November 28, 2024
খেলাধুলা

বাংলাদেশ-ভারত লড়াইয়ের আগে বন্ধুত্বের আবহ

 

ক্রীড়া ডেস্ক

টিম হোটেলে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে দেখেই এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরেছেন রিশাভ পান্ত। মাশরাফি তো অবাক, তরুণ এই ভারতীয় ক্রিকেটারের সঙ্গে আগে পরিচয়ও ছিল না তার! পরিচয়-সম্পর্ক আছে যাদের সঙ্গে, তারা তো আরও বেশি আন্তরিক। মহেন্দ্র সিং ধোনি থেকে শুরু করে বিরাট কোহলি, হার্দিক পান্ডিয়া কিংবা মোহাম্মদ শামি, সবাই বাংলাদেশ দলের উচ্ছ¡সিত প্রশংসা করেছেন অধিনায়কের সঙ্গে দেখায়। মাঠে দুই দল প্রবল প্রতিপক্ষ, সামনেই মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। তবে তার আগে বাতাসে স¤প্রীতির সুর।

সা¤প্রতিক বছরগুলোয় বিভিন্ন টুর্নামেন্টে ভারতকে দেখা গেছে আলাদা হোটেলে থাকতে। ২০১৮ এশিয়া কাপে অন্য সব দল এক হোটেলে থাকলেও ভারতীয় দল ছিল ভিন্ন হোটেলে। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি সেমি-ফাইনালের আগে এই বার্মিংহামেই ভারত ছিল অন্য হোটেলে। তবে এবার বাংলাদেশের টিম হোটেলেই ঠাঁই হয়েছে ভারতের।

শুক্রবার যখন বার্মিংহামে টিম হোটেলে পা রেখেছে ভারতীয় দল, ছুটি কাটিয়ে সেই সময়ই হোটেলে ফিরেছেন মাশরাফি। বাংলাদেশ অধিনায়কের সঙ্গে দেখা হয়েছে ভারতীয়দের, কথা হয়েছে বেশ। একই হোটেলে থাকায় টুকটাক দেখা অনেকের সঙ্গেই হচ্ছে নিয়মিতই। কথা হচ্ছে আন্তরিকভাবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের যে স্লোগান ধরা হয় নিয়মিত, ক্রিকেটেও যেন আপাতত সেই সম্পর্কেরই জয়গান। মাঠের লড়াইয়ের ঝাঁঝের আগে পাওয়া যাচ্ছে উষ্ণতার পরশ।

ধোনির সঙ্গে মাশরাফির পরিচয় অনেক দিনের। ২০০৪ সালে ধোনির আন্তর্জাতিক অভিষেক বাংলোদেশেই, প্রথম যে বোলারের বলে আউট হয়েছেন, তিনি মাশরাফিই। দীর্ঘ পথচলায় এরপর দেখা হয়েছে অসংখ্যবার। বাংলাদেশ অধিনায়ক জানালেন, এবারের দেখায় ব্যক্তিগত কথা, খোঁজ-খবর নেওয়াই ছিল বেশি। পাশাপাশি ধোনি অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের জন্য।

২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমি-ফাইনালে মাশরাফিকে স্লেজিং করেছিলেন কোহলি। মাশরাফিও জবাব দিয়েছিলেন পাল্টা স্লেজিংয়ে। কঠিন পাল্টা জবাবে কোহলি চমকে গিয়েছিলেন বেশ, ম্যাচ শেষে মাশরাফিকে বলেছিলেনও সেটি। সেদিন থেকে ভারত অধিনায়কের সঙ্গে দারুণ খাতির বাংলাদেশ অধিনায়কের। এবারও টিম হোটেলে নানা কথার ফাঁকে পিঠ চাপড়ে দিয়ে কোহলি বলেছেন, “দারুণ খেলছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের অগ্রগতির খবর এমনিতে ভারতের ভালোই জানার কথা। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে ওয়ানডে সিরিজ হেরে এসেছে তারা, ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশকে পেয়েছে সেমি-ফাইনালের প্রতিপক্ষ হিসেবে, ২০১৬ টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপ ও ২০১৮ এশিয়া কাপে দেখা হয়েছে ফাইনালে। তবে ইংল্যান্ডে এসে লম্বা টুর্নামেন্টে অনেক চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে বাংলাদেশ এখনও ধরে রেখেছে সেমি-ফাইনাল সম্ভাবনা, এটিই আদায় করে নিয়েছে অন্যতম ফেভারিট ভারতের বাহবা।

তবে এসব কথায় ভালো লাগা যতটা কাজ করছে, মাশরাফির আক্ষেপ জেগে উঠছে তত বেশি। শুধু ভারতীয় দলই নয়, বর্তমান-সাবেক আরও অনেক ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার-বিশ্লেষক, যার সঙ্গেই দেখা হচ্ছে, বাংলাদেশ নিয়ে মুগ্ধতার কথাই শুনছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তাতে পুরোনো আফসোস আবার বাড়ছে।

সবার কথা শুনে ভালো লাগছে। তবে তৃপ্ত হতে পারি না। অন্যরা হয়তো অবাক হচ্ছে, প্রশংসা করছে। কিন্তু আমরা তো জানি, আরেকটু ভালো অবস্থানে আমরা থাকতে পারতাম! নিউ জিল্যান্ডকে হারানোর সুযোগ পেয়েও হারাতে পারিনি। অস্ট্রেলিয়াকে আরেকটু কম রানে আটকাতে পারলে কিংবা একটু এদিক-সেদিক অন্যভাবে করতে পারলে হয়তো হারাতে পারতাম।

আমরা ভালো খেলছি, সবাই এজন্য প্রশংসা করছে। কিন্তু ফল যদি আরেকটু ভালো হতো, তাহলে ভালো খেলাটা আরও মূল্যবান হতো। ওই দুই ম্যাচের অন্তত একটি জিতলেও এখন ৯ পয়েন্ট থাকত আমাদের, সবকিছু নিজেদের হাতে থাকত।

পয়েন্ট ৯ করার আশাতেই মঙ্গলবার বার্মিংহামে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। গত কয়েক বছরে এই দুই দল মুখোমুখি হওয়া মানেই ছিল যেন বাড়তি উত্তেজনার রসদ। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুই দেশের সমর্থকদের কাঁদা ছোড়াছুড়ি অনেক সময়ই কদর্য রূপ নিয়েছে।

এবার লড়াইয়ের আগে দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে স¤প্রীতির সুর। সমর্থকদের আবেগের স্রোতে বাঁধ দেওয়া কঠিন। তার পরও বাংলাদেশ অধিনায়ককের চাওয়া, বাড়াবাড়ি যেন না হয়।

সমর্থকদের উত্তেজনা থাকবেই। কিন্তু সেটা যদি সীমা ছাড়িয়ে যায়, খুব বাজে ব্যক্তিগত আক্রমণ বা ওই পর্যায়ে যায়, তাহলে সেটি কখনোই কাম্য নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গালাগাল বা খুব বাজে ট্রল, ক্রিকেটাররা যতোই দূরে থাকতে চান বা পাত্তা না দিতে চান, চোখের সামনে চলে আসেই। স্পর্শ করেই। ক্রিকেটাররাও তো মানুষ। তখন এসব ব্যাপার দুই দলের ক্রিকেটারদের সম্পর্কে যেমন প্রভাব ফেলে, নিজ দেশ সম্পর্কে খুব ভালো বার্তাও দেওয়া হয় না।

মাঠে যখন আমরা খেলতে নামব, দুই দলই চাইব জিততে। সমর্থকেরও অবশ্যই প্রাণখুলে সমর্থন দেবেন। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে নোংরামি করলে আমাদের দেশকেও ছোট করা হয়, এটা মনে রাখা উচিত।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *