April 16, 2024
খেলাধুলালেটেস্ট

ফুটবল কিংবদন্তি পেলের জানা-অজানা কিছু তথ্য

এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো। অনেকেই হয়তো এই নামটার সঙ্গে অপরিচিত। তিনি আর কেউ নন। ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি ‘পেলে’। চরম দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে ফুটবল জগতে আলো ছড়ানো পেলে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছিলেন নিজ গুণেই। সেলেসাও জার্সিতে তিন বার বিশ্বকাপ জিতেছেন ফুটবল সম্রাট।

বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে পেলের অর্জনগুলো ফুটবল বিশ্বে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তবে এই কিংবদন্তির সম্পর্কে এমন কিছু গল্প আছে, যা অনেকেরই অজানা। জেনে নেওয়া যাক, এমন কয়েকটি ঘটনা।

৫০ বছর বয়সে ব্রাজিলের অধিনায়ক

ক্লাব ও দেশের জার্সিতে পেলেকে যখনই অধিনায়কত্ব গ্রহণ করার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, প্রতিবারই সেটা প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। তবে এই ঘটনার ব্যতিক্রম ঘটেছিল ১৯৯০ সালে। জাতীয় ফুটবল থেকে অবসর নেয়ার ১৯ বছর পরে সেই বছর ব্রাজিলের সঙ্গে বাকি বিশ্বের একটি প্রীতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল মিলানে।

সেই ম্যাচে অংশ নিয়েছিলেন পেলে। মূলত ফুটবল কিংবদন্তির ৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সেই ম্যাচের আয়োজন করা হয়। ম্যাচটিতে প্রথমার্ধের ৪৫ মিনিট মাঠে ছিলেন পেলে। তবে সেই ম্যাচে ব্রাজিল ২-১ গোলে হেরে যায়।

মাঠ থেকে ‘বহিষ্কার’

এই ঘটনাটি ঘটে ১৯৬৮ সালের ১৮ জুন। কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোতায় এক প্রীতি ম্যাচে কলম্বিয়ান অলিম্পিক স্কোয়াডের মুখোমুখি হয়েছিল পেলের ক্লাব সান্তোস এফসি। সেই ম্যাচে কলম্বিয়ার একজন ডিফেন্ডারকে ফাউল করা ও প্রতিপক্ষ সেই ফুটবলারকে অপমান করার জেরে পেলেকে মাঠ থেকে চলে যেতে বলা হয়। ফুটবল মাঠে তখনো লাল কার্ডের প্রচলন হয়নি, যেটা পরবর্তীতে শুরু হয় ১৯৭০ সালে।

ফুটবল সম্রাটকে ‘অপহরণ’

বড় ধরনের অশান্তি চলমান অবস্থায় ১৯৭২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগোতে খেলতে যান সান্তোস এফসি ক্লাবের ফুটবলাররা। সেদিনের খেলায় ৪৩তম মিনিটে গোল করে বসেন পেলে। এরপরই বাধে বিপত্তি।

খেলা শেষ হওয়া মাত্রই পোর্ট অব স্পেন স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে থাকা সমর্থকরা মাঠের ভেতরে চলে আসে ও পেলেকে কাঁধে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। সেখান থেকে পেলেকে উদ্ধার করে আনতে বেশ কিছু সময় লেগেছিল।

ইউরোপীয় কোনো ক্লাবে কেন খেলেননি পেলে

ব্রাজিলের অন্যান্য ফুটবলাররা বিদেশি ক্লাবে খেললেও পেলের ক্যারিয়ারে তাকে বাইরে খেলতে যেতে বাধা দেওয়া হয়। পেলেকে দলে ভেড়ানোর জন্য সান্তোস এফসিকে প্রস্তাব দিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ থেকে শুরু করে এসি মিলানের মতো বড় ক্লাবও। সেই সময় ফুটবলাররা কোন ক্লাবে খেলবেন সেই বিষয়ে তাদের কথা বলার সুযোগ ছিল নিতান্তই কম।

এমনকি পেলেকে ব্রাজিলে রেখে দেয়ার জন্য সেই সময় চাপ দেয়া হত সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও। ১৯৬১ সালে ব্রাজিলের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জানিও কোয়াদ্রস পেলেকে ‘জাতীয় সম্পদ’ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তাকে ‘রফতানি করা যাবে না’ বলে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলেন। তবে সেলেসাওদের এই ফুটবলার পরে একটি বিদেশি ক্লাবের হয়ে খেলেছিলেন। তা শুধু ১৯৭৫ সালে। সেই সময় তিনি যোগ দেন আমেরিকার ফুটবল ক্লাব নিউইয়র্ক কসমসে।

পেলে ভালো গোলরক্ষকও

পেলে ছিলেন ক্লাব ও দেশের বিকল্প গোলরক্ষক। আসল গোলরক্ষক আহত হলে তার জায়গায় তিনি নামতেন। পুরো ক্যারিয়ারে সান্তোস এফসি ক্লাবের হয়ে চারবার গোলরক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। ১৯৬৪ সালে ব্রাজিলিয়ান কাপের সেমিফাইনালেও তাকে গোলকিপার হতে দেখা গিয়েছিল।

পেলের সিনেমায় অভিনয়

‘এসকেপ টু ভিক্টরি’ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন পেলে। ১৯৮১ সালে মুক্তি পাওয়া সেই সিনেমায় দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়ের নাৎসি একাদশ ও বন্দীদের মধ্যে একটি কাল্পনিক ফুটবল ম্যাচের গল্প তুলে ধরা হয়েছিল। তার সঙ্গে ছিলেন ববি মুরের মতো আরও কয়েকজন পেশাদার ও সাবেক ফুটবলারও।

সেই খেলায় গোলরক্ষকের ভূমিকায় অভিনয় করেন সিলভেস্টার স্ট্যালোন। সিনেমার একটি দৃশ্যে পেলেকে অ্যাক্রোবেটিক বাইসাইকেল কিক নিতে দেখা যায়। প্রথম শটেই এই ফুটবল কিংবদন্তি কিকটি নিতে সফল হয়েছিলেন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *