May 2, 2024
জাতীয়

প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভিডিও চ্যাট-প্রতারণা, যুবক কারাগারে

রাজধানীর খিলক্ষেত থানাধীন এলাকার বাসিন্দা এক তরুণীর (১৮) অনলাইনে পরিচয় হয় আবির নামে এক যুবকের সঙ্গে। নিয়মিত যোগাযোগের এক পর্যায়ে তাদের সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে।

এই প্রেমই বিপদ ডেকে আনে ওই তরুণীর জীবনে।

সম্পর্ক থাকাকালে আপত্তিকর ছবি-ভিডিও চ্যাটিংকে পুঁজি করে ওই তরুণীকে প্রতারণা করা শুরু করেন আবির। আবিরের ধারাবাহিক হুমকিতে অসহায় তরুণী ও তার পরিবার কোনো উপায় না দেখে দ্বারস্থ হন পুলিশের।

পুলিশের কাছে মেয়েটি আকুতির— ‘স্যার, আমার ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করার আগে আমাকে ভিডিও ক্লিপ এনে দেন, না হলে আমি আত্মহত্যা করব’। অসহায় মেয়েটির আহ্বানের তাৎক্ষণিক তৎপরতা শুরু হয় পুলিশের। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় টানা কয়েক ঘণ্টার অভিযানে গ্রেফতার হন প্রতারক আবির।

গত বুধবার (৭ অক্টোবর) ওই তরুণী খিলক্ষেত থানায় গিয়ে পুলিশের সহায়তা চান। পরে ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বর এলাকা থেকে আবিরকে গ্রেফতার করা হয়।

ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে অজ্ঞাত আবির নামে একজনের সঙ্গে পরিচয় হয় তরুণীর। তাদের মধ্যে নিয়মিত চ্যাটিং হতো। এক পর্যায়ে তাদের সম্পর্ক প্রেমে গড়ায়। প্রেমের সম্পর্কের এক পর্যায়ে আবিরের সঙ্গে আপত্তিকর ভিডিও চ্যাট করেন ওই তরুণী।

আর আবির বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে গোপনে সেইসব ভিডিও চ্যাট রেকর্ড করে রাখেন। কিছুদিন পর ওই মেয়ের অন্য ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন মিথ্যা দোষ দিয়ে ভিকটিমের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন আবির। এক পর্যায়ে গত এপ্রিল মাস থেকে তাদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

হঠাৎ গত ৩ অক্টোবর ভিকটিমের হোয়াটস অ্যাপে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও পাঠান আবির। টাকা দাবি করেন এবং তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেন, অন্যথায় আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেবেন বলে হুমকি দেন।

খিলক্ষেত থানার পুলিশ কর্মকর্তারা ভিকটিম ও তার মাকে আশ্বস্ত করেন এবং এই বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে অজ্ঞাতনামা আবিরের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা শুরু করেন পুলিশ সদস্যরা।

খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন জানান, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আবিরের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। কিন্তু আবির ঘন ঘন তার অবস্থান পরিবর্তন করছিলেন। টানা কয়েক ঘণ্টার অভিযানে রাত সাড়ে সাতটার দিকে মিরপুর-১ গোলচত্বর থেকে আবিরকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার মেসে গিয়ে তার ব্যবহৃত মোবাইল ও ল্যাপটপ জব্দ করা হয়। সেসব ডিভাইসে ভিকটিমের আপত্তিকর ছবিসহ ভিডিও ক্লিপ এবং আরো অনেক মেয়ের আপত্তিকর ভিডিও জব্দ করা হয়।

আবিরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ওসি জানান, আবির দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অনেক মেয়েকে ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের টাকা আদায় করে আসছিলেন। তার কাছ থেকে অভিযোগকারীর ভিডিও ক্লিপ উদ্ধারের পর স্বস্তি পায় ভুক্তভোগী ওই তরুণী ও তার পরিবার।

ওসি বোরহান উদ্দিন বলেন, গ্রেফতার আবিরকে আদালতে হাজির করলে নিজের দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে আদালতের নির্দেশে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।

তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কারো সঙ্গে পরিচয় কিংবা আলাপকালে সবাইকে আরো বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *