May 8, 2024
জাতীয়

বাংলাদেশ-তুরস্ক বহুমাত্রিক সম্পর্ক উপভোগ করছে: মোমেন

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ ও তুরস্ক বর্তমানে বহুমুখী এবং বহুমাত্রিক সম্পর্ক উপভোগ করছে, যা আমাদের ঐতিহাসিক সংযোগ, সাংস্কৃতিক নৈকট্য এবং ধর্মীয় একাত্মতার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) আধুনিক তুরস্কের জনক মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের ৮২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে এ কথা বলেন তিনি।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে।  ওয়েবিনারের বিষয় ছিল— ধর্মনিরপেক্ষ জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা: মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

সংগঠনের সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তফা ওসমান তুরান, তুরস্কে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত রইস হাসান সারোয়ার, তুরস্কের খ্যাতিমান লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ফেরহাত আতিক, বাংলাদেশের বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ও গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ, নির্মূল কমিটির তুরস্ক শাখা ‘টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফোরাম ফর হিউম্যানিজম’-এর সাধারণ সম্পাদক লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি এবং নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল।

সংসদ অধিবেশনে জরুরি ভিত্তিতে অংশ নেওয়ার কারণে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর রেকর্ডকৃত ভাষণ ওয়েবিনারে প্রদর্শিত হয়। মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের ৮২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আন্তর্জাতিক আয়োজনের জন্য নির্মূল কমিটির উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি এটা জেনে আনন্দিত যে, তুরস্কের মহান নেতা মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের মৃত্যুবার্ষিকী আমাদের দেশে পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ এবং তুরস্ক বর্তমানে বহুমুখী এবং বহুমাত্রিক সম্পর্ক উপভোগ করছে, যা আমাদের ঐতিহাসিক সংযোগ, সাংস্কৃতিক নৈকট্য এবং ধর্মীয় একাত্মতার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান নেতা মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের মূল্যবোধ ও তার সাহসী পদক্ষেপগুলো দ্বারা অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। কামাল আতাতুর্কের বীরত্ব যথাযথভাবে ধরা পড়েছে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী সৃষ্টি ‘কামাল পাশা’ কবিতায়। দুই মহান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার স্মারক হিসেবে বাংলাদেশ ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুটি সড়কের নামকরণ করেছে কামাল আতাতুর্কের নামে, যথাযথভাবে তা প্রতিফলিত হয়েছে তুরস্কের আঙ্কারা এবং ইজমিরের দুটি সড়ক বঙ্গবন্ধুর নামে করায়। তুরস্ক প্রজাতন্ত্র এবং মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে তুরস্কের জনগণের গৌরবময় সংগ্রামে, বাংলার মানুষ তুরস্কের সাথে মননে ও মানসিকভাবে জোটবদ্ধ হয়েছিল এবং এ দুই দেশ সৌহার্দ্য, সহমর্মিতা এবং ঐতিহাসিক সম্পর্কের সুদৃঢ় ভিত্তি অটুট রেখে পরস্পরকে সকল দিক থেকে সহযোগিতা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের সম্পর্ক এমন একটি স্তরে উন্নীত এবং পরিপক্ব হয়েছে, যা রোহিঙ্গা সংকট ইস্যুতে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করার আগে কখনও দেখা যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে আমরা এই সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তফা ওসমান তুরান বলেন, মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক তার কাজের মাধ্যমে আজও আমাদের মাঝে এবং সারা বিশ্বে বেঁচে আছেন। তুরস্কসহ সকল দেশের তরুণদের অনুপ্রেরণার উৎস মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক। কাজী নজরুল ইসলাম একমাত্র বিদেশি কবি যিনি কামাল আতাতুর্কের বীরত্ব গাঁথা নিয়ে কবিতা রচনা করেছেন ১৯২১ সালে যখন কোন তুর্কি কবিও তাকে নিয়ে কবিতা লেখেননি। বাংলাদেশের কবি, সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী অনেকে সেই সময় কামাল আতাতুর্কের বীরত্বগাঁথা নিয়ে লিখেছেন কিংবা এঁকেছেন। কামাল আতাতুর্কের মৃত্যুর এক বছর পর বাংলাদেশের ফেনীতে তার নামে স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা এখনও রয়েছে। এসবের মাধ্যমে বাংলাদেশে মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক চির অমর হয়ে থাকবেন।

তুরস্কে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত রইস হাসান সারোয়ার বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং কামাল আতাতুর্কের স্বপ্ন ছিল ধর্মনিরপেক্ষ এক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলা। উন্নয়ন ও সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে তুরস্ক ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।

সভাপতির ভাষণে শাহরিয়ার কবির বলেন, আমরা এমন এক সময়ে তুরস্কের জাতির পিতা মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের ৮২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁকে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের আয়োজন করেছি, যখন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বহু অনুষ্ঠান আয়োজিত হচ্ছে। সমগ্র মুসলিম বিশ্বে মুস্তফা কামাল আতাতুর্কই প্রথম একটি আধুনিক, প্রগতিশীল ও মর্যাদাবান রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে ১৯২৩ সালে তুরস্কে ধর্মনিরপেক্ষ জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তার নেতৃত্বে তুরস্কের স্বাধীনতার যুদ্ধ সেই সময় উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত ভারতবর্ষসহ বহু জাতিকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। কামাল আতাতুর্কের ধর্মনিরপেক্ষ উদারনৈতিক জাতীয়তাবাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন মুসলমান প্রধান বহু দেশের নেতৃবৃন্দ; যাদের ভেতর তিউনিসিয়ার হাবিব বরগুইবা, আলজেরিয়ার আহমেদ বেনবেল্লা, মিশরের গামাল আবদুল নাসের ও বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাদের ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদ চেতনার নিরন্তর অনুশীলন বর্তমান যুদ্ধ-সন্ত্রাস-হিংসায় উন্মত্ত বিশ্বে শান্তি ও সৌহার্দ্যের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য অত্যন্ত জরুরি।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *