May 19, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধে সব জেলায় টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ হাইকোর্টের

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

সড়ক-মহাসড়কে চলাচলের অনুপযোগী, ফিটনেসবিহীন ও অনিবন্ধিত যান চলাচল তদারকি ও বন্ধে দেশের সব জেলায় টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, সড়ক ও সেতু সচিবকে এই নির্দেশ দিয়ে আদালত বলেছে, জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে পুলিশ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিআরটিএর সমন্বয়ে এ টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে।

ফিটনেসবিহীন যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়ে শুনানি করে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল রবিবার এ আদেশ দেয়। আগামী ১ জুন বিবাদিদের এ নির্দেশনার বাস্তবায়ন বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছে আদালত।

এই টাস্কফোর্স চলাচলের অনুপযোগী, ফিটনেসহীন ও অনিবন্ধিত যান দেখে আইন অনুযায়ী সেগুলো আটক, জব্দ ও ডাম্পিং করতে পারবে বলেও জানিয়েছে আদালত। আদালতে বিআরটিএর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মঈন ফিরোজী ও মো. রাফিউল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

আইনজীবী মঈন ফিরোজী পরে সাংবাদিকদের বলেন, সড়কে, বিশেষ করে মহাসড়কগুলোতে চলাচলের অনুপযোগী, ফিটনেসহীন ও অনিবন্ধিত যেসব যান চলছে, সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন করে সড়কের নিরাপত্তা যাতে বাস্তবায়ন করা যায় তার জন্য পুলিশ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং বিআরটিএর সমন্বয়ে প্রতিটি জেলায় টাস্কফোর্স গঠন করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া ফিটনেস নবায়ন না করা পর্যন্ত ফিটনেস ছাড়া গাড়িতে তেল-গ্যাস-পেট্রোলসহ কোনো ধরনের জ্বালানি না দিতে হাই কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তা বহাল থাকবে। অপরাধসমূহ বিচার করার জন্য সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ১১৪, ১১৫ তে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভ্রম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সেই আইন অনুযায়ী পুলিশের যে ক্ষমতা, বিআরটিএর যে ক্ষমতা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, সেগুলো বিচ্ছিন্নভাবে বাস্তবায়ন না করে সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করতেই এই টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকাসহ সারাদেশে ফিটনেস ছাড়া গাড়ির চলাচল বন্ধে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালত ও আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানতে চেয়েছিল হাই কোর্ট। গাড়ির নিবন্ধন ও ফিটনেস সংক্রান্ত বিআরটিএ ও পুলিশ প্রধানের দেওয়া প্রতিবেদন দেখে গত বুধবার বিআরটিএ চেয়ারম্যান ও পুলিশ প্রধানকে রবিবার তা জানাতে বলা হয়েছিল।

পুলিশ প্রধানের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর ২৩ অক্টোবর হাই কোর্টের নির্দেশের পর বিভিন্ন তেলের পাম্প কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, যাতে ফিটনেসবিহীন যানবাহনে তেল দেওয়া না হয়। আদালতের আদেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ অনুযায়ী কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

আর বিআরটিএর প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর ২৩ অক্টোবর হাই কোর্টের আদেশের পর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে নিবন্ধিত চার লাখ গাড়ির মধ্যে থেকে এক লাখ ৬৫ হাজার ৭৬৪ গাড়ির ফিটনেস নবায়ন সনদ ছিল।   আর নতুন নিবন্ধিত ১৯ হাজার তিনটি গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গতবছর ২৩ অক্টোবর আদালত ফিটনেসবিহীন গাড়িতে তেল-গ্যাস-পেট্রোলসহ সব ধরনের জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছিল। তারও আগে গতবছর ২৩ জুলাই নিবন্ধন নিয়ে ফিটনেস নবায়ন করেনি এমন চার লাখ ৭৯ হাজার ৩২০টি গাড়িকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ফিটনেস নবায়ন করতে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।

গত বছর ২৩ মার্চ ‘নো ফিটনেস ডকস, ইয়েট রানিং’ শিরোনামে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আসার পর ২৭ মার্চ আদালত স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ অন্তর্র্বতীকালীন আদেশ দেয়। ঢাকাসহ সারাদেশে ফিটনেস-নিবন্ধনহীন যানবাহন ও লাইসেন্সবিহীন চালকের প্রতিবেদন চেয়ে বিআরটিএর সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক মাহবুব-ই-রাব্বানীকে ২৪ জুন আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলে।

একই সঙ্গে ফিটনেস, নিবন্ধনবিহীন যান চলাচল ও লাইসেন্স ছাড়া যান চলাচল বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রীয়তা ও ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জীবন ও ব্যক্তির বাঁচার অধিকার রক্ষায় মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ -এর বিধান বাস্তবায়নের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ প্রধান, বিআরটিএর চেয়ারম্যান, ঢাকা ট্রাফিক পুলিশের (উত্তর ও দক্ষিণ) ডিসি, বিআরটিএ সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

 

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *