বিআরটিএ-পুলিশের ভূমিকা নিয়ে হাই কোর্টের প্রশ্ন
সড়কে অনিবন্ধিত ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন অবাধে চলাচল করায় বিআরটিএ ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সড়ক পরিবহনকে শৃঙ্খলায় আনার তাগাদা দিয়েছে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ।
বেঞ্চের একজন বিচারক বলেছেন, “পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে আনফিট-অনিবন্ধিত যানবাহন কীভাবে চলে? এভাবে চলতে পারে না। আমাদের একটা সিস্টেমের মধ্যে আসতে হবে। এভাবে চলে বলেই হয়তো মানুষ মারা যাচ্ছে।”
অনিবন্ধিত ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন এবং লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিষয়ে আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদনের শুনানিতে সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চ থেকে এমন পর্যবেক্ষণ আসে।
গাড়ির নিবন্ধন অছে, কিন্তু ফিটনেস নেই- এমন গাড়ির মালিকদের নাম-ঠিকানাসহ একটি তালিকা বিআরটিএকে জমা দিতে বলেছে আদালত। সেই সঙ্গে লাইসেন্স আছে কিন্তু নবায়ন করেনি- এমন চালকের তালিকাও দিতে বলা হয়েছে।
এসব গাড়ি ও চালকের বিরুদ্ধে বিআরটিএ আইন অনুযায়ী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন চেয়ে আদালত বিষয়টি আগামী ২৩ জুলাই পরবর্তী আদেশের জন্য রেখেছে।
বিআরটিএ এর সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক মাহবুব-ই-রাব্বানী এদিন আদালতের তলবে হাজির হন। তার ব্যাখ্যা শোনার পর আদালত আদেশ দেয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিনউদ্দিন মানিক। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না।
বিআরটিএ এর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মঈন ফিরোজী ও রাফিউল ইসলাম। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মামুন মাহবুব।
বিআরটিএ পরিচালক মাহবুব-ই-রাব্বানীর পক্ষে আইনজীবী মঈন ফিরোজী এদিন শুনানিতে একটি প্রতিবেদন তুলে ধরেন।
সেখানে বলা হয়, নিবন্ধন আছে কিন্তু ফিটনেস নেই- এমন যানবাহনের সংখ্যা সারাদেশে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৩৬৯টি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরিতেই আছে এক লাখ ৬৮ হাজার ৩০৮টি।
শুনানির এক পর্যায়ে সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর তাগিদ দিয়ে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার বিআরটিএ’র প্রতিনিধিকে বলেন, “শুধু বসে বসে বেতন নেবেন, দায়িত্ব নেই বলবেন- তা তো হয় না।
“বিআরটিএ কী করে? বিআরটিএকে আজ কোর্ট আসতে হল কেন? কোর্টকে কেন আদেশ দিতে হবে? দেশকে ভালবাসতে হবে। প্লিজ দেশের জন্য কিছু করুন।”
বিআরটিএ এর আইনজীবী মঈন ফিরোজী পরে সাংবাদিকদের বলেন, যেসব গাড়ির ফিটনেস নবায়ন করা হয়নি এবং যেসব চালকের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি- সে সংক্রান্ত তথ্য তারা এদিন আদালতে দিয়েছেন।
“আদালত জেলাভিত্তিক এই পরিসংখ্যানটা আগামী ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে দিতে বলেছে। বিআরটিএ কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়েও জানাতে হবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে এ আইনজীবী বলেন, “আমরা কোর্টকে বলেছি, বিচ্ছিন্নভাবে না করে একটা কালেক্টিভ এফোর্ট যদি থাকে তাহলে সঠিক তথ্য আদালতের কাছে আসবে। যেহেতু বিষয়টি একটি এজেন্সির কাজ না, অনেকগুলো এজেন্সির সমন্বিত বিষয়, তাই যার যার অবস্থান থেকে আমরা তথ্য দেব। কোর্ট তার অবস্থান থেকে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় আদেশ দেবে।”
মঈন ফিরোজী বলেন, বিআরটিএ-এর দায়িত্ব যা আছে- তা অবশ্যই পালন করতে হবে। এখানে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
“আদালত যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে কোনো একটা নির্দেশনা দিতে চান তবে সে বিষয়ে আমরা অবশ্যই সচেতন থাকব।”
‘নো ফিটনেস ডকস, ইয়েট রানিং’ শিরোনামে ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন নজরে আসার পর গত ২৭ মার্চ হাই কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেয়।
ঢাকাসহ সারাদেশে ফিটনেস-নিবন্ধনহীন যানবাহন ও লাইসেন্সহীন চালকের প্রতিবেদন চেয়ে বিআরটিএ’র সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক মাহবুব-ই-রাব্বানীকে ২৪ জুন আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
সেই সঙ্গে ফিটনেস, নিবন্ধনহীন যান চলাচল ও লাইসেন্স ছাড়া যান চলাচল বন্ধে বিবাদীদের নিস্ক্রীয়তা ও ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জীবন ও ব্যক্তির বাঁচার অধিকার রক্ষায় মোটরযান অধ্যাদেমের বিধান বাস্তবায়নের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে আদালত।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ প্রধান, বিআরটিএ চেয়ারম্যান, ঢাকা ট্রাফিক পুলিশের (উত্তর ও দক্ষিণ) ডিসি, বিআরটিএ সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।