুলাই-অক্টোবর সময়ে বিদেশি ঋণ সহায়তার ১৪৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার ছাড় হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৪৫ কোটি ২৪ লাখ ডলার।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালানাগাদ প্রতিবেদনে তুলে ধরা এ হিসাব অনুযায়ী, এই চার মাসে বিদেশি ঋণের অর্থ ছাড়ের পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে এক কোটি ৮৭ লাখ ডলার কমেছে।
অর্থছাড় কমে আসা ও পরিশোধ বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছর নিট সহায়তা প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ কমেছে।
সুদ আর আসল বাদ দিয়ে বছরের প্রথম চার মাসে বিদেশি ঋণের নীট অর্থছাড় হয়েছে ৮০ কোটি ২৫ লাখ ডলার, যা আগের বছর ছিল ৯২ কোটি ৮২ লাখ ডলার।
এই চার মাসে দাতাদের পাওনা পরিশোধ করতে হয়েছে ৬৩ কোটি ১২ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময় ছিল ৫২ কোটি ৪২ লাখ ডলার।
ইআরডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বৈদেশিক সহায়তার নতুন প্রতিশ্রুতিও ৩৯ শতাংশ কমেছে।
এবিষয়ে ইআরডির বৈদেশিক সহায়তা বাজেট ও হিসাব (ফাবা) শাখার অতিরিক্ত সচিব ড. পিয়ার মোহাম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নের কিছু প্রকৃতি থাকে। যেমন বড় একটা ইউনিটের কাজ চলছে। ওই ইউনিট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থ ছাড় হয় না।
গত অর্থবছরে বৈদিশক সহায়তার মোট অর্থ ছাড় হয়েছিল ৬২১ কোটি ৭ লাখ ডলার। তার সঙ্গে ২২৬ কোটি ৬২ লাখ ডলার বাড়িয়ে চলতি অর্থবছরের জন্য ৮৪৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ইআরডি।
এডিপি বাস্তবায়নের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বৈদেশিক ঋণের মধ্যে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৭ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের মাত্র ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
আগের অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ৮ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা বা প্রায় ১৪ শতাংশ।
এবিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডি শাখার সচিব আবুল মন্সুর মো. ফয়জুল্লাহ বলেন, “বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দাতাদের কিছু শর্ত মেনে বাস্তায়ন করতে হয়। তাই শর্তের জালে অনেক সময় অর্থছাড় কিছু দিনের জন্য আটকে যায়।
“আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কাজ হয়ে গেছে কিন্তু অর্থছাড় হয়নি। তবে সময়ের সাথে দাতাদের অর্থছাড়ও বেড়ে যাবে।”
ইআরডি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই চার মাসে বিদেশি ঋণ পরিশোধে ৬৩ কোটি ১২ লাখ ডলার ব্যয় হয়েছে, যার মধ্যে আসল ৪৬ কোটি ৩২ লাখ ডলার ও সুদ ১৬ কোটি ৭৯ লাখ ডলার।
গত অর্থবছরের একই সময়ে ৩৯ কোটি ২৩ লাখ ডলার আসল ও ১৩ কোটি ১৯ লাখ ডলার সুদ মিলে বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাবদ ব্যয় ছিল ৫২ কোটি ৪২ লাখ ডলার।
বিদেশি ঋণ সহায়তার নতুন প্রতিশ্রুতির পরিমাণও গতবারের একই সময়ের চেয়ে কমেছে। অক্টোবর পর্যন্ত ঋণ ও অনুদান মিলে মোট ২২২ কোটি ২৭ লাখ ডলারের নতুন চুক্তি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩৬১ কোটি ডলার।