April 18, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

বিএনপি-আ.লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ফের উত্তপ্ত রাজনীতি

দেশের বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে ফের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারও শুরু হয়েছে রাজপথ দখলের লড়াই। এ বিরোধী দলকে এককভাবে রাজপথে কোনো শোডাউনের সুযোগ দিতে নারাজ সরকারি দল। বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচিতে একই দিন পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি।

আজ বুধবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ১০ বিভাগীয় শহরে বিএনপি ও সমমনা দল এবং জোটের গণ-অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে ফের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিরোধী দলগুলো। অন্যদিকে, বিরোধী জোটের এই কর্মসূচির দিন সতর্ক পাহারায় থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সম্ভাব্য সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ঠেকাতে প্রতি ওয়ার্ড ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে থাকবেন দলটির নেতাকর্মীরা।

ইতোমধ্যেই বিএনপির গণ-অবস্থানের জন্য শর্ত সাপেক্ষ অবস্থানের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা নয়াপল্টনে শর্ত সাপেক্ষ অবস্থানের অনুমতি দেয়। রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ না করে বিএনপিকে শান্তিপূর্ণভাবে গণ-অবস্থান কর্মসূচি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।

এদিকে, গত ১০ ডিসেম্বরের মতো মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ১০ ডিসেম্বর তো গেল, আওয়ামী লীগ কি মোকাবিলা করেনি? আমরা যে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র, যে কোনো ধরনের আন্দোলনের নামে সহিংসতার সমুচিত জবাব দিতে প্রস্তুত। বিএনপির গণ-অবস্থান কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগ সারাদেশে সতর্ক থাকবে। বিএনপির গণ-অবস্থান কর্মসূচির কারণে আক্রান্ত হলে ললিপপ খাবে না আওয়ামী লীগ। মার খেয়ে বসে থাকবে না কেউ। সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।

রাজধানীতে বিএনপির গণ-অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জনদুর্ভোগ ও নৈরাজ্য বরদাশত করা হবে না এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, তবে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা নেই।

জানা গেছে, আন্দোলনের ধারাবাহিক কর্মসূচি হিসেবে আজ বহুল আলোচিত ওয়ান ইলেভেনের দিনে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। আজকের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি থাকবেন মির্জা ফখরুল। ইতোমধ্যেই এই গণঅবস্থান কর্মসূচি সফল করার জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির সমাবেশগুলোতে মানুষের ঢল দেখে জনরোষের ভয়ে আতঙ্কিত সরকার। এ কারণে গণ-অবস্থানের দিনে তারা পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে গদি রক্ষার চেষ্টা করছে। কিন্তু লাভ হবে না। জনতার ঢেউয়ে এসব বাধা উড়ে যাবে। শুধু সময়ের ব্যাপার।

সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে থাকবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটি সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মির্জা আব্বাস। সিলেটে থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, রাজশাহীতে ড. আবদুল মঈন খান, ময়মনসিংহে থাকবেন নজরুল ইসলাম খান, চট্টগ্রামে থাকবেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বরিশালে থাকবেন সেলিমা রহমান, রংপুরে থাকবেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কুমিল্লায় থাকবেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, খুলনায় থাকবেন শামসুজ্জামান দুদু ও ফরিদপুরে থাকবেন অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান।

এদিকে, বিএনপির প্রস্তুতি বিষয়ে জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি গণ-অবস্থানে বড় শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। বিএনপি ছাড়াও এদিন মাঠে থাকবে আরও ৩৩টি রাজনৈতিক দল। পাশাপাশি আরো ১৫টি সংগঠনও থাকবে। এদিকে গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে না জামায়াতে ইসলামি।

জামায়াতের নেতারা জানান, যেখানে মিছিল করলেই বাধা দেওয়া হয়, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়, সেখানে চার ঘণ্টার গণঅবস্থান কর্মসূচি করা দলের নেতাকর্মীদের জন্য বেশি ঝুঁকি হয়ে যায়। তাই তারা ‘কৌশলগত’ কারণে গণঅবস্থান কর্মসূচি করবে না। ওয়ান-ইলেভেনের এই দিনকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করবে।

জানা গেছে, সাতদলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিয়েছে। বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে গণ-অবস্থান পালন করবে ১২ দলীয় জোট। পুরানা পল্টন মোড়ে গণ-অবস্থান পালনের কথা জানিয়েছেন ১২ দলের জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। আরামবাগে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে এই কর্মসূচি পালন করবে মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম।

এদিকে, রাজনৈতিকভাবে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। পৃথক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবেন আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মত্স্যজীবী লীগসহ আওয়ামী লীগের সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উদ্যোগে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত শাহবাগ চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে আজ দুটি সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে মহানগর যুবলীগ। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের উদ্যোগে বেলা ১১টায় ফার্মগেটে এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের উদ্যোগে দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়াও রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিট ও থানার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সতর্ক পাহারা দেওয়ার পাশাপাশি দুটি স্থানে সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ও মিরপুর সনি সিনেমা হলের পেছনে ঈদগাহ মাঠে আয়োজিত সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তৃতা করবেন।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, বিএনপি নির্বাচন ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়। রাজনৈতিক প্রোগ্রামের নামে তারা নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা করে। কাজেই বিএনপির গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে নগর আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সতর্ক ও সজাগ অবস্থায় থাকবেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, বিএনপির গণ-অবস্থান কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি ওয়ার্ডে নেতাকর্মীদের সতর্ক ও সজাগ থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি বলেছেন, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নয়, শান্তিপূর্ণভাবে নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। কোনো রাজনৈতিক দল যাতে আন্দোলন-সংগ্রামের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *